Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জয় বাংলা ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার

হাবীব ইমন
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৪৯

এক.
ঠিক এক বছর আগে ভোরের প্রত্যুষে চলে গিয়েছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।

মুক্তিযুদ্ধের রণসংগীতের রচয়িতা তিনি। যদিও এ গানের আবেদন মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকে—বাঙালি মনে তখন আন্দোলিত করে চলেছে এ গান। যে গানটির কথা বলছি, তা হলো— ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’।

এ গানটি শোনেনি এমন মানুষ খুবই কম আছে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য যাই থাকুক, এ গানটির সঙ্গে মিশে গেছে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের আবেগ। সর্বাধিক শ্রোতাশ্রুত গানের তালিকা করলে নিঃসন্দেহে এ গান আসবে। এটি শুধু গান নয়, এমন কিছু কথা সম্মিলন, যার মধ্য দিয়ে মুক্তির সংগ্রামে উদ্দীপ্ত হয়ে হানাদারবধে এগিয়ে যান বাংলার ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ সব শ্রেণির জনতা।

গানটি এমন এক সুরের গাঁথুনি, যা বাংলার মুক্তিপিপাসু মানুষের চেতনায় আগুন ধরায়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে এই গানকে আরাধ্য করেই মুক্তির পথে এগিয়ে যায় সমগ্র বাঙালি। এই গান স্বাধীন বাংলা বেতারের সূচনা সংগীত; জাতীয় স্লোগানও বটে।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ভাষ্য ছিল—‘এ গান একটি যুদ্ধ, এ গান একটি স্বপ্ন, এ গান একটি বাস্তবতা। এ গানেই দেশের সব চাওয়ার কথা, মুক্তির স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে।’

দুই.
১৯৭০ সালের কথা। ‘জয় বাংলা’ নামে সিনেমাতে সংগীত পরিচালনা করছেন আনোয়ার পারভেজ। ছবিটি ছয় দফা নিয়ে। গাজী মাজহারুল আনোয়ার গান লিখলেন। তখন এমন পরিস্থিতি গান সুর করার জন্য গীতিকার-সুরকার একসঙ্গে বসার জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না।

এখন যেটা সংসদ ভবন, তখন ‘সেকেন্ড ক্যাপিটাল’ বলে পরিচিত ছিল সেই জায়গা। সেই সেকেন্ড ক্যাপিটালের উল্টো দিকে গলির ভেতর রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেলেন তারা। ২০ মিনিট! মাত্র ২০ মিনিটে তারা তৈরি করে ফেললেন ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানের কম্পোজিশন।

বিজ্ঞাপন

খুবই সতর্কতার সঙ্গে ঢাকা ইন্দিরা রোডে একটি রেকর্ডিং স্টুডিওতে সেই গানটি রেকর্ড করা হলো। চারিদিকে সেনাবাহিনীর টহল। পরিস্থিতি থমথমে, তখন এর ভেতরে গভীর রাত পর্যন্ত এ গান রেকর্ড করা হল। আর এ গানটি আবহ সংগীত করা হলো লাহোরে।

এটা জয় বাংলা গানের ইতিহাস।

তিন.
গাজী মাজহারুল আনোয়ার শুধু ‘জয় বাংলা’ লিখেননি। লিখেছেন আরও অনেক সময় ছাপিয়ে যাওয়া গান। অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা তিনি। ২০ হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন তিনি। সব গান সংরক্ষণ তার কাছে ছিলো না। মুক্তিযুদ্ধের সময় ইয়াহিয়া খান বাঙালিদের যে ফাঁসির তালিকা তৈরি করেছিল, তাতে ১৩ নম্বরে ছিলেন তিনি। তাকে আত্মগোপনে যেতে হয়েছিল। পরে ফিরে এসে দেখেন বাসায় থাকা তার গানের পাণ্ডুলিপি আর নেই। এরপর রেডিও স্টেশনে গিয়ে দেখেন সেখানেও তার গানগুলো নেই। পাকবাহিনী বাঙালিদের সব সৃষ্টিকর্ম ধ্বংস করে দিয়েছিল। তার রচিত প্রচুর গান হারিয়ে গেছে। তবুও রয়ে গেছে হাজার হাজার আলোচিত গান। সেই গানগুলোর কয়েকটি হলো— একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল, একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনারগাঁয়, জন্ম আমার ধন্য হলো, গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে, আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল, যার ছায়া পড়েছে মনেরও আয়নাতে, শুধু গান গেয়ে পরিচয়, ও পাখি তোর যন্ত্রণা, ইশারায় শীষ দিয়ে, চোখের নজর এমনি কইরা, এই মন তোমাকে দিলাম, ও আমার রসিয়া বন্ধু রে…। তার দেশাত্মবোধক গানের দিকে দেখা যাবে, তার প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেমে তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে।

চার.
মূলত জমিদার বংশের সন্তান গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকলেও ছোটবেলা থেকেই দেশ-প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। সেই আগ্রহ থেকে তার ভেতর জন্ম নেয় সৃজনশীলতা। ধীরে ধীরে তা তাকে পরিণত করে গীতিকারের। মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি গীতিকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপন

১৯৬৪ সালে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে তার লেখা প্রথম গান প্রচার হয়। সেই থেকে শুরু। তারপর কেটে গেছে অর্ধশতাধিক বছর। সৃষ্টি করেছেন হাজার হাজার গান। মুগ্ধ করেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানের ইতিহাস। তাকে বাদ দিয়ে বাংলা গানের ইতিহাস লেখা প্রায় অসম্ভব।

বাংলা গানের গৌরবোজ্জ্বল যাত্রায় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের নাম থাকবে অবিনাশী।

লেখক: রাজনীতিবিদ ও লেখক

সারাবাংলা/এসবিডিই

জয় বাংলা ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার মত-দ্বিমত হাবীব ইমন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর