Monday 14 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

মাহমুদুল হাসান শামীম
১২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:১৫

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার সিটি কলেজ সেন্টারে ভোট দেয়ার পর গণমাধ্যমের সামনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “জনগণের কাছে আমার জবাবদিহিতা আছে। জনগণের কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হচ্ছে কিনা সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। জনগণই আমাদের প্রধান শক্তি। তারা সব বাধা মোকাবিলা করে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করেছেন। কোন দল নির্বাচন গ্রহণ করলো বা করলো না অথবা বিদেশিরা কী বলছে তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।’’ পরের দিন ৮ জানুয়ারি গণভবনে বিদেশী পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়ও প্রায় একই কথা বলেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এটি বাস্তবতার একটি দিক। একটি বড় দল ও তাদের সমমনা কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারপরও নিবন্ধিত ৪৪ দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ২৯৯টি আসনে প্রার্থী ছিলেন ১৯৭০ জন এবং নানা প্রতিকূলতা সত্বেও ৪১,৮% ভোটার ভোট দিয়েছেন। ফলে এই বাস্তবাতাকে অস্বীকার করা যাবে না যে জনগণের কাছে এ নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

তবে বাস্তবতার আরেকটি দিক হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনটি স্বীকৃতি পায় কিনা, গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করে কিনা সেটিও বিবেচনায় নিতে হয়। এই নির্বাচন নিয়ে দেশের ভেতরে যেমন বিভক্তি ছিল তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও দুটি ভাগ ছিল। নির্বাচন পরবর্তী বিভিন্ন দেশ ও জোটের প্রতিক্রিয়াতেও তার রেশ ছিল। বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম ও সমমনা দেশগুলো নির্বাচন সুষ্টু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, অবাধ হয়েছে বলে স্বীকৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে। আবার যে দেশগুলো নির্বাচনের আগে নানান ইস্যুতে সরকারের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছিল তারা খানিকটা সময় নিয়ে নির্বাচনে বড় একটি দলের অনুপস্থিতি এবং বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা উল্লেখ করে নির্বাচনটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হয়নি এমন প্রতিক্রিয়া জানায়নি একটি দেশও।

এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেতে ৩৪টি দেশ ও সংস্থার ১২৭ জন পর্যবেক্ষক ও ৭৬ জন সাংবাদিক বাংলাদেশে এসেছিলেন। তারা ৭ জানুয়ারি সারাদিনই নির্বাচন পর্যবেক্ষণের মাঝে মাঝে গণমাধ্যমকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন । নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তাদের পর্যবেক্ষণের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সার্বিকভাবে সবাই সুষ্ঠু, সুন্দর,অবাধ, নিরপেক্ষ, এবং উঁচু মাত্রার পেশাদারিত্বের সঙ্গে আয়োজন করা হয়েছে বলে নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন। অর্থাৎ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসা পর্যবেক্ষকদের কাছে নির্বাচনটি আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের অভিনন্দন

নির্বাচনের পরের দিনই চীন, রাশিয়া ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুরসহ ১১টি দেশের রাষ্ট্রদূত গণভবনে গিয়ে প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জয়ের জন্য এবং সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জানান। এর পরের দিন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরো ১৯টি দেশ থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, মালয়েশিয়া, মিসর, আলজেরিয়া, কুয়েত, লিবিয়া, ইরান, ইরাক, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতেরা প্রধানমন্ত্রীকে গণভবনে গিয়ে অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্রদূতরা নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অভিনন্দন বার্তা শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেন। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের সঙ্গে নিজ নিজ দেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

মার্কিন বলয়ের শক্তিশালী দেশ জার্মানিও এই নির্বাচনের প্রশংসা করেছে। ৯ জানুয়ারি বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোসটার বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় আমরা খুশি। বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে নতুন বছরে আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকব। জার্মান রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির উন্নয়ন সহযোগিতা আগামী দিনে আরও বাড়বে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

ওআইসি ও কমনওয়েলথের অভিনন্দন

দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো হয় ওআইসি ও কমনওয়েলথের পক্ষ থেকেও। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আশা প্রকাশ করা হয় যে আগামী দিনগুলোতে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আরো ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ওআইসির দেশগুলোর কাজ করার জোরালো অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কেসি। অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার নির্বাচনী বিজয়ের জন্য আমার অভিনন্দন। কমনওয়েলথ সচিবালয় জাতীয় অগ্রাধিকার অর্জনে বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত এবং বাংলাদেশের জনগণ ও কমনওয়েলথ পরিবারের সকল সদস্যের জন্য শেখ হাসিনার সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ।’’

নরেন্দ্র মোদির ফোন ও চিঠি

অনুমিতভাবেই সবার আগে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে ও চিঠিতে অভিনন্দন জানান তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি এবং টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে ইতিহাস সৃষ্টির জন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সফলভাবে সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য তার দেশের জনগণকেও অভিনন্দন জানিয়েছি। বাংলাদেশের সঙ্গে জনগণকে কেন্দ্রে রেখে যে অংশীদারত্ব, তা আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’ নরেন্দ্র মোদি দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ভারত বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

স্বাগত জানিয়ে জাপানের বিবৃতি

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাপান। ১০ জানুয়ারি জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস সচিব কোবায়শিমাকি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কিছু অনিয়মের খবর পাওয়া গেলেও সার্বিকভাবে নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণ হওয়াকে জাপান স্বাগত জানিয়েছে।’

বিবৃতিতে কোবায়শিমাকি বলেন ‘গত ৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে জাপান পর্যবেক্ষক মিশন পাঠিয়েছিল। বাংলাদেশে জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়াতানাবে মাসাতোর নেতৃত্বে ওই মিশনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় জাপান দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছিলেন। এর পাশাপাশি বাইরের একজন বিশেষজ্ঞ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। আমাদের মিশন যতটা পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছে তাতে দেখা গেছে, প্রক্রিয়া অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনায় আমরা দুঃখিত।’ জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের কৌশলগত মিত্র হিসেবে জাপান আশা করে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আরও উন্নতির প্রচেষ্টায় অগ্রগতি সাধন করবে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে জাপান বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।

চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন বার্তা

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। অভিনন্দন বার্তায় শি জিনপিং বলেছেন – কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বিগত ৪৯ বছরে চীন ও বাংলাদেশ পারস্পরিক সহযোগিতা, বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখেছে। ‍দুই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ক্ষেত্রে চীন-বাংলাদেশ পরস্পরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে আসছে, যা দুই দেশের জনগণের উন্নতির পথ আরও সুগম হয়েছে।

চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে রাজনৈতিকভাবে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি, ঐতিহ্যগত এ বন্ধুত্বকে আরও উন্নীত করা, উন্নয়ন কৌশলগুলোকে আরও সমন্বিত করা ও উচ্চ মানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতায় উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন চীনা প্রেসিডেন্ট।

একই দিন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংও অভিনন্দন জানিয়েছেন শেখ হাসিনাকে। পৃথক এক বিবৃতিতে লি বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এবং উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতাকে আরও উন্নীত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কাজ করতে প্রস্তুত চীন। এতে দুই দেশের জনগণ আরও অধিক লাভবান হবে বলে আশাবাদী চীনা প্রধানমন্ত্রী।’

বাংলাদেশের প্রধান তিন উন্নয়সহযোগী দেশ ভারত, জাপান, চীন তাদের পর্যবেক্ষক মিশন ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের পর অফিসিয়ালি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদদের নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলি প্রতিক্রিয়া

নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা সরকারের উপর যে রাষ্ট্রটি সবচেয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করেছিল সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্র। তাদের এই ভুমিকার জন্য ভিসানীতি ও স্যাংশানের ভয়ভীতি দেখিয়েছে অনেকেই। তাই যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন নিয়ে কি মূল্যায়ন করে তা জানতে আগ্রহ ছিল সবার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে নির্বাচন নিয়ে যে বিবৃতিটি দেয়া হয়েছে সেটি খুবই কৌশলি। নির্বাচন প্রত্যাখানের কোন কথা নেই। নির্বাচন গ্রহনযোগ্য হয় নি এটিও বলেনি তারা। বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বড় দল অংশ না নেয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে। আবার বলেছে –“যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামি লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করেছে।” এই বাক্যের মধ্য দিয়ে তারা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়কে স্বীকার করে নিয়েছে।

আবার বিবৃতিতে নির্বাচনের সময়ে এবং এর আগের মাসগুলোতে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব সহিংসতার গ্রহণযোগ্য তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই আহ্বানটি কোন সরকারের কাছে। নিশ্চয়ই ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৈরি নতুন সরকারের কাছে। এর মাধ্যমেও নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়ার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে।

আবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ইন্দো–প্যাসিফিক) অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করা, বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এই কাজ করার প্রতিশ্রুতির বাংলাদেশের নির্বাচন ও নতুন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের মেনে নেয়ার ইঙ্গিত।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভিন্ন কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার কথা নয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের। ইউরোপের ২৭ দেশের এই জোটের বিবৃতিতে নির্বাচনে বড় দলগুলো অংশ না নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মতোই হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়— গত রোববার (৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ফলাফলও প্রকাশ হয়েছে। এতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চারবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়নি বললেও নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য বলেনি বা প্রত্যাখ্যান করেনি ইইউ। তারাও সহিংসতার নিন্দা করেছে এবং সবাইকে এই পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। মানবাধিকার, নাগরিক সমাজ, সুশাসন এসব নিয়ে নির্বাচনের আগে যা বলেছে তাই আবার বলেছে বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে- রাজনীতি, মানবাধিকার, বাণিজ্য ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক যেসব অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, সেগুলো নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে ইইউ। এর মধ্যে আগামীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি প্লাসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও রয়েছে।

দেখা যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোন কোন দেশ বা জোটের ভিন্ন মত থাকলেও নির্বাচনটি অগ্রহণযোগ্য এটি কেউই বলেনি বা প্রত্যাখানের প্রতিক্রিয়াও জানায়নি। বরং সব দেশ বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করে নির্বাচন ও নতুন সরকারকে মেনে নিয়েছে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও সংবাদ বিশ্লেষক

সারাবাংলা/এজেডএস

নির্বাচনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মাহমুদুল হাসান শামীম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর