যোগ্য পিতা-মাতার যোগ্য সন্তান
৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৪৩
১১টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে বিজয়ী হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। গত ১ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনের তৃতীয় দিনে ভোটগ্রহণ হয়। সদস্য দেশগুলো সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে মনোনীত করার পক্ষে ভোট দেয়। বাংলাদেশ, ভুটান, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও তিমুর-লেস্তে- এই দশ দেশ ভোট দেয়। মিয়ানমার ভোট দানে বিরত থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ২০২৪ সালের ২২ থেকে ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ডব্লিউএইচওর ১৫৪তম অধিবেশনে এই মনোনয়ন জমা দেওয়া হবে। নব নির্বাচিত আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে ভূমিকার জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মহাপরিচালকের উপদেষ্টা।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ১৯৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল মনস্তত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০০৪ সালে স্কুল মনস্তত্বে বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়। তিনি ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতাসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ করছেন। স্বীকৃতিস্বরুপ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ২০০৪ সালে হু অ্যাক্সিলেন্স পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৬ সালে সায়মা ওয়াজেদ জনস্বাস্থ্যে তার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৭ সালে তিনি প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়ন পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি তার সক্রিয়তার জন্য ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশিষ্ট প্রাক্তন শিক্ষার্থী পদক প্রাপ্ত হন।
অটিজম নিয়ে অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি বিশেষ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিন কন্যা এবং এক ছেলের গর্বিত মা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রথম বাংলাদেশি, যিনি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ডাব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে অধিষ্ঠিত হবেন।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে অটিজমের ভূমিকার জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের এই সময়ে আন্তর্জাতিক কোন উচ্চপদে নির্বাচিত হয়ে আসাটা বেশ সম্মান ও মর্যাদার। তার মা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং টানা পনের বছর এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আসন্ন সে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আছে। এই মুহূর্তে দেশে কিছুটা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। বিএনপি – জামাত আবার তাদের পুরানো জ্বালাও পোড়াও ও ধ্বংসাত্বক রাজনৈতিক কার্যকলাপে ফিরে গেছে। বিগত আটাশে অক্টোবর রাজধানীতে সমাবেশের নামে বিএনপি- জামাত পুলিশকে হত্যা,প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, হাসপাতালে হামলাসহ জান মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা সরকারের পদত্যাগের অসাংবিধানিক দাবি নিয়ে এবার মাঠে নেমেছে। সেই অবস্থায় সরকার প্রধান শেখ হাসিনার কন্যার আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোন পদে নির্বাচিত হওয়াটা তার এবং দেশের জন্য অবশ্যই গৌরবের ব্যাপার। সন্তানের এই সাফল্যে মা শেখ হাসিনার ও দেশের মান বিশ্ব পরিমন্ডলে আরো উজ্জ্বল হয়েছে।
শেখ হাসিনার টানা এই ১৫ বছরের শাসনামলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ায় বাংলাদেশ অনন্য এক উচ্চতায় পৌছিয়েছে। এর আগে মর্যাদা পূর্ণ সিপিইউ এবং আইপিইউতে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী সভাপতি পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সিপিইউ ও আইপিইউ বিশ্ব পরিমন্ডলে আইনসভার দুটি আন্তর্জাতিক উচ্চ মর্যাদার সংস্থা। যেখানে বাংলাদেশ সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে। এছাড়াও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় বিভিন্নপদে সরকারি আমলারা নির্বাচিত হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের এই নির্বাচিত হয়ে আসাটা সাধারণ বিষয় নয়। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর কন্যা। তার নির্বাচিত হয়ে আসা দেশের জন্য এবং তাদের নিজেদের রাজনৈতিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন নির্বাচনের জয় পরাজয় থাকে। কিন্তু এই মুহূর্তে পুতুল হেরে গেলে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অবস্থা ও দেশের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতো বলেই ধরে নেয়া হয়। তাই জয়ী হয়ে আসাটা সম্মান ও মর্যাদার। আর এখানেই শেখ হাসিনা ওতার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সফলতা। বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকা দুই কন্যার সন্তানেরা আজ বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের সংসদের বারবার নির্বাচিত সদস্য। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্ররা বিভিন্নভাবে আজকে দেশের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে আসছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নির্বাচনের আগে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার হয়েছে। কিন্তু তিনি সব অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে বড় ব্যবধানে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল একজন যোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবেই এই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরাট কূটনৈতিক সফলতা এসেছে। বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশ এখন একটি মর্যাদারশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশের মধ্যে অন্যতম। নারী শিক্ষা, শিশু মৃত্যুর হার কমানো, গড় আয়ু বৃদ্ধি, অটিজম বিষয়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহন ইত্যাদি নানা বিষয়ের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ এখন অনেক দেশের রোল মডেল। আর এসব বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এখন তিনি বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে নেতৃত্ব দিবেন। এটা বাংলাদেশের সবার জন্য গৌরবের। এই অর্জন শুধু পুতুলের একার না এই অর্জন দেশের মানুষের। তিনি আজ দেশের গর্বিত সন্তান। যিনি বিশ্বে বাংলাদেশের মুখকে উজ্জ্বল করেছেন। তিনি এমন একজন মানুষের নাতনি যিনি হলেন আধুনিক কালের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা ও প্রতিক,বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার মা শেখ হাসিনা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ,অভিজ্ঞ, প্রবীন একজন রাজনীতিবিদ। যিনি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে শীর্ষ পদে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন এবং বিশ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শীর্ষে থেকে নিজ দেশকে অভূতপূর্ব উন্নয়নের উচ্চ শিখরে নিয়ে গেছেন। যার পিতা ড. এম ওয়াজেদ মিয়া এই উপমহাদেশের অন্যতম একজন পরমাণু বিজ্ঞানী। তার বড় ভাই সজীব ওয়াজেদ জয় আন্তর্জাতিক মানের একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। তিনি যথার্থই যোগ্য পিতা-মাতার যোগ্য সন্তান।
পুতুলের পিতা- মাতা দুজনই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল ও সার্থক মানুষ। মা শেখ হাসিনা বিশ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দেশের জন্য অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছেন। বাংলাদেশকে তুলনামূলক অল্প সময়ের মধ্যে একটি সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে গেছেন। মা একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী,তার কন্যা হিসেবে ক্ষমতার মোহে আবিষ্ট না থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবিক কার্যক্রমে নিজেকে জড়িত রেখে একজন যোগ্য নারী হিসেবে যোগ্য মানুষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছেন। মা যখন ক্ষমতার শীর্ষে তখন সন্তান হিসেবে ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন না হয়ে নিজেকে মানব সেবায় নিয়োজিত করে মায়ের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। পিতা ড.এম ওয়াজেদ মিয়াও ছিলেন মেধাবী সজ্জন মানুষ,পরমাণু বিজ্ঞানী। আমৃত্যু লোভ লালসা থেকে দূরে থেকে দেশের জন্য কাজ করেছেন। সে সবই আজ আশীর্বাদ হিসেবে এসেছেন পুতুলের জীবনে। পঞ্চাশ বছর বয়সী সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে নিজেকে যোগ্য হিসেবে তৈরি করে সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিশ্চয়ই একদিন দেশের জন্য কাজ করবেন। আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নানা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে মা বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখে আগামী বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন সেই প্রত্যাশা সবার। অভিবাদন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
সারাবাংলা/এসবিডিই
মত-দ্বিমত মো. আসাদ উল্লাহ তুষার যোগ্য পিতা-মাতার যোগ্য সন্তান