Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিঃসঙ্গতা, সম্পর্কের অবিশ্বাস ও একটি স্ন্যাপশট

হাবীব ইমন
৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:২৩

এক.

রবীন্দ্রনাথের মতো অনেক কবির কাছে মৃত্যু একটি রোমান্টিক ব্যাপার। মার্কিন কবি অ্যান সেক্সটন যে কাব্যের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন, তার নামই ছিল ‘বাঁচো অথবা মরো’। দীর্ঘকাল ধরে চলা আবেগতাড়িত হতাশা আর মানসিক যন্ত্রণা থেকে লেখা কবিতা ‘মৃত্যুবরণ করতে চাই’-এ বলেন, ‘মৃত্যু আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে’। এ কবিতা লেখার কিছুদিন পরই অ্যান সেক্সটন ৪৫ বছর বয়সে জীবনের ইতি টানেন।

মাত্র ২০ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান।’ তার কাছে মৃত্যু ছিল একটি রোমান্টিক ধারণার মতো। তিনি যেন অধীর আগ্রহে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন। বস্তুত, মৃত্যু মানে কী অথবা জীবনের ওপারে কী আছে, তা দেখার জন্য ব্যাকুল ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেজন্যই ডাক্তাররা যখন দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের প্রস্তাব করলেন, তিনি রাজি হলেন না। বললেন, ‘আমার ডাক এসে গেছে।’ ক্রিটিক বলছেন, তিনি যেন ওপারে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছেন।

১৯৪১ সালে এক সাহিত্য সভায় কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘…আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।’ পরের বছরই নজরুল চিরকালের মতো অসুস্থ পড়েন। আর কখনো তিনি কোনো কিছু লিখতে পারেননি।

স্বাভাবিক মৃত্যুর পরিবর্তে যারা আত্মহননকে বেছে নেন, তারা মনে করেন, ‘এ পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য।’ প্রতিভাধর ও সৃষ্টিশীল যেসব মানুষ আত্মহত্যা করেছেন, তাদের সবাই পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করে যান, কেউ লেখে আবার কেউ’বা না লেখে। তাদের মধ্যে যাদের জগৎজোড়া খ্যাতি ছিল, তারা হলেন রাশিয়ার কবি মায়োকভস্কি, ব্রিটিশ লেখক ভার্জিনিয়া উলফ আর মার্কিন উপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে।

বিজ্ঞাপন

দুই.

কিছুদিন আগে একটা ছোট্ট নোটে লিখেছিলাম, ‘পৃথিবীটা অনেক সুন্দর।’ কিন্তু এ সুন্দর পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে যারা চিরকালই বসবাসের অযোগ্য। কিংবা কুৎসিত। তাদের বেঁচে থাকাটা অনেকটাই পরজীবীর মতো। এ সমাজের মানুষগুলো তাদেরকে সেই দৃষ্টিতে নিয়ে যায়। তার দায় সমাজের ও রাষ্ট্রের, সমাজে বসবাসরত সব মানুষের? এটা হয়ত তত্ত্বগত জায়গায় ঠিক। পারিপাশির্^কতা তা বলে না। বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ মানুষের মনে সীমাহীন অভিঘাত তৈরি করে, যা একসময় মানুষকে আত্মহননে প্ররোচিত করে। কার্ল মার্কসের পুঁজিবাদের সংজ্ঞার মধ্যেই ‘শোষণ’ শব্দটি বহুলভাবে আছে। পুঁজিবাদী তাত্ত্বিকেরাও, এই ব্যবস্থায় যে শোষণ হয়, অস্বীকার করেন না। কেননা, মার্কসের ‘থিওরি অব সারপ্লাস ভ্যালু’ গাণিতিক প্রমাণসিদ্ধ। বাংলাদেশে যে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তাও শোষণমূলক ও পক্ষপাতদুষ্ট।

বিচ্ছিন্নতা ও নিঃসঙ্গতা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা হলে পরে কেউ এগিয়ে যাবে, কেউ পিছিয়ে পড়বে। কারও এগিয়ে যাওয়া আর কারও পিছিয়ে পড়া মানে বৈষম্য সৃষ্টি হওয়া। এগিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা উঁচু শ্রেণিতে উঠে গিয়ে নিচের দিকে আর ফিরে তাকান না। যারা নিচে পড়ে গেলেন, তাদের সঙ্গে তারা আর মেলামেশা করেন না। উঁচুতে ওঠার পরেও প্রতিযোগিতা থামে না; বরং আরও বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ব্যবধান আর ব্যবধানই সৃষ্টি করে নিঃসঙ্গতা। বিচ্ছিন্নতা ও নিঃসঙ্গতা আত্মহত্যার প্রধান কারণ। সামাজিক বৈষম্য, ব্যবধান, সম্পর্কের কাঁটাছেড়া, সম্পর্কের ভেতর অবিশ্বাস, টানাপোড়ন; সর্বোপরি নিঃসঙ্গতা মানুষকে যে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়, বিভিন্ন পরিসংখ্যানও এর সাক্ষ্য দেয়।

বিজ্ঞাপন

তিন.

বহু বছর ধরে গণমাধ্যমে কাজ করছি। অনেক আত্মহত্যার খবর নিজে ছাপিয়েছি, নিজে কলম চালিয়েছি এই সব খবরে। সম্প্রতি সাদি মহম্মদের মৃত্যুর খবরটা দেখে ভয়ানক চমকে উঠেছি। বিপন্নবোধ করেছি। আমার ভেতরে অন্য ধরনের প্রভাব তৈরি করেছে। একধরনের ‘ট্রমা’ তৈরি করেছে। তার চলে যাওয়ায় মনে হলো, কতকাল ধরে এরকম আমি বা আমরা অনেকেই এ ধরনের ভয়াবহ যন্ত্রণা বেড়াচ্ছি। সত্যি কথা বলতে কী, এর আগে আমাকে এতটা ছুঁয়ে যায়নি। কিংবা আমাকে তার মতো করে ভাবায়নি। এতটা নিঃসঙ্গ আমার মনে হয়নি, আজকাল যতটা মনে হচ্ছে। কেন জানি না, আমার নিজের কাছে বড্ড ভয় লাগে। সম্প্রতি আমার বাবা প্রয়াত হলেন, সেই ভয়টা আরও বেশি চড়াও হলো। আজকাল অফিস পাশ দিয়ে যাওয়া ট্রেনের শব্দ আমাকে ভীষণ অস্থির করে। ভয় ধরায়।

একজন ঊনমানুষের গল্প বলি। অনিমেষ নামে সেই ছেলেটি দেখতে খাঁটো। সাধারণ মানুষের মতো তার চরিত্র নয়। কিন্তু অনিমেষের সঙ্গে একটি মেয়ের পরিচয় হয়। ওই মেয়েকে ভালোবাসে সে। কিন্তু সে মেয়েটির কাছে যেতে পারত না। তার সংকোচ লাগত, ভয় হতো। প্রত্যাখাত হওয়ার ভয়। কথা বলতে বলতে একদিন সব ভয়, সংশয় উড়িয়ে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করে অনিমেষ। সে দেখাতে অনিমেষের ভালোবাসা প্রত্যাখাত হয়।

গল্পটা বহু পুরানো। কিংবা এটা নিছক গল্প বলাটা ভুল হবে। কিন্তু সমাজের এ চেহারা এখনও একইরকম হয়ে আছে। আমরা কোনোভাবেই মনে করতে পারি না, একজন প্রতিবন্ধী মানুষের ভেতরে প্রেমানুভূতি হয়, ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে। তাদেরও কাউকে না কাউকে ভালো লাগার ব্যাপার থাকে। তাদের সেই ভালোবাসাটা উজাড় করা ভালোবাসা, স্বার্থহীন ভালোবাসা। কিন্তু সেই ভালোবাসা বা ভালো লাগাটা তারা প্রকাশ করতে পারে না। তাদের মধ্যে একটা দ্যোদুল্যমানতা কাজ করে। দ্বিধা কাজ করে। তাদের মনে জিজ্ঞাসা থাকে, প্রশ্ন থাকে; তার ভালোবাসার মানুষ কি তাকে ভালোবাসবে? হয়ত ভালোবাসে। তবে সেটা খুব ব্যতিক্রম। কদাচিৎ দেখা যায় না। কালেভদ্রে দুই-একটি ঘটনা হয়ত হয়। যখন প্রত্যাখাত হয়, এ প্রত্যাখানে জ্বালা তারা সইতে পারে না। নিতে পারে না। তারা নিরবে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়।

রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে প্রায়ই বলতেন, ‘দ্যাখ উন্মাদ, তোর জীবনে শেলীর মতো, কীটসের মতো খুব বড় একটা ট্র্যাজেডি আছে, তুই প্রস্তুত হ।’ জীবন নানা ঘাত-প্রতিঘাতে কেন জানি মনে হয় আমার জীবনেও এরকম ট্র্যাজিডি আছে। ইতালির লেরিসিতে ফেরার পথে মাত্র ৩০ বছর বয়সে ব্রিটিশ কবি জন কীটসের মৃত্যু হয়। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন বলেই ধারণা করা হয়।

চার.

অনেকে বলত, সাদি মহম্মদ নাকি মানুষ হিসেবে ছিলেন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের। কাউকে কাউকে আমি এটা বলতে দেখেছি। নিশ্চিতভাবে এটা একটা প্রবঞ্চন। এটা একটা মানুষের অনুভূতিতে কী পরিমাণ আঘাত করে, ক্ষরণ তৈরি করে, ঘৃণা তৈরি করে, তার চেয়ে অনেক কম অযোগ্য মানুষ আমিও মাঝে মাঝে তা টের পাই। যখন কোনো প্রিয় মানুষ রাতবিরাতে বলে উঠে, তাকে খোঁচাচ্ছি (স্বভাবে আমার তেমন কাউকে আঘাত করে খোঁচানোর প্রবণতা নেই, দুষ্টুমিছলে হয়তো ফাজলামো করি, কিন্তু খোঁচাখুঁচির মতো আঘাত করার কোনো মানসিক বৈকল্য আমার হয় না), সেটা যে কী দুসহ অবস্থা, তা আমাকে প্রতিনিয়ত ছুঁয়ে যায়, কুঁড়ে খায়। এমনও হয়েছে নিজেকে ‘মানুষ’ হিসেবে ভাবতে ভীষণ সংকোচ হয়, সংশয় হয়। কোন্ পর্যায়ে গেলে আমি আমাকে ‘মানবকূলের’ একজন ভাবতে পারি না।

সাদি মহম্মদ জীবনে এত সফল এবং দৃঢ়চেতা একজন মানুষ। কয়েক বছর আগের কথা, একটা রবীন্দ্র সম্মেলনের অনুষ্ঠানে সাদি মহম্মদ আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন, ওই অনুষ্ঠানে আসার আগে তিনি সরকারি সংগীত কলেজ থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে এলেন। চাকরির বয়স আরও থাকার পরও তার দৃঢ়তার কারণে তা তিনি করতে পারছেন। তার মতো এমন মানুষকে সামাজিক বৈষম্য আর নিগ্রহ, একই সঙ্গে নিঃসঙ্গতায় এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কেবলমাত্র পদক বা পুরস্কার না পাওয়ার অভিমানে? অনেকেই ব্যাপারটা যেভাবে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার আর স্বীকৃতির দিকে নিয়ে গেছে, তাতে যে কারোর মনে হতে পারে, পুরস্কারের জন্য লালায়িত ছিলেন। তিনি পুরস্কারের জন্য গান করেননি। গান ভালোবাসতেন বলে গান করতেন। গান ভালোবাসতেন বলেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়া ছেড়ে দিয়ে শান্তিনিকেতনে সংগীত ভবনে গিয়েছিলেন, গান শিখেছেন, সারাজীবন হৃদয় উজাড় করে গান গেয়েছেন। কোনো কিছুতে উৎকর্ষের পরাকাষ্ঠায় পৌঁছাতে হলে একজন মানুষকে গভীর সাধনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সাদি মহম্মদ ছিলেন এ রকমই একজন সাধক। প্রতিদিন দীর্ঘসময় তিনি রেওয়াজ করতেন। তার ছোট ভাই শিবলী মহম্মদ জানাচ্ছেন, আত্মহত্যার কিছুক্ষণ আগেও গান গাইছিলেন সাদি মহম্মদ। তার মানে, সংগীত জীবনের অংশ হয়ে উঠেছিল তার। যতক্ষণ জীবন আছে, ততক্ষণ সংগীত আছে। সংগীতের প্রতি অনুরাগ শুধু নয়, সীমাহীন নিষ্ঠা ছিল তার। গায়কি, শুদ্ধতা এবং গলার ওপর নিয়ন্ত্রণ বিশিষ্ট করেছিল তাকে।

তাহলে কেন তিনি স্বেচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিলেন? হয়তো জীবননান্দের মতো সেই কবিতার মতো কোনো বিপন্ন-বিস্ময় তাকে ঘিরে ছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নই আসে, সাদি মহম্মদের যদি এরকম অবস্থা হয়, তাহলে আমার মতো মানুষগুলো, যাদের কোথাও কোনো কূল নেই-কিনারা নেই, তাদের ভরসা কোথায়! সাদি মহম্মদ যেন আমাদের পদাঘাত করে চলে গেল। তার মৃত্যু আমাকে এখন প্রতিনিয়ত আরও বেশি জর্জরিত করে।

সাদি মহম্মদের পারিবারিক বন্ধু নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘তার মা জেবুন্নেছা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি এক ধরনের ট্রমার মধ্যে চলে যান। মানসিকভাবে ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিল।’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সাদি মহম্মদের মতো মানুষ যখন ডিপ্রেশনে চলে যান, তার মতো মানুষ যখন একাকিত্ব ভোগ করেন, তার মতো মানুষ যখন নিঃসঙ্গতা নিয়ে জীবনযাপন করেন, তখন আমাদের কি কোনো দায় ছিল না একজন সৃষ্টিশীল মানুষকে, একজন শিল্পীকে এবং একজন বিরল কণ্ঠের প্রতিভাকে ডিপ্রেশন থেকে বের করে আনার? তার মৃত্যুর পর অনেকের স্ট্যাটাসে দেখেছি, তিনি মানুষের সঙ্গ চেয়েছেন। কিন্তু তারা দিতে পারেননি। তাকে কেউ দেখতে আসতেন না, সেই আক্ষেপ হয়ত ছিল সাদি মহম্মদের মনে। মা আর বোনের মৃত্যুর পরে একাকিত্বই ছিল তার সঙ্গী। সেই একাকিত্বের মধ্যেই কি নিজের জীবনের শূন্যতার দিকগুলো আরও স্পষ্ট হয়েছিল তার মনে? আঁকড়ে ধরতে চাইছিলেন কিছু সম্পর্ককে? সাদি মহম্মদের গান আমাদের কত শত মানুষের একাকীত্বের সঙ্গী হয়েছে, নিঃসঙ্গতাকে দূর করেছে। কিন্তু সাদি মহম্মদের একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা এবং ডিপ্রেশনকে কি আমরা দূর করতে পেরেছি?

পাঁচ.

কেউ যদি আত্মহত্যার কথা ভাবেন, তা হলে সেটা কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নয়। আগাম চিন্তাভাবনা করেই ঠিক করা। ভেবেচিন্তে কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? গভীর অবসাদ বা একাকীত্ব থেকে? নাকি সমাজের প্রতি কোনো অভিমান, প্রতিবাদ বা আত্মগ্লানি পরোক্ষভাবে কাজ করেছে এ ক্ষেত্রে? তবে সব আত্মহত্যার মূলেই যে অবসাদ থাকতে হবে, তা জরুরি নয়। একজন মানুষ নানাভাবে বিভ্রান্ত থাকেন। মানসিক অবসাদে সাদি মহম্মদ স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন, এটা ধরে নেওয়া অতিসরলীকরণ ছাড়া কিছুই নয়। সামাজিকভাবে সাদি মহম্মদ কেমন ছিলেন, তা কি কেউ জানেন? তাকে নিশ্চিত জীবন দেওয়া, সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল। রাষ্ট্র কি সেটা করেছে? তার এই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ ছিল কিনা, তাই বা কে বলতে পারে? তিনি তো আচমকা আত্মহত্যা করেননি। এর পেছনে নির্দিষ্ট ভাবনা ছিল। সেই ভাবনাগুলো অবচেতন মনে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

‘কমিউনিটি কেয়ার’ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে। ‘কমিউনিটি কেয়ার’-এর মূল কথাই হলো, একজন রোগীকে পারিপার্শ্বিক সমাজের ঘিরে থাকা। তিনি যে সমাজবিচ্ছিন্ন জীব নন, সেই আশ্বাসটা জাগিয়ে তোলা। অনেকের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। হয়তো পথে-ঘাটে কয়েকবার দেখা হয়। সাক্ষাৎ হয়। ওই পর্যন্তই। ওই ব্যক্তির বর্তমান জীবনযাপন সম্পর্কে তারা অন্ধকারেই থাকেন। আর যারা জানেন, তারা বরং ওই মানুষটাকে আরও কিভাবে উপহাস করা যায়, দিনের পর দিন ঠাট্টা করেছে তাকে নিয়ে, জানতে চায়নি বিষাদমাখা হাসির আড়ালে ওই মানুষটি ভালো আছে কিনা, সেখানে স্থির থাকেন। একজন মনোরোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে পাঁচ খেকে ১০ শতাংশ ভূমিকা থাকে ওষুধের। তার পরের পর্যায়ে কিন্তু ‘কমিউনিটি কেয়ার’ খুব জরুরি। সেটা আমরা কতটুকু পারছি?

ছয়.

পুঁজির আগ্রাসনে মানবসভ্যতা যে বিপন্ন হবে, তা আশির দশকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। লিখেছিলেন, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’। বহু বছর আগে ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতা উদ্ধৃত করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনার কবিতায় এত হতাশা কেন?’ জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘হতাশা নয়, অভিমান।’ নানা প্রবঞ্চন, সম্পর্কের ভেতর অবিশ্বাস, অবহেলা মানুষের মধ্যে অভিমানের জন্ম দেয়। আর এই অভিমান নিয়েই সাদি মহম্মদরা স্বেচ্ছায় পৃথিবীকে বিদায় জানায়। হয়তো তার পথ ধরে আমি বা আমরা ভবিষ্যতে …। খুব সাবধান হতে হবে আমাদের।

লেখক: রাজনীতিবিদ

সারাবাংলা/এসবিডিই

নিঃসঙ্গতা- সম্পর্কের অবিশ্বাস ও একটি স্ন্যাপশট মত-দ্বিমত হাবীব ইমন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর