Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন, বিশ্বনেতাদের উষ্ণ অভিনন্দন

তাপস হালদার
২২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:০৯

দেশরত্ন শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ বার সহ পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন। এমন অনন্য দৃষ্টান্ত বর্তমান সময়ে বিশ্বের আর কোনো সরকার প্রধানের নেই। গণতান্ত্রিক পন্থায় তিনিই দীর্ঘ সময়ে সরকার প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম কোনো নারী প্রধানমন্ত্রী। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে তিনি ইতিহাসের অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন।

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১০জানুয়ারি নবনির্বাচিত সাংসদগণ ও ১১ জানুয়ারি মন্ত্রীসভার সদস্যগণ শপথ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পঞ্চম মেয়াদে সরকার পরিচালনার যাত্রা শুরু হয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত ৪২ দলের মধ্যে ২৮ দল অংশগ্রহণ করে। মোট ১ হাজার ৯৭১ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন তারমধ্যে ৪৩৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি ১টি করে আসনে বিজয়ী হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের ভোট বর্জন ও আগুন সন্ত্রাসের পরও প্রায় বিয়াল্লিশ শতাংশ ভোটার ভোট প্রদান করেছে। ভোট প্রদান শতাংশ হারের হিসেবে কম মনে হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় এই হার নেহাত কমও নয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রায় দুইশো জন বিদেশি পর্যবেক্ষক সহ তিন হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাদের প্রত্যেকেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অষ্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও জাপানের পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনের পর দিন জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে যৌথ প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উপস্থিত সকল পর্যবেক্ষক একমত যে, বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা যেসব কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণ করেছি সেখানে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পেয়েছি, ভোট দেওয়ার পথে তাদের কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা দল দ্বারা ভোটারদের কোনো ভয়ভীতি দেখানো হয়নি। এটা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য ভালো ইঙ্গিত।’

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করার পর থেকেই দলীয় সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান বিশ্বনেতারা। নির্বাচনের পরদিনই ৮ জানুয়ারি ভারত, রাশিয়া, চীন, ভুটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কাসহ ১১ টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা গণভবনে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে যান। তারপরের দিন আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের ১৯ টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা গণভবনে গিয়ে অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্রদূতগণ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করায় দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্ব স্ব দেশের পক্ষে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। এবং বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভারত যেমন প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, এবারও ভারতই প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে ফোন করেন।

৮ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি অভিনন্দন বার্তায় বলেন, আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি এবং টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে সফলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করায় বাংলাদেশের জনগণকে অভিবাদন জানাই। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের স্থায়ী এবং জনকেন্দ্রিক অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ এরপর থেকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের কাছ থেকে শুধু অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বার্তা আসছে। যা এখনও চলমান রয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক টেলিগ্রাম বার্তায় অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন, ঐতিহ্যগত ভাবেই বন্ধুত্বের চেতনায় রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক এগিয়ে যাচ্ছে। আপনার সরকার প্রধান হিসেবে সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।

আরেক সুপার পাওয়ার চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিং পিং অভিনন্দন বার্তায় বলেছেন, চীন ও বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের প্রতিবেশী। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দুই দেশ সব সময় পরস্পরকে সম্মান করেছে। একে অপরের সঙ্গে সমতার সঙ্গে চলেছে। দুই দেশ একে অপরের সঙ্গে সমতার সঙ্গে চলেছে এবং পারস্পরিক সুবিধা ও লাভজনক ফলাফল অর্জন করেছে। দুই দেশ পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা বৃদ্ধি, ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বকে আরো উন্নত করবে এবং উন্নয়ন কৌশলগুলোকে আরো সমন্বিত ও প্রসার করবে।

কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড অভিনন্দন বার্তায় বলেছেন, ‘কমনওয়েলথ সচিবালয় আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনাকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। আপনি আপনার নতুন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করার সঙ্গে সঙ্গে অনুগ্রহ করে আমার উষ্ণ অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আমি আপনাকে লন্ডনের মার্লবোরো হাউসে স্বাগত জানাতে এবং সামোয়াতে ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য সপ্তাহব্যাপী পরবর্তী সরকার প্রধানদের বৈঠকে আপনার সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষায় রয়েছি।’

জাতিসংঘ কিছুদিন নিরব থাকলেও গত ১৮ জানুয়ারি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনি গুতেরেস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে মহাসচিব বলেছেন, ‘পুনরায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। জাতিসংঘ বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা সম্পর্ককে গভীরভাবে মূল্যায়ন করে। যার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি উদারতা এবং একটি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা। গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপে আপনার উপস্থিতি ও আপনার ওপর থাকা বিশ্বাসকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমি আশা করতে পারি, বৈশ্বিক সমস্যা গুলোতে আপনাকে পূর্বের ন্যায় পাব। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে জাতিসংঘ আপনার সরকারের সাথে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।’ এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক সহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিগণও সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের বিচারে নির্বাচনের সমালোচনা করলেও আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়কে অস্বীকার করতে পারছে না। এজন্যই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচনের আগে বিএনপির ত্রাতার ভূমিকায় পরিনত হয়েছিল। নির্বাচন বন্ধে জোড়ালো চেষ্টা করেছিল, তিনিও নির্বাচনের পর মন্ত্রীদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দেখা করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয়ে পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সকল দেশই অভিনন্দন জানিয়েছে। ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, মিশর, আলজেরিয়া, কুয়েত, লিবিয়া, ইরান, ইরাক, ওমান, কাতার, সৌদিআরব, ফিলিস্তিন, মরক্কো, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ইতালি, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, তুরস্ক সহ অসংখ্য দেশ। এক্ষেত্রে কেউই বাদ নেই। এর মধ্যে অনেক দেশ আছে যাদের মধ্যে বৈরিতা আছে। কিন্তু শেখ হাসিনার প্রশ্নে সবাই এক। এটাই শেখ হাসিনার কূটনৈতিক ক্যারিশমা।

প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এখন গ্লোবাল লিডার।

পশ্চিমা দু-একটি দেশ চাইলেই শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অস্বীকার করতে পারে না। বরং উন্নয়নশীল দেশের রোল মডেলের হিসেবে তাঁকেই স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, দারিদ্র্য বিমোচন, আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসার, জঙ্গি দমন, মানবিক সংকটে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গুন সারা বিশ্বেই সমাদৃত।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়। ’এই ভারসাম্যপূর্ণ নীতির কারণে ভারত, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান সবার সাথে সুসম্পর্ক গড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কবল থেকে দেশকে বের করে এনেছেন। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক সহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখেছেন। বাংলাদেশ এখন কৌশলগত গুরুত্ব ও ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি সম্ভাবনাময় দেশে পরিনত হয়েছে। যার কৃতিত্ব একমাত্র শেখ হাসিনার। যার কারণে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনে বিশ্ব নেতারা একযোগে উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছেন। বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং যর্থার্থই বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। ’

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

সারাবাংলা/এসবিডিই

তাপস হালদার মত-দ্বিমত শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর