Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেচে দেয়া এক আত্মপ্রতারক আমি !


৩ জুন ২০১৮ ১১:২৯

।।তুষার আবদুল্লাহ।।

আমার যা লেখার কথা আমিতা লিখছিনা। যা দেখছি তার অনুবাদ রূপান্তরিত হচ্ছেনা হরফে। বাষ্প হয়ে যাচ্ছে। না এটাও মিথ্যে বলা হলো। লুকিয়ে ফেলছি। এমন সিন্দুকে লুকোচ্ছি, যা আমি আর কখনো ফিরে পেতে চাইনা। অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস বলে অবশিষ্ট থাকছেনা কিছুই। এমন কোন দিন আসবে, সময়কে অবিকল অনুবাদ করা যাবে, সেই পদধ্বনী শোনার মতো কান হারিয়েও বসে আছি আমরা।

চিল কান নিয়ে যায়নি। আমিই কোথায় যেন হারিয়ে এসেছি। ইচ্ছে করে হারানো। কান থাকলেই বিপদ কতো কিছুই ভেসে আসবে। কতো চিৎকার, কতো আর্তনাদ। নদী চুরি হয়ে গেল। দেখলাম, সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারিনি। গাছ হত্যা হলো, নিজের বুক পেতে দেবার সাহসটুকু হলোনা। প্রিয় শহর ধর্ষিত হলো, প্রিয় পথ বিকলাঙ্গ হলো, সম্ভ্রম হারালো প্রেয়সী। আমি বলতে পারিনি-থামো।

শিক্ষার ধারালো ছুরিতে আমার সন্তান ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। আমি তাকে স্কুল বেঞ্চ থেকে তুলে নিয়ে আসতে পারিনি। মূমুর্ষ রোগীকে নিয়ে সড়কে আটকে পড়া স্বজনকে, পৌঁছে দিতে পারিনি হাসপাতালে। পথেই কতো স্বজন হারিয়েছেন প্রিয় মানুষ। আমি বিভৎস কিছু মানুষের উন্মাদনা দেখে ভয়ে জড় হয়ে ছিলাম। কতো সময় পালিয়ে এসেছি, চোখ পথের ডাস্টবিনে জমা রেখে। চোখটা বড্ড বেয়াদপ, বেয়ারা। জ্যোতি কমে এলেও অন্ধকারে ঠিক আলো ফেলে। চেটেপুটে দেখে নেয়। তাই জোড়া চোখও আজকাল সঙ্গে রাখিনা। কি দেখতে কি দেখে ফেলে। সরকারি দফতরে উঁকি দেইনা। ওরা বেশ ভাল পরম্পরা ধরে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় অপচয়ের গনিত সূত্র ভুলে তো যায়ইনি বরং হালনাগাদ সূত্রগুলোও আত্মস্থ করে ফেলেছে। ফলে শহর-গঞ্জ –গ্রামে অপচয়ের বাম্পার ফলন বেশ আলোই ছড়াচ্ছে। স্মৃতিতে তাদের প্রাচীন শাসক। বেসরকারি প্রাচীন সেই শাসক-শাসনকেই রঙীন কাগজে মুড়ে এনেছে। রঙ দেখে বাহবা দিয়ে যাচ্ছি। দুই হাতে কুলোচ্ছেনা। যদি সহজ কিস্তিতে আর আটখানা হাত মিলতো। তবেই বেসরকারি দপ্তরগুলোর জয় তালি যুৎমতো বাজাতে পারতাম। পারিনি বলতে –মশকের চেয়ে ওদের শোষণ ক্ষমতা বেশি আর তীব্র। চোখ ছায়া পড়লেও আমি বলতে ভুলে যাই, না বলার সাহস রাখিনা পরিযায়ী পাখির মতো টাকা উড়ে যায় ভিনদেশে। উড়ে যায় টাকা, সুতো-নাটাই কার কাছে আছে জানি –তবু ঠোঁটে সেলাই।

বিজ্ঞাপন

আমিও জানি গণতন্ত্রের সংজ্ঞা, রাজনীতি বুঝি কিছুমিছু। এই কথা কারে বিশ্বাস করাই। বুঝাতে পেরেছি কি কাউকে-ভোট মানেই গণতন্ত্র নয়। রাজনীতি মানেই ভোট নয়। মেয়ের কাছে নিরাপদে বাড়ি ফিরবো। প্রিয়তমার সঙ্গে উদ্বেগহীন এক কাপ চা খেতে পারার নামই রাজনীতি। সেই এক কাপ চায়েই আছে গণতন্ত্রের নির্যাস। সেই কবে কতোদিন আগে কাকরাইল মোড়ে, হুম মসজিদের সামনে দিয়ে যেতে দেখেছিলাম তাকে-শাড়ি পড়া সেই রমনী রিকশায় পায়ের উপর পা রেখে চারপাশকে তোয়াক্কা না করে, কেবল নিজেকে আর শহরটাকে ভালোবেসে চলে গেল শাহবাগ। কাকরাইলে তখন গোধুলী ছিল। আমি আজ আর সেই গোধুলী খুঁজে ফেরার কথা প্রকাশ্যে বলতে পারিনা। ফিসফিস করেও কি বলতে পারি? শাড়িপড়া, মাথায় লাল টিপ কোন মাকে, বোনকে কিংবা প্রিয়তমাকে দেখবার বায়না করার সাহস বুড়িগঙ্গার কালো জলের কাছে বন্ধক রেখে এসেছি। নিয়ে এসেছি অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে রাখার সামর্থটুকু। তাই চারপাশে আমি অচেনা, ভিনদেশী মানুষের বেশে থেকে প্রিয়তমাকে। পাল্টে ফেলেছি আমি আমার অভ্যাস গুলোকেও। আমি আমার মতো করে কিছুই আর ভাবছিনা। ভাবতে চাইছিনা। আমি আমাকে কোথায় যে বেঁচে দিয়েছি। বিনিময়ে কোন কড়ি আনতে পারিনি। কুড়িয়ে এনেছি কান্না। জলহীন কান্না। জলের রেখাহীন কান্না। আমার কান্নায় কোন জল গড়াবেনা। তৈরি হবেনা কোন জলরেখো। একবারও কি পেরেছি বাঁধ ভেঙ্গে জল আনতে? পারিনি। এই আত্মপ্রতারণা নিয়ে, বেচে দেয়া মস্তিস্ক নিয়ে আমি আমার কণ্যার ‘বাবা’ ডাক শোনার অধিকার হারিয়েছি। হারালাম লেখার সামর্থ্যটুকুও।

[এই কলামে তুলে ধরা মতামত লেখকের নিজের]

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর