‘কাট অ্যান্ড পেস্ট’ রিপোর্ট ও আমজনতার ফেসবুক স্ট্যাটাস!
৫ জুন ২০১৮ ১৩:৫২
শহীদুল ইসলাম
‘গত ১০ বছরে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি’ – অর্থমন্ত্রীর এই উদ্ধৃতি দিয়ে যে খবরটি প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে সেটি ছিল ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট’ রিপোর্ট। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কোথাও এ বক্তব্য খুঁজে পেলাম না।
আসলে প্রিন্ট মিডিয়ায় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ তিনি বলেছেন, বাজেট ঘোষণার পর জিনিসপত্রের দাম অতীতে যে হারে বাড়তো গত ৯ বছরে তা বাড়েনি। বাজেট ঘোষণার পর মুনাফালোভীদের যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয় সেটা এই সময়ে সম্ভব হয়নি, সেই কথাটিই বলতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
বিশ্বের একটি দেশ কেউ দেখাতে পারবেন যে দেশে ১০ বছরে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি? আমি যে শহরে থাকি, অর্থাৎ নিউইয়র্কে, সেখানে বসবাস করছি প্রায় ১০ বছর। এই ১০ বছরে এখানে চালের দাম বেড়েছে দেড়গুণ। মেট্রো রেলের ভাড়া প্রতিবার ব্যবহারের জন্য ছিল ২ ডলার। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২ ডলার ৭৫ সেন্টস। মাসিক মেট্রো কার্ডের দাম ছিল ৮৯ ডলার। এখন তা বেড়ে ১১৬ ডলার ৫০ সেন্টস। ১৪ শ ডলারেরে এক বেডরুমের বাড়ি ভাড়া এখন দুই হাজার ডলারের নিচে পাওয়া যায় না। কিন্তু সেই অনুযায়ী বেতন বাড়েনি।
বাংলাদেশের প্রসঙ্গেই আসি। বাংলাদেশে দ্রব্যের মূল্য সবসময়ই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ছিল। কিন্তু ১০ বছরে দ্রব্যের দাম কী খুব বেড়েছে? আগে চালের কেজি কত ছিল? এখন কত কিনছেন? ১০ বছর আগে গরুর মাংসের কেজি কত ছিল? ভোজ্য তেলের লিটার কত টাকা ছিল?
যাই হোক, বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে তা কোনোভাবে অস্বীকার করা যাবে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং সিআইএ’র রিপোর্ট দেখুন। বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ, এমনকী ইউরোপের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৩২-এ।
এখন কেউ যদি জোর করে বলেন, বাংলাদেশে কারো আয় রোজগার বাড়েনি, এটা তার বা তাদের অযোগ্যতা। যিনি পারেন না, তিনি কোনোদিনই পারবেন না। একজন রিকশার চালক আগে কত টাকা আয় করতেন আর এখন কত টাকা আয় করেন? একজন গার্মেন্ট শ্রমিক আগে কত টাকা মজুরি পেতেন, এখন কত টাকা পান? আর আয় বাড়লে ব্যয় তো বাড়বেই। একটু পেছনে ফিরে তাকান, বাংলাদেশে দারিদ্রসীমা কমে এখন ২৪ দশমিক ৩-এ নেমে এসেছে। তবে এটা সত্যি যে শতকরা ১২ দশমিক ৯ ভাগ লোক এখনো চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। অর্থাৎ তারা অনেক কষ্টে আছে। এটা এখনো আমাদের জন্য দুঃসংবাদ। বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এখনো ১২ দশমিক ৭ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সে হিসাবে করলে বাংলাদেশ অনেক ভাল অবস্থানে আছে, বলতে হবে।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে। তবে প্রয়োজন একটু সুশাসন। এটার অনেক ঘাটতি আছে। আর এই ঘাটতি পূরণে আমাদের প্রত্যেককে সৎ ও নিষ্ঠাবান হতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করা সরকারের একার কাজ নয়, এ দায়িত্ব আপনার, আমার, সবার।
শহীদুল ইসলাম: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক।
[এই কলামে তুলে ধরা সকল মত লেখকের নিজের]
সারাবাংলা/এমএম