Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলার মুখপত্র ‘সারাবাংলা’

রফিকুল ইসলাম
৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:০৫

‘পৃথিবীটা পুরো ঘুরে এলো পাক / মনেতে হর্ষ, ফুর্তি /
শোনো শোনো সবে করি হাঁকডাক / আজিকে বর্ষপূর্তি!’

‘সারাবাংলা ডটনেট’ ৭ম বর্ষে পদার্পণ করেছে। মূলধারার মিশ্র নিউজ পোর্টাল এটি। এর ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি নিয়মিত একজন পাঠক ও কলাম লেখক হিসেবে উপরিউক্ত অভিব্যক্তি প্রকাশের মধ্য দিয়ে খানিক আলোকপাতের প্রয়াসী হয়েছি।

‘সারাবাংলা’র পথচলা সত্যিসত্যিই জাতির জন্য আয়না স্বরূপ। যে আয়নায় ভেসে ওঠে জাতির এবং দেশের ও গ্রামবাংলার তৃণমূলের প্রতিচ্ছবি। গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকের অধিকার রক্ষার ভূমিকাসহ তথ্য জগতে এর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করছে।

মানুষ যা জানতে চায়, সেখানেই গণমাধ্যমের ভূমিকা। ফলে নীতিনির্ধারক, আইনসভাসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ ঘটাতে ভূমিকা রাখছে ‘সারাবাংলা’।

স্বাধীন গণমাধ্যম হিসেবে ‘সারাবাংলা’ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের দায়িত্ব পালন করে চলছে। এটি কেবল মানুষকে তথ্য দিচ্ছে না, জনগণকে শিক্ষিত, জনচৈতন্য এবং অসম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জনমতকেও করছে প্রভাবিত।

গণমাধ্যমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন থমাস জেফারসনের কথা এখানে স্মরণ করা যায়। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমাকে যদি এই বিকল্পটি দেওয়া হয় যে তুমি কি সংবাদপত্রবিহীন সরকার চাও, না সরকারবিহীন সংবাদপত্র চাও? তখন আমি পরেরটা বেছে নেব।’

এ কারণে যুগ যুগ ধরে মানুষ সংবাদ, সংবাদপত্র, স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তবে গণমাধ্যম এখন আর আগের পর্যায়ে নেই। তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় গণমাধ্যমে এসেছে আমূল পরিবর্তন। পাশাপাশি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রও এখন আগের চেয়ে অনেক বিস্তৃত।

বিজ্ঞাপন

একটা সময় গণমাধ্যম বলতে পত্রিকা, টেলিভিশনকে বোঝানো হলেও হালে গণমাধ্যম এসবে সীমাবদ্ধ নয়। সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল, আইপি টিভিসহ নানা মাধ্যম।

অনলাইন গণমাধ্যম সাধারণত চারটি মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে থাকে – লেখা, ছবি, অডিও এবং ভিডিও। যা অন্যকোনো গণমাধ্যমে এই সুযোগ নেই বললেই চলে।

এক্ষেত্রে অবশ্য বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ গণমাধ্যমকে ডিজিটালাইজেশন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে অনলাইন সাংবাদিকতায় ‘সারাবাংলা’ এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। অনলাইন সাংবাদিকতা হচ্ছে, হালের সাংবাদিকতার একটি ধরন। যার বিষয়বস্তু কাগজ বা সম্প্রচারের মাধ্যমের বদলে ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়। আর মানুষও সংবাদমুখী বলে তাৎক্ষণিক সবকিছু জানতে চায়। আর এ চাহিদাটি পূরণ করছে অনলাইন গণমাধ্যম ‘সারাবাংলা’। ফলে পাঠকপ্রিয়তায় তুঙ্গে এটি।

মোবাইল ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে বেশ মজবুত। স্বাভাবিকভাবেই অনলাইন নিউজে এর প্রভাব পড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি পড়বে। কেননা দিন দিন বাড়ছে অনলাইন ব্যবহারকারী। মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপে প্রতিদিন বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ নানা প্রয়োজনে অনলাইন ব্রাউজ করছে। এতে দৈনন্দিন এসব কাজের ফাঁকে ঢুঁ মারছে হাতের কাছে পাওয়া অনলাইন নিউজ পোর্টালে।

এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিওগুলোও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিজেদের জন্য আলাদা অনলাইন ওয়েব পোর্টাল খুলছে।

অনলাইন সাংবাদিকতা আসলে পাঠককে সময়ের সঙ্গে চলতে সাহায্য করে। যেকোনো সময় যেকোনো খবর অনলাইন পত্রিকা সবার আগে প্রকাশ করতে পারে। সে কারণে অনলাইন সাংবাদিকতা হচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক। এই সাংবাদিকতা চতুর্মাত্রিক।

বিজ্ঞাপন

এই চতুর্মাত্রিক সাংবাদিকতায় সময় যেহেতু মূল বিবেচ্য বিষয়; সেহেতু অনলাইন সাংবাদিকদের খুব চাপের মধ্যেই কাজ করতে হয়। যেকোনো সংবাদ খুব দ্রুততার সাথে পাঠাতে হয় তাদের। এ কারণে একজন অনলাইন সাংবাদিকের নিউজ সেন্স, টাইপিং স্পিড এবং প্রযুক্তি জ্ঞানের মাত্রা উচ্চতর পর্যায়ে থাকা দরকার।

পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা একটি মননশীল কর্ম। পেশাদারিত্ব এবং সাহসিকতার সাথে যারা এই কর্মে যুক্ত, তারা নানান সময় নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। সেখানে টিকে থাকাটা অনেকটা যুদ্ধের মতো। এই যুদ্ধে একজন সংবাদকর্মীর অস্ত্র হলো কলম।

সেজন্য একজন পেশাদার সাংবাদিককে সৎ ও নিষ্ঠাবান হতে হয়। সে জানে সাংবাদিকতা শুধু জীবিকার মাধ্যম নয়, দেশ-জাতি এবং মানুষ ও মানবতার কল্যাণে সেবার মাধ্যমও বটে। আর সংবাদ যিনি পরিবেশন করবেন তার প্রধানতম কাজই হলো সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করা; নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকা। তার সংবাদ হতে হয় বস্তুনিষ্ঠ, স্বচ্ছ-সুন্দর ও দায়িত্বশীল।

সেই ধারা অব্যাহত রেখে খবরের পেছনের খবর বের করে আনাসহ সংবাদ সম্প্রসারণ, মত-দ্বিমত, মুক্তমত ও সাক্ষাৎকারে সত্য উদঘাটন ও সত্যের বিকাশ ঘটিয়ে চলেছে ‘সারাবাংলা’।

সত্যধারণ অনেক বড় পরীক্ষা। সত্য নিয়ে চলা বড় চ্যালেঞ্জ। বুকের পাটা শক্ত করে সত্যকে বন্ধু বানিয়ে এগিয়ে যেতে হয় আপন মনে। এরজন্য প্রয়োজন পড়ে সাহসের। মিথ্যায় ঢাকা পৃথিবীর কোনো সম্পদই সম্পদ নয়। মিথ্যাশ্রয় কখনোই সংবাদ নয়। যেটুকু সত্য, সেটুকুই সংবাদ। কাজী নজরুল ইসলাম তাই বলেছেন, ‘পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর / বিধির বিধান সত্য হোক।’

মূলধারার এই মিশ্র নিউজ পোর্টালটি যদি এসব বিধি অবলম্বন করে আপসহীনভাবে নিজেদের নীতিনৈতিকতা অটুট রেখে সামনে এগিয়ে যায়, তবে দেশ ও জনগণের মূল প্রবাহ তথা বাংলার অনন্য মুখপত্র হয়ে দাঁড়াবে ‘সারাবাংলা’।

এ পর্যায়ে এ অনলাইন পত্রিকাটি অতিরঞ্জন ও চটুলতায় পাঠকের হাতের তালুতে বসা নয়, সত্যশক্তিতে বলিয়ান হয়ে ও স্বচ্ছতায় অবস্থান পাকা করে নিক পাঠকের আস্থার জায়গাটিতে। আর লক্ষ্য হোক বহু দূর।

তবে, এ পথের পথিক হয়ে এই পেশার কর্মীদের ওপর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের কারণে যখন নির্যাতন নেমে আসে তখন স্বভাবতই মর্মাহত হতে হয়। মনোভাব প্রকাশের শেষ আশ্রয়স্থল যখন প্রভাব প্রতিপত্তি আর ক্ষমতার ওপরওয়ালারদের চাপে কণ্ঠরোধ করা হয় তখন যাওয়ার আর জায়গা থাকে না।

সারাবাংলা’র পথচলার ছয় বছর অবশ্যই একটি মাইলফলক। ভিন্ন এক ধারার আবহ নিয়ে বের হচ্ছে নিয়মিত। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সম্পাদকীয় নীতি, কর্মপ্রচেষ্টা, ত্যাগ, সাহস আর আশার পারদের ওপর ভর করে ‘সারাবাংলা’ এ পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে।

অনলাইন পত্রিকা জগতে সারাবাংলা’র উপস্থিতি হয়েছে সরব। এবার সক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার পালা। সে পথের সন্ধান মিলবে কাজী নজরুল ইসলামের পঙক্তিতে – ‘সত্য যদি হয় ধ্রুব তোর / কর্মে যদি না রয় ছল, / ধর্ম দুগ্ধে না রয় জল, / সত্যের জয় হবেই হবে / আজ না হয় কাল মিলবেই ফল।’

পরিশেষে এ দেশের রাজনীতিহীনতার যে রাজনীতি চর্চা চলছে এর বিরুদ্ধেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখুক এবং শঙ্কাহীন সংবাদ সংগ্রহে প্রতিনিয়ত জানবাজি রেখে লড়ুক ‘সারাবাংলা ডটনেট’।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট, সহযোগী সম্পাদক; আজকের সূর্যোদয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

বাংলার মুখপত্র ‘সারাবাংলা’ মত-দ্বিমত রফিকুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

সিইসি ও ৪ কমিশনারের শপথ আজ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৩

আরো

সম্পর্কিত খবর