সবুজ এক দেশের স্বপ্নে
২০ মার্চ ২০২৪ ১৩:৩২
দিন দিন পরিবেশ বিপর্যয় যেভাবে বাড়ছে, মানুষের সচেতনতা ছাড়া বিকল্প কিছু নাই। ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে পরিবেশ সুরক্ষার বিকল্প নেই। বিষয়টি অনুধাবন করেই বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্টের (Green Environment Movement) জন্ম। আজ সংগঠনটির ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পরিবেশবাদী এই সংগঠন ২০১৮ সালের ২০ মার্চ জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে দেশের বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিকে আত্মপ্রকাশ করে।
এই স্বাধীনতার মাসেই প্রতিষ্ঠিত হয় পরিবেশ সুরক্ষার এই আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। এই মাসেই শপথ নিয়েছিলেন এব ঝাঁক তরুণ। শপথ নিয়েছিলেন দেশকে সবুজে আচ্ছাদিত করবেন। দেশের মানুষকে পরিবেশ সচেতন করে তুলবেন। সেই লক্ষকে সামনে নিয়ে পথচলায় বর্তমানে সারাদেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও কমিটি গঠনের মাধ্যমে তৃণমূলে পবিবেশ সচেতনতার বার্তা পৌছে দিচ্ছে সংগঠনটি।
সংগঠনটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছিলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে ত্রিশ লাখ বাঙালি শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে আমরা একটি করে গাছ লাগাতে পারি। প্রতিটি গাছই হবে আমাদের স্মৃতির মিনার। এতে করে মানুষ, প্রকৃতি ও পরিবেশ আরও টেকসই হবে।” সংগঠনটি সারাদেশে লক্ষ লক্ষ ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগিয়ে সেই কাজটিই করে যাচ্ছে নিয়মিত।
এ কথা ঠিক যে, মানুষের প্রয়োজনে নতুন নতুন পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত শহর ও বন্দর গড়ে উঠছে, বাড়ছে শিল্পায়ন। আর নীরবে কাঁদছে প্রকৃতি। বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে, জলাশয় দূষণের কবলে পড়ছে। এভাবে আমরা বারবার আহত করছি পৃথিবীকে। আমরা প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছি বিভিন্নভাবে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানা সুধিসমাজ নিয়ে নানা সভা সেমিনার করে যাচ্ছে গ্রীন এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্ট। সংগঠনটি মনে করে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে পারলে পুরো পরিবারকে পরিবেশ সচেতন করা যাবে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক পরিবেশ বিষয়ক অনুষ্ঠান ও গাছ বিতরণ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে সংগঠনটি নিয়মিত। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সংগঠনটির কমিটির মাধ্যমে এই কাজটি করা হচ্ছে নিয়মিত।
মানুষের চাহিদার যোগান দিতে আজ পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে আর তার দায় থেকে আমাদের কাজ করে যাওয়া। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্যের সমারোহ। অন্যদিকে আমাদের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্য দিয়েছে। অথচ দেশে অনেক প্রাকৃতিক ও জৈবিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকে যায়- এই জীববৈচিত্র্য রক্ষাবেক্ষণের জন্য আমরা কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছি? গ্রীন এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্ট জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে সচেতনতার কাজটি করে যাচ্ছে।
সংগঠনটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “নদী, মাটি, বায়ু, শব্দসহ সব ক্ষেত্রই পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। শিল্প কারখানার বজ্য ইটভাটার মাধ্যমে দুষন হচ্ছে অহরহ। নিষিদ্ধ পলিথিন গ্রামে গঞ্জে, শহরে মানুষের হাতে হাতে।” দেলোয়ার হোসেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশের উপর চ্যাম্পিয়নস অব আর্থ পুরস্কার পেয়েছেন, আর আমরা কি করছি? পরিবেশ রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, গ্রীন এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্ট আমরা প্রতিষ্ঠা করি জনসাধারণের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা আনয়নে, দেশকে সবুজায়নে আচ্ছাদিত করতে, দেশের মানুষের বিবেকবোধ জাগ্রত করতে। পরিবেশকে সুন্দর রাখতে হলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
মহামারি করোনার সময়ও থেমে ছিল না এই সংগঠনটি। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার কাজটি করে গেছে নিয়মিত। মসজিদ, মন্দির, গির্জায়ও নিয়মিত গাছ লাগানো হচ্ছে। ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যেমেও মানুষকে সচেতনতার কাজটি করানো হচ্ছে। জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে নিয়মিত সভা, সেমিনার আয়োজন করে পরিবেশ দূষণের নানা দিক আলোচনায় এনে দাবিসমূহ পেশ করা হচ্ছে।
একথা অনস্বীকার্য যে, সবুজ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে মনের সবুজায়নটাও এখন জরুরি। সেটা না হলে পরিবেশকে আমরা রক্ষা করতে পারব না। একই সাথে পরিবেশ ঠিক রাখতে হলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। সবুজ পরিবেশের এই আন্দোলন আরও বেগবান হোক। পরিবেশ সুরক্ষায় দেশের সকল স্তরের মানুষের বিবেকবোধ জাগ্রত হোক। পরিবেশ সুরক্ষার এই আন্দোলন আরও বেগবান হোক। সুরক্ষিত হোক পরিবেশ। গ্রীন এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্ট তাদের ব্যতিক্রমী কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যাক।
শুভ জন্মদিন গ্রীন এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্ট!
সফিউল আযম: সাংবাদিক ও সমাজসেবা সম্পাদক, গ্রীন এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটি
সারাবাংলা/এসবিডিই