স্বাস্থ্যের মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে
৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৭
আজ ৭ই এপ্রিল, ২০২৪ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। আজকের এই দিবসের প্রতিপাদ্য, “আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার”। স্বাস্থ্য একটি মৌলিক অধিকার, যা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে। আজ স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে আমরা কি বলতে পারি এই দেশের নাগরিকগণ এই সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্যকে উপভোগ করতে পারছি? আমরা কি এই অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করেছি? মানসিক এবং সামাজিক অবস্থার কথা উল্লেখ না করে শুধুমাত্র শারীরিক ভাবেও কি আমরা সুস্থ্য?
অনেকগুলি কারণ একত্রিতভাবে স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে থাকে; তাদের মধ্যে ভৌত পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য-পরিষেবার (রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সেবা) প্রাপ্যতা, অধিকার এবং ব্যবহার অন্যতম।
আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমতঃ গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা বাস্তবায়নের জন্য সমন্বয়ের অভাব, দ্বিতীয়তঃ সরকারি সেক্টরে স্বাস্থ্য প্রদানকারী জনবলের সংখ্যার মারাত্মক ঘাটতি। তৃতীয়তঃ সরকারি বাজেটে স্বাস্থ্যের জন্য ক্রমাগত কম বার্ষিক বরাদ্দ এবং পরিবারের দ্বারা উচ্চ পকেটের অর্থ প্রদান। এবং চতুর্থটি হ’ল পরিবর্তনশীল স্বাস্থ্য অর্থায়ন ব্যবস্থা সহ শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলিতে অসম অভিগমন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হল একটি বহুত্ববাদী ব্যবস্থা যার মধ্যে চারটি মূল কারিগর রয়েছে যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার গঠন ও কার্যকারিতাকে সংজ্ঞায়িত করে: সরকার, বেসরকারি খাত, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং দাতা সংস্থা। সরকার বা পাবলিক সেক্টর হল প্রথম মূল কারিগর যা সংবিধান অনুসারে শুধুমাত্র নীতি ও প্রবিধানের জন্য নয় বরং স্বাস্থ্য কর্মীদের অর্থায়ন এবং কর্মসংস্থান সহ ব্যাপক স্বাস্থ্য পরিষেবার বিধানের জন্য দায়ী।
প্রতিবছর বাংলাদেশে ৬৪ লক্ষ মানুষ শুধুমাত্র ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।
গত ১২ মার্চ, ২০২৪ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ হওয়া অর্থ ব্যয় করতে না পারায় বরাদ্দ কমানো হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় দিনদিন ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বা আউট অব পকেট এক্সপেনডিচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ৭৪ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে আমাদের দেশে মানুষ শতকরা ৬৮ টাকার বেশি ব্যয় করছে নিজের পকেট থেকে। এর মধ্যে ওষুধে ব্যয় হয়েছে ৪৪ শতাংশ। বছরে ওষুধের পেছনে ব্যয়ের ৯৪ শতাংশই আসে পরিবার থেকে। গত এক বছরে হাসপাতালগুলো রোগ নির্ণয়ে করা বিভিন্ন পরীক্ষার ফি, চিকিৎসকের পরামর্শ ফি ও ওষুধের ব্যয় বেড়েছে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় যে উদবেগজনক তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে তা যে, প্রায় ছিয়ানব্বই শতাংশ চিকিৎসা কর্মী গ্রামীণ পোস্টিংয়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন, পঁচাত্তর শতাংশ রিপোর্ট করেছেন যে গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসক ঘাটতি ছিল। যদিও ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা -এর মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বে ৪৪ তম স্থানে ছিল, যা সার্ক দেশের যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো, এমনকি ভারতের চেয়েও ভালো।
এই স্বাস্থ্য সংকটের মুল কারণ লুটেরা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। আজ জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা চলছে। সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের জন্য দেশের পুঁজিপতিরা এতে পুঁজি বিনিয়োগ করছে। সরকারি ব্যবস্থাপনা ধ্বংসের মুখে দাঁয়ে আছে। ফলে এই ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ না করে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যাবে না৷
আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট আশা প্রকাশ করছে যে মানুষ এবং এই গ্রহকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জরুরী পদক্ষেপগুলির উপর বিশ্বব্যাপী মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবে এবং সুস্থতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সমাজ গঠনের জন্য সকল শ্রেণীর জনগণ একটি সমন্বিত স্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তুলবে।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
ডা. এম. এইচ ফারুকী মত-দ্বিমত স্বাস্থ্যের মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে