নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিন
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:১৫
বাংলাদেশে নির্বাচন ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পন্থা। ঐতিহ্যগতভাবেই আমরা এই পন্থাটিকে আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করি। ফলে ‘নির্বাচন’ এবং ‘উৎসব’ শব্দ দুটির মেলবন্ধন ঘটেছে ‘নির্বাচন উৎসব’ শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে। যা আমাদের পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় জীবনে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছ। মোটকথা নির্বাচন ক্ষমতার পরিবর্তনের পাশাপাশি আমাদের আনন্দেরও অংশ হয়ে উঠেছে। তাই নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পছন্দের দল, প্রার্থী নিয়ে গণমানুষের মধ্যে উৎসব উৎসব আমেজ বিরাজ করে।
এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও এর ব্যতিক্রম নয়। যদিও দেশের অন্যতম একটি বড় দলসহ বেশ কিছু ছোট রাজনৈতিক দল সংবিধানের বাইরে গিয়ে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকার ফলে নির্বাচনের ট্রেনে উঠতে পারেনি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে নির্দিষ্ট সময়েই অর্থাৎ আগামী ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ সনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের আপামর জনতার মধ্যে এই আয়োজনকে ঘিরে প্রতিনিয়ত নানা আলোচনা, সমালোচনা এবং উৎসব দেখা যাচ্ছে। সংবাদপত্র থেকে শুরু করে পাড়ার চায়ের দোকান হাট বাজার এমন কী আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশের একমাত্র আলোচনার বিষয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। যদিও এই নির্বাচনে ভোটবর্জনকারী দলসমূহ অংশগ্রহণ করলে আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো পরিবেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে নতুন দিনের রাজনীতি, নতুন বিশ্ব পরিস্থিতি বর্জনকারী দলগুলো অনুধাবন করতে পারেনি। ফলে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ট্রেনে তারা যাত্রী হতে পারেননি।
নির্বাচনে কেউ না এলে আদর করে আনা যায় না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা বর্জন রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এটাও একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে একই সঙ্গে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পদ্ধতি বজায় রাখা প্রত্যেকের নাগরিক দায়িত্ব। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও আনন্দ রয়েছে।
জনগণের আনন্দ উচ্ছ্বাস কিংবা বিপুল সংখ্যক ভোটার উপস্থিতির আড়ালে যেন গণতন্ত্রের মূল চেতনা যাতে ব্যহত না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি। কেননা জাতীয় নির্বাচন এলেই ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে কালো টাকার বিষয়টি। যদিও নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব কমাতে সবসময়ই তাগিদ দেন অর্থনীতি ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা। কিন্তু সে তাগিদ শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় না। প্রার্থী মনোনয়ন থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে কালো টাকা। এমনকি মাঠ পর্যায়ে পেশিশক্তির উত্থানেরও অন্যতম নিয়ামক কালো টাকা। যার ফলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যায়।
এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঠিক একইভাবে আলোচনায় আসছে কালো টাকার বিষয়টি। কেননা এবারের নির্বাচনেও অবৈধ পথে টাকার পাহাড় গড়ে তোলা বহু ব্যক্তি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে হাজির হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে ঐসব প্রার্থী বিপুল পরিমাণ কালো টাকা বিতরণ করে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ভোটারদের প্রভাবিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা নির্বাচন আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং সুষ্ঠু ভোটের অন্তরায়।
আমরা মনে করি, নির্বাচনী আইনে যে পরিমাণ টাকা ব্যয়ের বিধান রয়েছে, সেটা যেন হয়, নির্বাচন কমিশনকে তা নিশ্চিত করতে হবে। রঙিন পোস্টার করা যাবে না। ট্রান্সপোর্ট দিয়ে ভোটারদের আনা নেওয়া করা যাবে না। রাতের অন্ধকারে টাকা লেনদেন নিষিদ্ধ। এমন নিয়মগুলো কাগজে-কলমে না রেখে বাস্তবায়ন করা জরুরি। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিটকে আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন।
নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব কমাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা বৃদ্ধি আবশ্যক। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে ব্যাংকগুলোতে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে নজরদারি জোরদার, বিশেষ করে যেসকল আসনে কালো টাকা ব্যবহারের ঝুঁকি বেশি রয়েছে, সেসব আসনগুলোতে নির্বাচনের চার দিন পূর্বে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ সকল প্রকার মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বন্ধ রাখতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে পেশিশক্তির উত্থান ও সহিংসতা ঠেকাতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করারও জোর দাবি জানাচ্ছি।
আমাদের মনে রাখতে হবে- নির্বাচনে জনগণের দায়িত্ব সচেতনভাবে তাদের কল্যাণের জন্য যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা। একই সঙ্গে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে জনগণকে সুযোগ তৈরির পরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার সেই পরিবেশকে প্রভাবিত করে। আখেরে গণতন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে। আমরা আশা করব- দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কালো টাকার ব্যবহার রোধে সমস্ত প্রতিষ্ঠান নজরদারি বাড়াবে। একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই- কালো টাকার মালিকগণ অর্থনীতির শত্রু, দেশের শত্রু, গণমানুষের শত্রু, এমন কী গণতন্ত্রেরও শত্রু। তাদের রুখতে না পারলে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা যাবে না। ব্যহত হবে সোনার বাংলার অগ্রগতি ও অর্জন।
লেখক: সংসদ সদস্য এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী
সারাবাংলা/এসবিডিই
নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিন মত-দ্বিমত র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী