জাতির ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের কথা
১৫ আগস্ট ২০২৩ ১০:২৫
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট অর্থাৎ আজকের এই দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এবং তার সপরিবারকে হত্যা করা হয়। সেদিন থেকে জাতির ইতিহাসে রচিত হতে থাকে অন্য এক কালো অধ্যায়। যার নেতৃত্বে বাঙালি জাতির স্বাধীন হয়েছিল, তাকে হত্যা করেছিল একদল শাসক হায়নার দল।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যখন দেশ একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এই দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সহ পরিবারকে হত্যা করে ফেলে। তার ডাকে সাড়া দিয়েছিল একদিন সমগ্র বাঙালি জাতি। ৩০ লক্ষ বাঙালির রক্তের রঞ্জিতের বাংলাদেশ তিনি হয়ে উঠেছিলেন মুক্তির পথিক হয়েছিলেন মানুষের মনের মধ্যে গাথা। পৃথিবীর খুব কম নেতা তার মত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছে। কিন্তু তাকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট আজকের এই দিনে।
আজ এই দিনটি বাঙালির শোকের দিন। বাংলার আকাশ–বাতাস আর প্রকৃতিও অশ্রুসিক্ত হওয়ার দিন। জাতীয় শোক দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি জাতীয় দিবস। প্রতিবছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবসটি শোকের সাথে পালন করা হয়। এ দিবসে কালো পতাকা উত্তোলন ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত রাখা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ইতিহাসের বেদনাবিধুর ও বিভীষিকাময় একটি দিন।
১৯৭৫ সালের এ দিনে সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। শোকাবহ এই কালো দিবসে ভোররাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। ঘাতকেরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন।
এ হামলা থেকে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এ সময় স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানিতে সন্তানসহ অবস্থান করেন শেখ হাসিনা। সেখানে বড় বোনের সঙ্গে শেখ রেহানাও ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একইসূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া যেমন এদেশ কল্পনা করা যায় না। তেমনই বর্তমান প্রেক্ষিতে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাকে ছাড়া এদেশ ও দেশের উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। ১৫ আগস্ট ২০২৩ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের মাঝে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শেখ হাসিনাকে দরকার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর কঠিন এক প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির ওপর নেমে আসে অত্যাচার নির্যাতন। সারাদেশে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থানও হত্যাযজ্ঞে বিপর্যস্ত সারাদেশ। সেই ভয়াবহ সময়েও আস্তে আস্তে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি কবি–লেখক, শিল্পীরাও সামিল হন এই প্রতিবাদে।
১৯৭৭ সালের দিকে বিভিন্ন পত্র–পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত লেখা প্রকাশ করা শুরু হয়। তখন মূলত তরুণদের সাহসী উদ্যোগে কয়েকটি প্রতিবাদী সংকলনও প্রকাশিত হয়। জাতি–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে এই দিনটি। বাঙালীর প্রিয় নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন বাংলাদেশ। শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ মার্চ ১৯২০ – ১৫ আগস্ট ১৯৭৫) ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলন এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেন।
বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের “জাতির পিতা” বলা হয়ে থাকে। তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জনসাধারণের কাছে তিনি শেখ মুজিব তথা “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। প্রকৃতপক্ষে সমাজ ও পরিবেশ তাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। জীবনে তিনি কোন কোন শক্তির কাছে মাথা নত না করে সব সময় মহান আল্লাহ পাকের নিকট সাহায্য কামনা করেছেন। জীবনে তিনি কোনোদিন কারোও কাছে আত্মসমর্পন করেননি; মাথানতও করেননি। মানুষের দুঃখ–দুর্দশায় যেমন সহযোগিতার হাত বাড়াতেন–তেমনি কারো প্রতি অন্যায় আচরণ দেখলে প্রতিবাদ করতেন।
বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তার মৃত্যু নেই। তিনি চিরঞ্জীব। কেননা একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্থপতি তিনিই। যতদিন এ রাষ্ট্র থাকবে, ততদিন অমর তিনি। সমগ্র জাতিকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণা প্রস্তুত করেছিলেন ঔপনিবেশিক শাসক–শোষক পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তাই চিরঞ্জীব তিনি এ জাতির চেতনায়। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনে দেশের সংবিধানও প্রণয়ন করেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শোষক আর শোষিতে বিভক্ত সেদিনের বিশ্ববাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন শোষিতের পক্ষে। পাকিস্তানি শাসন–শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন–সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার যে ডাক দিয়েছিলেন তা অবিস্মরণীয়। সেদিন তার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই অমর আহ্বানেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিপীড়িত কোটি বাঙালি। সেই মন্ত্রমুগ্ধ ঘোষণায় বাঙালি হয়ে উঠেছিল লড়াকু এক বীরের জাতি।
বঙ্গবন্ধুর আবেদন চিরকালীন। জাতির পিতার ভাষণই একমাত্র ভাষণ যেটা সমগ্র পৃথিবীতে এখনও আবেদন রেখে যাচ্ছে। আর এই ভাষণ যুগ যুগ ধরে শুধু এদেশেরই নয়, সারা বিশ্বের মানুষকে উজ্জীবিত করবে। ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এই ভাষণ যে কতবার, কত দিন, কত ঘণ্টা, কত মিনিট বেজেছে, কত মানুষ এই ভাষণ শুনেছে তা কেউ হিসেব করে বের করতে পারবেনা। বঙ্গবন্ধু নিছক একজন ব্যক্তি নন, বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি চেতনার নাম। টুঙ্গিপাড়ার অজপাড়াগাঁ থেকে উঠে আসা অতি সাধারণ একজন মানুষ হয়ে উঠেছিলেন একটি জাতির আশা– আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তার ডাকে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশের মুক্তিকামি জনগণ। বঙ্গবন্ধুর প্রতি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা কমেনি। এখন বাংলাদেশে লাখ লাখ, কোটি কোটি বঙ্গবন্ধুপ্রেমিক।
বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকরা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল, তখন যে বৃষ্টি ঝরছিল, তা যেন ছিল প্রকৃতিরই অশ্রুপাত। ভেজা বাতাস কেঁদেছে সমগ্র বাংলায়। ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের সামনে ভীতসন্ত্রস্ত বাংলাদেশ বিহ্বল হয়ে পড়েছিল শোকে আর অভাবিত ঘটনার আকস্মিকতায। কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে এ শোকের আগুন। ১৫ আগস্ট শোকার্দ্র বাণী পাঠের দিন, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর দিন। সমগ্র বাঙালি জাতি আজও গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করে ১৫ আগস্টের সকল শহীদের।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করার মতো সাহসী মানুষ ছিল খুব কম। ২১ বছর বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করা হয়, তখন দেশজুড়ে দারুণ এক আবেগের ঢেউ খেলে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আবেদন চিরকালীন। এখন বাংলাদেশে লাখ লাখ, কোটি কোটি বঙ্গবন্ধুপ্রেমিক। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্ণ হয়েছে। এর ঠিক পরের বছরই ২৬ মার্চ বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।” এটাই ছিল বাঙালীর মুক্তির সনদ।
জাতির পিতা আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এই মূলমন্ত্র নিয়েই বাঙলি নেমেছিল স্বাধীনতার সংগ্রামে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটে প্রাণ না হারাতেন তবে ২০২০ সালের ১৭ ই মার্চ তিনি শতায়ু হতেন। জয় বাংলা– এ শ্লোগান আমাদের স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাইতো গত ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা দেন মহামান্য হাইকোর্ট। আর এই স্লোগান যার মুখে মুখরিত ছিল সে আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয়সংগ্রামী বাঙালীর প্রিয় নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের “জাতির পিতা” বলা হয়ে থাকে।
জাতির পিতা বলেছিলেন, “আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবন পায়।” এজন্য স্বাধীনতার পর তিনি যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেই সংবিধানেও এই মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতের কথা বলেছেন। বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে এসে বঙ্গবন্ধুকে অভিহিত করেছেন “বিশ্ব নেতা” হিসেবে, যা অনুসরণীয় হতে পারে অন্যান্য দেশের। বাংলাদেশে আজ নিজে অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ একটি প্রকল্প। বাস্তবায়িত হচ্ছে নদীগর্ভে ৩.৬৬ কি.মির মতো টানেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ ১০টি মেগা প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর কক্ষপথে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন এইসব উন্নয়ন তারই স্বপ্নের বাস্তবায়ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সকল উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়ে সম্পন্ন করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। জাতির পিতা বাংলাদেশকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তারে অসম্পূর্ণ কাজ আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারা পূরণ হবার পথে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময়ই বলতেন দেশের মানুষ যেন খাদ্য পায়, বস্ত্র পায়, চিকিৎসা পায়। তিনি সব সময় এই চিন্তা করতেন। তার জন্ম শতবার্ষিকীতে দেশের কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে তা হতে পারে না। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা খুঁজে বের করুন যাদের ঘর নেই, আশ্রয় নেই। আমরা ঘর বাড়ি করে দেবো। মুজিব বর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। ” বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশের উল্টো যাত্রা শুরু হয়েছিল। খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, তাদের নানা পদ দিয়ে পুরস্কৃতও করা হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার (বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ওই অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের আওতায় এনে খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আদেশ প্রদান করে আদালত যে রায় দিয়েছে এতে বাঙালিরা একটু হলেও কলঙ্কমুক্ত হয়েছ। জাতি আজও আশা আছে কবে এসব খুনিদের ফাঁসির দন্ড কার্যকর করে পুরোপুরি কলঙ্ক মুক্ত হতে পারবে। যতদিন না এই পলাতক খুনিদের ধরে এনে শাস্তি দেওয়া ততদিন বাঙালির মনে প্রাণে এই কষ্ট এবং আফসোস থেকেই যাবে। পলাতক খুনিদের এনে ফাঁসির কার্য সম্পাদন না করা পর্যন্ত বাঙালি জাতি জাতির পিতার হত্যার কলঙ্ক থেকে দায়মুক্ত হতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ হতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পালিয়ে থাকা আত্মপ্রকাশিত খুনিদের ধরে এনে শাস্তি প্রদান করার জন্য।
বাঙালি জাতি আজ সেই আশায় রয়েছে কবে এই পলাতক বাকি কুখ্যাত খুনিদের এনে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে দায়মুক্ত হতে পারবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বাঙালি জাতি এই দিনটি পালন করে শোকের মধ্য দিয়ে। কেননা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এভাবে নির্মমভাবে খুন হতে হয় এই দিনে। এর চেয়ে বড় বেদনার মুহূর্ত বাঙালি জাতির জন্য আর হয় না। দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ছিলো বঙ্গবন্ধুর। তাইতো জীবনে আরাম–আয়েস সুখের কথা ভাবেননি। কেবল ভেবেছেন দেশের মানুষের কথা দেশের মানুষের সুখ শান্তির কথা ।
লেখক: রেজিস্ট্রার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই