Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুলকে জামায়াত-হেফাজত

মোস্তফা কামাল
২৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৩৯

সরকারের চেনা শত্রু বিএনপি। হাঁড়ির খবরের মতো দলটির ভেতরের আপ ডেট যাবতীয় তথ্যাদি রাখে সরকার। রাখতে হয়। বিএনপি নেতাদের কোথায়, কার সঙ্গে কী যোগাযোগ এর আদ্যোপান্ত খবরাখবর সংগ্রহে সরকারের কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু, যত গোলমাল জামায়াত আর হেফাজতের তথ্য নিয়ে। সরকারের সঙ্গে জামায়াত এবং এর অপভ্রংশ এবি পার্টির যে গ্রুপটি যোগাযোগ রেখে চলছে তারাও সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। উপরন্ত তথ্যবিভ্রান্তিতে ফেলছে সরকারকে। হেফাজতের কাণ্ডকীর্তিও তেমনই। ক্ষেত্রবিশেষে আরো বেশি।

বিজ্ঞাপন

জামায়াতের ব্যাপারে সরকার অনেকটা নির্ভার হয়ে উঠেছিল। দৃশ্যত. বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে ছেড়েছে জামায়াত। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোট ত্যাগ করেছে অনেক আগেই। তাদের কেউ কেউ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছিল। কিন্তু, নেপথ্যে এদের যোগাযোগ বিএনপির সঙ্গেও। অন্যদিকে, হেফাজতের প্রায় পুরোটাই সরকারের হেফাজতে চলে গিয়েছিল। পেয়ে বসার মতো সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে নিয়মিত সুযোগ-সুবিধাও হাতিয়েছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এদেরও এখন পিঠটান-পিছুটান। গত ক’দিনের হালনাগাদ তথ্যে সরকার তাই জামায়াত-হেফাজত নিয়ে যতো উদ্বিগ্ন, বিএনপি নিয়ে তত নয়।

বিজ্ঞাপন

প্রবল বিরোধী অবস্থা থেকে একসময় সরকারের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা হেফাজত এর আগেও দুয়েকবার এ ধরনের পথ ধরেছিল। সরকার শক্ত হাতে তাদের নিয়ন্ত্রণে এনছে। বশও মানিয়েছে। নাকে খত দেয়া বা কান ধরে ওঠবস করানোর মতো আর এমনটি করবে না বলে ওয়াদাও আদায় করেছে। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় আবার ইউটার্ন দিয়ে বসেছে। অরাজনৈতিক সংগঠন হওয়ার পর আসন্ন নির্বাচনে অন্তত ৫০টরি মতো আসন দাবি করছে নৌকা বা স্বন্ত্রের ব্যানারে। মেজাজও দেখাচ্ছে সরকারের সঙ্গে। গোটা বিষয়টি সরকারের জন্য বিষ খেয়ে বিষ হজম করার মতো।

অনিবার্য কারণে হেফাজতকে সরকার এখন আর শুধু কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন ভাবতে পারছে না। এরইমধ্যে সৌদি-আফগানসহ বিদেশি কিছু বিশেষ কানেকশনের তথ্যও এসেছে সরকারের হাতে। হেফাজত ভেতরে-ভেতরে ফুসে তেঁতে আছে। সরকারের প্রতি নমনীয়তার ভান করে তারা দীর্ঘদিনেও কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের সুরাহা করতে পারেনি। ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন করে বার কয়েক ওয়ার্নিং দিয়ে এখন কারাবন্দি নেতা মামুনুল হকসহ আলেমদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের ফাইনাল আলটিমেটাম দিয়েছে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এ দাবি আদায় না হলে অঘটন ঘটানোর হুঙ্কারও দিয়েছে। সরকারের পক্ষে হেফাজতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী মন্ত্রী ও আ্ওয়ামী লীগ নেতাদের মুখের ওপর আজেবাজে মন্তব্য করেছে বলেও শোনা যায়। হেফাজতের এ মতিগতি সরকার ও দলের শীর্ষ পর্যায়কে অবহিত করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও নেতারা।

সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ হেফাজতের অনেক নেতাকর্মী এখনো কারাবন্দী। কারামুক্ত ও জামিনপ্রাপ্তদের নিয়মিত মামলায় হাজিরা দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ। তাদেরকে আর বোঝানো যাচ্ছে না বলে সরকারকে জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা। এর মাঝে তাদের চাতুরি দেখছে সরকার। নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায় তারা। এ সুযোগ দিলেও তারা শেষতক সরকারের সঙ্গে থাকবে-এমনটি আর ভাবতে পারছে না সরকার। সরকারের প্রচ্ছন্ন ছায়ায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের পর এদের অবস্থান এখন অনেকটা শক্তিশালী। এ শক্তি তারা আবার সরকারের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করতে চায়। সরকারের জন্য এটি দুভাগ্যের এবং অনেকটা ধারনারও বাইরে।

বিভিন্ন দাবিতে মাঠে নামা হেফাজত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে । ওই বছর ৫ মে তাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের শাপলা চত্বর থেকে হটাতে সরকারের অনেক বেগ পেতে হয়। ঘটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। মৃত্যু হয় বেশ কিছু হেফাজত নেতাকর্মীর। গ্রেপ্তার করা হয় অনেককে। ওই সময় হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা আহমদ শফিকে পুলিশ নিরাপদে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেয়। পরে শফি ও সরকারের মধ্যে এক ধরনের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কের সূত্র ধরে হেফাজতের বেশ কিছু দাবি মেনে নেয় সরকার। ২০১৭ সালের এপ্রিলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আহমদ শফির নেতৃত্বে বৈঠক করেন কওমি মাদ্রাসার আলেমরা। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস সনদকে মাস্টার্সের সমমানের ঘোষণা দেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে বিলও পাস করা হয়।

অন্যদিকে এ স্বীকৃতির বিপরীতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর পক্ষ থেকে শোকরানা মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আহমদ শফির সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে অভিষিক্ত করা হয় ‘কওমি জননী’ উপাধিতে। কিন্তু, ভেতরের জেদ -ক্ষোভ যায়নি তাদের। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আহমদ শফির মৃত্যুতে হেফাজতের ভেতরে কিছু সমস্যা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে সরকারি পছন্দ ও আনুকুল্যে নেতৃত্বে কিছু পরিবর্তনও আসে। নতুন আমির নির্বাচিত করা হয় জুনায়েদ বাবুনগরীকে। সেই মিতালিও টেকেনি। ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়ে বসে হেফাজত। এ সময় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজত নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এর বিরুদ্ধে দেশে দুই শতাধিক মামলা হয় হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরূদ্ধে। গ্রেপ্তার হয় অনেক নেতাকর্মী। মামলা ও পুলিশের অভিযানের মুখে অনেকটা চাপের পড়ে হেফাজত। এ অবস্থায় ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয় তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। পরবর্তীকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের বাদ দিয়ে ৩৫ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকে আবার সরকারের সঙ্গে দূরত্ব গোছানোর চেষ্টা হেফাজতের। আবার গণভবনে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক-আপ্যায়ন। আবারো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হওয়ার ওয়াদা আদায়। বিনিময়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি। এতে দূরত্ব কিছুটা কমলেও মাওলানা মামুনুল হকসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীর কারামুক্তির বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখে সরকার। এর জেদে তারা এখন সময় বুঝে আবার মাথার পাগড়ি কোমরে বাঁধছে।

জামায়াতও আর রাখঢাক রাখছে না। নেপথ্য বোঝাপড়ায় সরকারেএক দশক পর গত ১০ জুনে তাদের ঢাকায় বিশাল সমাবেশের সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু, জামায়াত তাদের টার্গেট পয়েন্ট থেকে সরেনি। মার্কিন স্যাংশন ও ভিসা নীতিকে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তাদের জন্য। সামনে আরো সুদিনের বার্তা আছে বলে তাদের বিশ্বাস। যদিও সরকার ও প্রশাসনের চাপে ১৪ বছর ধরে জামায়াত প্রকাশ্য রাজনীতিতে বা সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেই। দলীয় কার্যালয়গুলো বন্ধ ২০১১ সাল থেকে। এগুলোকে এখন আর সমস্যা হিসেবে দেখছে না জামায়াত। বন্ধ থাকা কার্যালয়গুলেঅর দুয়ার তারা যে কোনো সময় খুলবে বলেও সময় গুনছে।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

সারাবাংলা/এজেডএস

পুলকে জামায়াত-হেফাজত মোস্তফা কামাল

বিজ্ঞাপন

বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৩১

বাঘায় কৃষককে গলা কেটে হত্যা
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর