Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন মেরুকরণ

রাশিদা চৌধুরী নীলু
১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:৩০

১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। বাঙালি জাতির এই গৌরব সারা বিশ্বের সকল মানুষ অবাক বিষ্ময়ে অবলোকন করে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পতাকাবাহি দালাল, তাদের সকল নেতাকর্মী, ঘৃণিত রাজাকার, আল বদর, আল সামস ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গঠিত পিস কমিটির তথাকথিত নেতারা গা ঢাকা দেন। ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে ফিরে আসছেন- বিবিসি রেডিওতে বিস্তারিত এই সংবাদে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আপামর জনগণ সন্ধ্যার পর সারা বাংলাদেশে আনন্দ উল্লাসে উদ্বেলিত হয়ে রাজপথে, হাটে, মাঠে, ঘাটে সর্বত্র উচ্ছ্বাস করে। এই উচ্ছ্বাস ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয়ের উচ্ছ্বাসের চেয়েও অনেক বেশি বাঁধভাঙ্গা ছিল।

বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং মানব মুক্তির লক্ষ্যে পরিচালিত বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় হলো। শত্রুর কারাগার থেকে দেশে ফিরে এবং দেশকে গৌরবের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ শুরু করলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। বাংলাদেশকে স্বাধীন সত্তায় সমৃদ্ধ করতে, মানবজাতির প্রগতিশীল আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে সংগতি রক্ষা করে আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে পুণ্য ভূমিকা পালন করার উদ্দেশ্যে জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান রচনার উদ্যোগ নিলেন বঙ্গবন্ধু। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয় অর্জনের মাত্র দশ মাস ১৭ দিন পর বাঙালি জাতিকে উপহার দিলেন রাষ্ট্র পরিচালনার পূর্ণাঙ্গ দলিল স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কৃষি উৎপাদনে চরম ব্যাঘাত ঘটায়। ১৯৭২ সালের খরা, ১৯৭৩ সালের বন্যা এর সাথে যোগ হয়, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ ও জ্বালানি সংকট। অর্থনৈতিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে সদ্য স্বাধীন দেশটি। এরই মধ্যে শুরু হয় বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র। এর প্রভাবেই দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ও ব্রিটিশ গবেষক আলেকজান্ডার ওয়াল’ এর ভাষায় “ওই সময় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেয় আর সেটা ছিল হেনরি কিসিঞ্জারের নিষ্ঠুরতম সিদ্ধান্ত।” অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবাহানের “খাদ্য ও দুর্ভিক্ষ” শিরোনাম লিখায় তিনি উল্লেখ করেন “১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে খাদ্য সাহায্য কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। সেই চাপ ছিল এমন একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার জন্য, যার ফসল ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তন।“ তখনকার সময় বাংলাদেশের কৃষি এবং অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিকারক পণ্য ছিল পাট। বাংলাদেশের কাঁচা পাট যেত মূলত পাকিস্তানের জুট মিলস গুলোতে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানে পাট যাওয়া বন্ধ ছিল। এরকম একটা সময়ে কিউবা বাংলাদেশের কাছে পাট চাইলো। খুবই উৎসাহের সাথে কিউবায় বেশ তাড়াতাড়ি পাটের একটা শিপমেন্ট পাঠানো হলো। কিন্তু এই পাট রপ্তানির ঘটনায়, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্নায়ু যুদ্ধে লিপ্ত দুই বৃহৎ শক্তির এক মারাত্মক মূল্য দিতে হয়েছিল। ঢাকায় নিযুক্তিয় ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম কে বললেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইন আছে, কিউবার সঙ্গে বাণিজ্য করলে সে দেশে আমাদের সাহায্য দেওয়ার যাবে না। কিউবার পাঠ রপ্তানি এখনই বন্ধ করতে হবে, নইলে আমরা আপনাদের সাহায্য করবো না।“ এটা ছিল স্বাধীনতা পরবর্তীকালীন বাংলাদেশের খুবই সংকটজনক একটি মুহূর্ত। দেশজুড়ে চরম দুর্ভিক্ষের মধ্যে তখন মার্কিন সরকারের সাহায্য নিয়ে দুটি জাহাজ বাংলাদেশে আসার পথে। পরিকল্পনা কমিশনার এবং সরকার তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসতে থাকা খাদ্য সাহায্য কে গুরুত্ব দিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের কথা মত তড়িঘড়ি করে কিউবায় পাট রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মার্কিন সরকারকে সে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে চিঠিও দেয়া হল। কিন্তু কোন লাভ হলো না। সে সাহায্যের খাদ্য জাহাজ আর এদেশে আসেনি। অনেকের মতে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য রাজনীতি ৭৪’ এর দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশের প্রথম সরকার দেশকে আবার নিজের পায়ে দাঁড় করানোর কাজে বিপুল সমস্যার সম্মুখীন হলো। অর্থনীতি বলতে কিছু ছিল না। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধবস্ত। দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে সরকারকে মুখোমুখি হতে হয় প্রচণ্ড সমস্যার। এসব কারণেই হয়তো বঙ্গবন্ধু ওআইসিতে যোগ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের অনেককে ক্ষমা করে দেওয়ার মতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অনেক কিছুর মাঝে এর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল দেশের পুনর্গঠনের বিশাল কর্মযজ্ঞে সবাইকে শামিল করার জন্য একত্রিত করা। এ উদ্দেশ্যে তিনি ’৭৪-এ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তবে নরহত্যা, নারী ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ অথবা বিস্ফোরকের সাহায্যে ঘরবাড়ি ধ্বংস অথবা জলযান ধ্বংসের অভিযোগে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই সাধারণ ক্ষমা প্রযোজ্য হবে না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, যেসব দালাল স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের হয়ে কাজ করেছে, তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। আমি আশা করি, তারা তাদের কুকীর্তির কথা ভুলে দেশের উন্নয়নের কাজে শামিল হবে।“

সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও ১১ হাজারের বেশি ব্যক্তি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের দায়ে কারাগারে আটক ছিল এবং তাদের বিচার কার্যক্রম চলমান ছিল। ১৯৭৫ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর, ৭২ সালে প্রবর্তিত দালাল আইন বাতিল করে ১১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত যোদ্ধা অপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ভোরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের তখনকার রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তারা একের পর এক চক্রান্তের ফাঁদ পেতেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী উচ্চাভিলাষী কয়েকজন সদস্যকে ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যবহার করেছে ওই চক্রান্তেরই বাস্তব রূপ দিতে। এরাই স্বাধীনতার সূতিকাগার বলে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে হামলা চালায় গভীর রাতে। নৃশংস হত্যাকান্ডের মাধ্যমে মুছে ফেলতে অপপ্রয়াস চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসও। বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যাকান্ড বাঙালি জাতির জন্য করুণ বিয়োগগাথা হলেও ভয়ঙ্কর ওই হত্যাকাণ্ডে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতও হয়েছে নানাভাবে।

১৯৭৬ সালের ৮ জুন ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে অভিযুক্ত হত্যাকারী গোষ্ঠীর ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল
১. লে. কর্নেল শরিফুল হককে (ডালিম) চীনে প্রথম সচিব,
২. লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব,
৩. মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব,
৪. মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব,
৫. মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব,
৬. মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব,
৭. মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব,
৮. মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব,
৯. কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব,
১০. লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব,
১১. লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব,
১২. লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (রেসিডেন্ট পি এ) জনাব আ ফ ম মোহিতুল ইসলাম এর এজাহারে বর্ননানুসারে)

১৯৭৫ সালে তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে কর্মরত ছিলেন। ১৪ আগষ্ট (১৯৭৫) রাত আটটা থেকে ১৫ আগষ্ট সকাল আটটা পর্যন্ত তিনি ডিউটিতে ছিলেন ওই বাড়িতে। ১৪ আগষ্ট রাত বারোটার পর ১৫ আগষ্ট রাত একটায় তিনি তাঁর নির্ধারিত বিছানায় শুতে যান।

মামলার এজাহারে জনাব মোহিতুল উল্লেখ করে বলেন, ‘তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম তা খেয়াল নেই। হঠাৎ টেলিফোন মিস্ত্রি আমাকে উঠিয়ে (জাগিয়ে তুলে) বলেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব আপনাকে ডাকছেন। তখন সময় ভোর সাড়ে চারটা কী পাঁচটা। চারদিকে আকাশ ফর্সা হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু ফোনে আমাকে বললেন, সেরনিয়াতের বাসায় দুষ্কৃতকারী আক্রমণ করেছে। আমি জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করলাম। অনেক চেষ্টার পরও পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাইন পাচ্ছিলাম না। তারপর গণভবন এক্সচেঞ্জে লাইন লাগানোর চেষ্টা করলাম। এরপর বঙ্গবন্ধু ওপর থেকে নিচে নেমে এসে আমার কাছে জানতে চান পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে কেন কেউ ফোন ধরছে না। এসময় আমি ফোন ধরে হ্যালো হ্যালো বলে চিৎকার করছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধু আমার হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বললেন আমি প্রেসিডেন্ট বলছি। এসময় দক্ষিণ দিকের জানালা দিয়ে একঝাঁক গুলি এসে ওই কক্ষের দেয়ালে লাগল। তখন অন্য ফোনে চিফ সিকিউরিটি মহিউদ্দিন কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। গুলির তান্ডবে কাঁচের আঘাতে আমার ডান হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এসময় জানালা দিয়ে অনর্গল গুলি আসা শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শুয়ে পড়েন। আমিও শুয়ে পড়ি।

কিছুক্ষণ পর সাময়িকভাবে গুলিবর্ষণ বন্ধ হলে বঙ্গবন্ধু উঠে দাঁড়ালেন। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। ওপর থেকে কাজের ছেলে সেলিম ওরফে আবদুল বঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবী ও চশমা নিয়ে এলো। পাঞ্জাবী ও চশমা পরে বঙ্গবন্ধু বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) বললেন আর্মি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি এত গুলি চলছে তোমরা কি কর? এসময় শেখ কামাল বলল আর্মি ও পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসুন। কালো পোশাক পরা একদল লোক এসে শেখ কামালের সামনে দাঁড়ালো। আমি (মোহিতুল) ও ডিএসপি নূরুল ইসলাম খান শেখ কামালের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নরুল ইসলাম পেছন দিক থেকে টান দিয়ে আমাকে তার অফিস কক্ষে নিয়ে গেল। আমি ওখান থেকে উঁকি দিয়ে বাইরে দেখতে চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি গুলির শব্দ শুনলাম। এসময় শেখ কামাল গুলি খেয়ে আমার পায়ের কাছে এসে পড়লেন।

মোহিতুল ইসলামের এজাহারের বর্ণনায় বলেন, ‘আক্রমণকারীদের মধ্যে কালো পোশাকধারী ও খাকি পোশাকধারী ছিল। এসময় আবার আমরা গুলির শব্দ শোনার পর দেখি ডিএসপি নূরুল ইসলাম খানের পায়ে গুলি লেগেছে। তখন আমি বুঝতে পারলাম আক্রমণকারীরা আর্মির লোক। হত্যাকান্ডের জন্যই তারা এসেছে। নূরুল ইসলাম যখন আমাদেরকে রুম থেকে বের করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন তখন মেজর বজলুল হুদা এসে আমার চুল টেনে ধরলো। বজলুল হুদা আমাদেরকে নিচে নিয়ে গিয়ে লাইনে দাঁড় করালো। কিছুক্ষণ পর নিচে থেকে আমরা বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শুনলাম। বিকট শব্দে গুলি চলার শব্দ শুনতে পেলাম আমরা। শুনতে পেলাম মেয়েদের আত্মচিৎকার, আহাজারি। এরইমধ্যে শেখ রাসেল ও কাজের মেয়ে রুমাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। রাসেল আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমাকে মারবেনাতো। আমি বললাম না তোমাকে কিছু বলবে না। আমার ধারণা ছিল অতটুকু বাচ্চাকে তারা কিছু বলবে না। কিছুক্ষণ পর রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রুমের মধ্যে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর মেজর বজলুল হুদা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মেজর ফারুককে বলে, অল আর ফিনিশড।’

অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল ফারুক রহমানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি বলেন, খোন্দকার মোশতাকের নির্দেশে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট তিনি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অভিযান পরিচালনা করেন। ওই বাসভবনে অভিযানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল রশিদ দায়িত্ব পালন করেছেন বঙ্গভবনে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর ডালিম ছিলেন বেতার কেন্দ্রে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সামরিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বন্টন করেছেন তিনি (ফারুক) নিজেই।

খুনিদের বাঁচানোর জন্য ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন। সেদিন ছিল শুক্রবার। ‘দি বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটি’ লেখা অধ্যাদেশটিতে খন্দকার মোশতাকের স্বাক্ষর আছে। মোশতাকের স্বাক্ষরের পর আধ্যাদেশে তত্কালীন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ রহমানের স্বাক্ষর আছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন।

অধ্যাদেশটিতে দুটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবত্ আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।

দ্বিতীয় অংশে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো। অর্থাত্ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।

১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ৩ মাসেরও কম সময়ে বীর সেনানী ও ৪ জাতীয় নেতা—সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্টের পর এই ৪ জাতীয় নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ৩রা নভেম্বর, ১৯৭৫ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা জাতীয় এই চার নেতাকে। ফজরের ঠিক আগ মুহূর্তে রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে জাতীয় চার নেতা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণার পর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দিন আহম্মদ, অর্থমন্ত্রী ছিলেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী ছিলেন এইচ এম কামরুজ্জামান। এই সরকারের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জিত হয়। শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, সকল আন্দোলন সংগ্রামে এই চার নেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন। বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুকে যখন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে তখন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে এই চার নেতা আন্দোলন সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতকারী সেনা সমর্থিত চক্রান্তকারীরাই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। এ কাজের জন্য তারা আগে ভাগে ঘাতক দল গঠন করেন। দলের প্রধান ছিলেন রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন। তিনি ফারুকের সবচেয়ে আস্থাভাজন। ১৫ আগস্ট শেখ মনির বাসভবনে যে ঘাতক দলটি হত্যাযজ্ঞ চালায় সেই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুসলেহ উদ্দিন।

প্রখ্যাত সাংবাদিক অ্যানটনি মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ অ্যা লিগ্যাসি অব ব্লাড’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরপরই জেলখানায় জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনাটি এমনভাবে নেওয়া হয়েছিল যাতে পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তা আপনা-আপনি কার্যকর হয়। এ কাজের জন্য ৫ সদস্যের ঘাতক দলও গঠন করা হয়।

ঘাতক দলের প্রতি নির্দেশ ছিল পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কোনো নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তারা জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করবে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর পরেই কেন্দ্রীয় কারাগারে এই জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করা হয়। জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। জেল হত্যার পর দীর্ঘ একুশ বছর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল।

জেল হত্যার পর পদত্যাগ করেন মোশতাক। গৃহবন্দী হন তখনকার সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। ৭ই নভেম্বর জাসদের সমর্থনে পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটায় বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা। নেতৃত্বে ছিলেন কর্নেল তাহের। এর এক পর্যায়ে জাসদ গণবাহিনী ও পাকিস্তান মার্কিন গোপন জোটের সহায়তায় মুক্ত হোন জিয়াউর রহমান। নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক পদে ঘোষণা দেন। পরে আইনি জটিলতা দেখা দিলে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা দিয়ে নিজে উপ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। এ সময় রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত সায়েম কাঠের পুতুল। মূল চালিকাশক্তি সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়া। ২১শে এপ্রিল ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত সায়েম কে হটিয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। প্রায় দেড় বছর পর ১৯৭৭ সালের ৩০শে এপ্রিল, জেনারেল জিয়াউর রহমান তার শাসনকে বেসামরিক করতে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং তার রাষ্ট্রপতি নিয়োগ কে বৈধ করার জন্য গণভোট বা আস্থা ভোটের আয়োজন করেন।

বাংলাদেশ আর্মি এক্টের ২৯২ এবং ২৯৩ বিধিতে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ ছিল, সামরিক বাহিনীর কোন সদস্য তার চাকুরীর মেয়াদ শেষ না হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু চাকুরীরত অবস্থায় জেনারেল জিয়া প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি একাধারে রাষ্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, ও বাহিনীর স্টাফ প্রধানের পর থেকে ১৯৭৮ সালের জুনের ৩ তারিখ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘোষণা দেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অধ্যাদেশ ১৯৭৮ অনুযায়ী কোন সরকারই চাকুরীজীবী ও সরকারি বেতন গ্রহীতার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোন সুযোগ ছিল না। কিন্তু জিয়া রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হলেন।

১৯৭৬ সালের ১৮ই জানুয়ারি পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা কারীদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ফেরত পাবার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আবেদন করতে বলেন জেনারেল জিয়া। ১৯৭৬ সালে ‘Second proclamation order no. 2 of 1976′ জারী করে ধর্ম-ভিত্তিক রাজনীতি করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের শর্তাদি তুলে দেয়া হয়। এছাড়াও ‘proclamation order no. 1 of 1977′ দ্বারা সংবিধানের ১২২ নং অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে দালালদের ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতার কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ, জামায়েত ইসলাম, পিডিপি, নিজামে ইসলামসহ অপরাপর নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলসমূহকে রাজনীতি করার ব্যবস্থা করে দেন জেনারেল জিয়া।

১৯৭৭ সালের ১৫ই ডিসেম্বর জিয়াউর রহমান তার ৯৫ মিনিটের বেতার ভাষনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি ফ্রন্ট গঠনের ঘোষণার কথা বলেন। পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন জেনারেল জিয়া। তবে এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন উপ-রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে অন্যান্য দলের সমন্বয়ে গঠন করেন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট। ১৯৭৮ সালের ২৮ এপ্রিল জিয়া নিজেই লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেন নিজেকে। এরপর ১লা মে জিয়াকে চেয়ারম্যান করে ৬ দলের জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। ২৮ শে আগস্ট বিচারপতি সাত্তার ফ্রন্টের অন্যতম শরিক জাগোদল বিলুপ্তির ঘোষণা করেন। ৩০শে আগস্ট বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নামে আইন মন্ত্রণালয় অনুমোদনের আবেদন জানিয়ে ঘোষণাপত্র গঠনতন্ত্র ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র জমা দেয়া হয়। ৩১ আগস্ট বিএনপি সরকারি অনুমোদন পায়। ১৯৭৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর ঢাকা রমনা রেস্তোরাঁ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান বিএনপি’র প্রধান হিসেবে দলের নাম গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। ওই দিনই শাহ আজিজুর রহমান মুসলিম লীগের একটি অংশ নিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি সেই দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “রাষ্ট্রপতির প্রস্তাবিত দলের ঘোষণা পত্র ও গঠনতন্ত্রে আমাদের দলের আদর্শগত ধ্যান ধারণা যথেষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে।’

উল্লেখ্য যে, ছাত্রনেতা হিসেবে শাহ আজিজুর রহমান ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মুসলিম লীগের আন্দোলনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, শাহ আজিজুর রহমান পাকিস্তানকে সমর্থন দেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করেন। নভেম্বর, ১৯৭১ সালে তিনি জাতিসংঘের পাকিস্তানি কূটনৈতিক নেতৃত্ব দেন এবং বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার কথা অস্বীকার করেন। তিনি অন্যান্য মুসলিম দেশকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিতে আহ্বান জানান। ১৯৭৩ সালে দালাল আইনে শাহ আজিজুর রহমান গ্রেফতার হন ওই বছরই শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে যোগ দেয়ার পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী দল গঠিত হলে, তিনি এই দলের সর্বাধিক প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের বিএনপি সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।

স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিকে যখন থেকে এই দেশে রাজনীতি করার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে, তখন থেকেই তারা এই শাহ আজিজুর রহমান ও স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীদের সাথে একাত্ম হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে অধিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং কখনো কখনো সফলও হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র কখনো চায়নি, স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হতে চায়নি। স্বাধীন ও সার্বভৌম এই সোনার বাংলাদেশে রাজনীতি করার কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনা করার নৈতিক অধিকার কি তাদের আছে? স্বাধীনতা বিরোধিতাকারীদের এদেশে রাজনীতি করার ব্যবস্থা যারা আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করে দিলো এবং স্বাধীনতা বিরোধিতাকারীদের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা বিভিন্ন সময়ে তুলে দিলো, তাদের কি এই জাতি আদৌ ক্ষমা করবে? নতুন প্রজন্মের মনে এই প্রশ্নগুলো প্রতিনিয়ত বিরাজমান।

লেখক এডভোকেট, আপিল বিভাগ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

১৫ আগস্ট ১৯৭৫: বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন মেরুকরণ মত-দ্বিমত রাশিদা চৌধুরী নীলু

বিজ্ঞাপন

ফের দাপট দেখালেন সাকিব
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০৪

আরো

সম্পর্কিত খবর