Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সেলফি কূটনীতি-রাজনীতির মেলবন্ধন

মোস্তফা কামাল
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:২০

রাজনীতির মতো কূটনীতিতেও এখন নানা উপাদান যোগ হচ্ছে। ফলফলাদি- মাছগোশও বাদ যাচ্ছে না। আম-ইলিশ কূটনীতি এ অঞ্চলে অনেকদিনের। পাশ্চাত্যের তুলনায় সেলফি যোগ হয়েছে একটু দেরিতে। এ অভিযাত্রায় এগিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার বিশেষ সেলফিপ্রীতি রয়েছে। স্যোশালমিডিয়ায় একটু বেশি পটু। নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর আঙুলের দাগসমেত সেলফি তুলে বেশ ভাইরাল হয়েছিলেন। সেলফি তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাঁধে হাত রেখেও। সেখানে এখন ভিন্ন মাত্রায় যোগ হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে সেলফি তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বিজ্ঞাপন

জো বাইডেন কূটনীতিতে দক্ষ। তারও বেশ সেলফিপ্রীতি রয়েছে। তার অসংখ্য সেলফি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা আছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাজনীতিতে অন্য উচ্চতায় পক্ক। দিল্লিতে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে বাইডেনের সঙ্গে তার কুশলবিনিময় হয়েছে। সাইড লাইনে তোলা হয়েছে সেলফিটি। এ নিয়ে কূটনীতির চেয়ে রাজনীতিটা বেশি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এ নিয়ে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। দলের সমাবেশে শাহী এলানের মতো একে একটা নতুন খবর হিসেবে প্রচার করেছেন তিনি। নিজস্ব ভঙ্গিমায় বলেছেন, এক সেলফিতেই বিএনপির রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে। দলটির নেতাকর্মীদের চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে। বিএনপির এখন কী হবে? তার বক্তব্যের জবাব দিতে দেরি করেননি বিএনপি মহাসচিব মিজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বচনে তিনি পরিমিত হলেও এ প্রশ্নে শব্দ ও ভাষায় বেশ নেমেছেন। ওবায়দুল কাদেরকে সেলফির ছবিটি গলায় ঝুলিয়ে বেড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এও জানতে চেয়েছেন, সেল্ফিতে কি যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বা ভিসানীতি উঠে গেছে?

বিজ্ঞাপন

সদস্য না হয়েও জি- ২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পেয়েছে, কিছু কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। এটি সম্মানের। একে বিপদমুক্তির বার্তা ভাবতেও সমস্যা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে এমন একটা ফোরামে গিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরেছেন কথা বলতে পেরেছেন, এই সময়ে তার জন্য এটা একটা বিরাট প্রাপ্তি। কারো কাছে তা বড় বিষাদময়। ওবায়দুল কাদেরের ভাষায়: জ্বলে রে জ্বলে। অন্তরে জ্বালা, বাইরে জ্বালা। প্রভাবশালী বিদেশিদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা এদেশের রাজনীতিতে নতুন নয়। সৌজন্যতাকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহারের ক্রিয়াকমর্ও এ দেশে আছে। ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর অতি খুশি হয়ে তাড়াহুড়া করে ফুল নিয়ে অভিনন্দন জানাতে দুতাবাসে ছুটে যাওয়ার ঘটনাও আছে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ওদিন যে দূতাবাস ছুটি তাও ভুলে গিয়ে গেটে ফুল রেখে আসার বিব্রতকর ঘটনা এখনো ভুলে যাওয়ার মতো নয়। প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এলে রাজনৈতিক নেতারা সৌজন্যতার খাতিরে তার সাথে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন- বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম ও তাদের সাথে কোনার দিকে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেও তার অনুসারীরা তার ছবি কেটে দিয়ে দেখালেন, আওয়ামী লীগের নেতারা প্রণব মুখার্জির পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে দেশের অমর্যাদা করেছে।

ডিগনেটরিজদের সোস্যল গ্যাদারিং বা অফিশিয়াল পার্টিতে পরষ্পরের প্রতি শুভেচ্ছা বিনিময় কুশল বিনিময় সভ্য দুনিয়ায় প্রচলিত রেওয়াজ। এখানে কেউ কারও সাথে কথা বলতে চাইলে সাধারণত কেউ এড়িয়ে যান না। কিন্তু, আমাদের এ নিয়ে স্থানিক রাজনীতির বদঅভ্যাস অনেকটা মজ্জাগত। আদিখ্যেতার সীমা ছাড়ানোর একটা বাতিকও আমাদের আছে। কিছু মহল এ সেল্ফিতে বিশ্বজয়ের ঢেঁকুর তুলছে। যারা আগের দিনও যুক্তরাষ্ট্রের পিণ্ডি চটকিয়েচে। কারো কাছে তা বড় অসহ্যের। বাইডেন কেন শেখ হাসিনার সঙ্গে সেলফি তুললেন, তা হজম করা তাদের জন্য বড় কষ্টের। সেলফির রাজনীতিকরণ ও সরল সমীকরণ তারা মানতে পারছেন না। নিজের কথা আবার অন্যকেও গেলাতে চান এই মহলটি। তাই কথন-অতিকথনও বাড়বাড়ন্ত। যে যা পারছেন বলছেন।

বাইডেন যখন জানবেন তার সেল্ফির এমন রাজনীতিকরণ করা হয়ে গেছে, তখন অবস্থাটা কী হতে পার তার? কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের সময় তোলা ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে গতমাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠকে, অবকাঠামো, তথ্য প্রযুক্তি, নতুন শক্তি এবং কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে আহ্বান জানান। ঐদিন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যকার বৈঠকের ছবিও প্রকাশ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এর সঙ্গে বৈঠকের ছবি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন কক্ষের কোনো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সেলফির গুরুত্ব বেশি তা আগামী কিছুদিনের মধ্যে স্পষ্ট হতেও পারে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিরোধিতা করা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল। সেই স্বীকৃতির ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে এ বছর। গণতন্ত্র, সর্বজনীন মানবাধিকার, শ্রমমান এবং সুশাসন-এই চার স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি নানা আয়োজনে উদযাপন করা হয়। স্বীকৃতির পর ধাপে ধাপে নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছে দুই দেশের সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু রাষ্ট্র। বলা হয়ে থাকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এখন বিস্তৃত এবং গভীর। এখন তারা বাংলাদেশকে বৈদেশিক নীতির উদাহরণ বানাতে চায়। বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন বিষয়ে তারা যারপরনাই আগ্রহী এবং সজাগ। আবার তারা গণতন্ত্র সম্মেলনের মতো মর্যাদাকর সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে না গত কয়েক বছর। সামনের দিনগুলোতে কী হবে, তারা কী করতে পারে- এ প্রশ্ন ঘুরছে। কিন্তু, জবাব এখনো ধোঁয়াশা। সেল্ফি কূটনীতি দিয়ে এর একটা ধাপ শুরু হতেও পারে বলে ধারনা করার অনেক লোক বাংলাদেশে আছে। রাজনীতি-কূটনীতির এ মেলবন্ধনে এর বিপরীত চিন্তার মানুষ তো আছেই। যা গোলমাল জটিল থেকে জটিল হওয়ার বিশেষ কারণ।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেলফি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর