পাকিস্তানে ‘গণতান্ত্রিক সরকার হঠাও ষড়যন্ত্র’ বাংলাদেশে সফল হবেনা
১১ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:১৩
সম্প্রতি, ইন্টারসেপ্ট’ নামে মার্কিন সংবাদ সংস্থার একটি কূটনৈতিক ‘সাইফার’ বা গোপন তারের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এটি দেখায় যে, মার্কিন সরকার গত বছর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করেছিল। দ্য ইন্টারসেপ্ট নিউজ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু গত বছরের ৭ মার্চে কথা বলেছেন। দাবি করা হয়, ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে না সরালে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক গোপন সম্মেলনে ইমরান খানকে পদচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কারণ পাকিস্তান রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাতের বিষয়ে তার নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছিল। পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের ফলে ২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানে ইমরান খানের সরকার পতন ঘটে। খান অভিযোগ করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে ইমরান খানের সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। যদিও ওয়াশিংটন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবিগুলোর বিরোধিতা করেছে, কিন্তু পাকিস্তানের অধিকাংশই মানুষই এমনটি হয়েছে বিশ্বাস করে।
পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্ম একজন সুপরিচিত ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে ইমরান খানের রাজনৈতিক উচ্চতায় অনুপ্রাণিত হয়েছে। দেশটির নাগরিকরা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকাবিরোধী মনোভাব পোষণ করে আসছে। প্রশাসনের পরিবর্তনের সময় পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়, যা ইমরান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যাপারে সূযোগ করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক্তন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধি বলেছেন, ‘খান তার পক্ষে জনসমর্থন পেতে মার্কিনবিরোধী মনোভাব ব্যবহার করার চেষ্টা করছিলেন।’ খানের সমর্থনযোগ্য প্রমাণের অভাব সত্ত্বেও সাধারণ জনগণ এই ষড়যন্ত্রমূলক দাবিগুলো গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখন যে ইন্টারসেপ্ট নিবন্ধটি সর্বজনীন করা হয়েছে, তা স্পষ্ট। মার্কিনীরা ঠিক অনুরূপ একটা ষড়যন্ত্র করার পায়তারা করছে বাংলাদেশকে ঘিরে, তারা চাচ্ছে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও তাদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের নামে তাদের পছন্দের কাউকে দিয়ে সরকার গঠন করানো। কিন্তু পাকিস্তানে মার্কিনীরা এ বিষয়ে সফল হলেও বাংলাদেশে তারা কোনো ভাবেই সফল হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হয়তো যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতায় চায় না বলেই বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শেখ হাসিনা তার যুক্তরাজ্য সফরের সময় বিবিসির ইয়ালদা হাকিমের সাথে একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা বলেন।
এ সময় সরকার প্রধান আরও বলেন, বাংলাদেশে গত ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকায় দেশে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে। যে উন্নয়ন যাত্রা শুরু হয়েছে সেটা অব্যাহত থাকুক, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সেটি মেনে নিতে পারছে না। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক তা চায় না, আমি বাংলাদেশের জন্য যেসব উন্নতি করেছি, সেটা তারা হয়তো গ্রহণ করতে পারছে না। এটা আমার অনুভূতি। একটা পর্যায়ে সন্ত্রাস সব দেশের জন্য সমস্যা হয়ে উঠেছিল। আমাদের দেশে আমরা সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ রাখতে কঠোর পরিশ্রম করেছে। এ সময় সরকার প্রধান আরও বলেন, বাংলাদেশে গত ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকায় দেশে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে। যে উন্নয়ন যাত্রা শুরু হয়েছে সেটা অব্যাহত থাকুক, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সেটি মেনে নিতে পারছে না। হয়তো তারা আমার কাজ অব্যাহত থাকুক তা চায় না, আমি বাংলাদেশের জন্য যেসব উন্নতি করেছি, সেটা তারা হয়তো গ্রহণ করতে পারছে না। এটা আমার অনুভূতি। একটা পর্যায়ে সন্ত্রাস সব দেশের জন্য সমস্যা হয়ো উঠেছিল। আমাদের দেশে আমরা সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ রাখতে কঠোর পরিশ্রম করেছে।
আমি জানি না আমেরিকা কীভাবে এটা করেছে, কিন্তু আমেরিকায় কি ঘটছে, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। সেখানে প্রায় প্রতিদিন একাধিক হত্যাকান্ড ঘটছে। এমনকি স্কুল, শপিং মল, রেস্তোরায় হত্যাকান্ড ঘটছে। এমনকি স্কুল শিক্ষার্থীরা, সাধারণ মানুষ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা সশস্ত্র ব্যক্তির হাতে নিহত হচ্ছে। আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাদের নিজেদের ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়া। তাদের দেশের কী অবস্থা? তাদের উচিত শিশুদের জীবন রক্ষা করা। তারা নিজেদের লোকজনের ব্যাপারে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা যেসব অভিযোগ করেছে, আমরা তাদের কাছে প্রমাণ চেয়েছিলাম। তারা দেয়নি। আমি মনে করি, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা একটা খেলার মতো। এটা আমার কাছে এখনো পরিষ্কার নয়, কেন তারা আমাদের দেশের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিল? পচাত্তরের খুনিরা দায়মুক্তি পেয়েছিলো। আমি এমনকি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারিনি, আমার বিচার পাওয়ার কোন অধিকার ছিলো না। সেই সময় তারা কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বরং একজন হত্যাকারী আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদের বারবার অনুরোধ করেছি, তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য। তারা করেনি। কেন তারা শুনছে না, আমি জানি না।’
মার্কিনীদের এমন কার্যকলাপ তাদের স্বার্থ হাসিল ছাড়া অন্য কিছু না,কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ ও দেশের তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে দিবে না। বাংলাদেশি জনসাধারণের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী বাণী ছিলো ‘আমেরিকায় আসতে না পারলে আসবে না, আমার দেশে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে’ ‘আমরা দেখি, কী করে তারা। কেন তাদের এই স্যাংশন জানি না’ জনসাধারণের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এমন সাহসী বার্তা যে কোনো দেশের জনসাধারণের জন্য বিশাল শক্তি।
এদেশের জনসাধারণ ঠিক থাকলে বহির্বিশ্বের কোনো শক্তি এদেশে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারবে না,কারণ জনসাধারণই হলো গনতান্ত্রিক সরকারের প্রাণ। এছাড়াও বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে সেটাও বর্তমান সরকারের অবদান। দেশের অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে সেটা অন্য কোনো সরকারের আমলে কল্পনা করা যায়না। দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে, দেশে সাক্ষরতার হার বেড়েছে, শিশু মৃত্যু হ্রাস, সন্ত্রাস, দূর্ণীতি কমে আসাসহ সর্বোপরি জনসাধারণ সুখে শান্তিতে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছে যা মূলত প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই এগুলোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় মানুষের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে প্রধানমন্ত্রীর উপর এবং দেশের জনসাধারণ চাই এমন গণতান্ত্রিক সরকার আবার সরকার গঠন করুক। সুতরাং এ কথা স্পষ্ট যে, মার্কিনীরা যত যড়যন্ত্রই করুক না কেন পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক সরকার হঠাও ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে সফল হবে না।
লেখক: ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়; সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটিলিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক সরকার হঠাও ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে সফল হবে না মত-দ্বিমত