Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেন ব্যাঙ্গাত্মক রিলগুলি এত জনপ্রিয়?

ড. মতিউর রহমান
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:১১

আজকের দিনে, সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এই ভার্চুয়াল পৃথিবীতে আমরা সবাই কমবেশি একই ধরনের চাপ, হতাশা এবং ক্লান্তি অনুভব করি। এই অবস্থায়, ব্যাঙ্গাত্মক রিলগুলি আমাদের জন্য একটি অদ্ভুত রকমের স্বস্তির উৎস হয়ে উঠেছে।

ক্যাথারসিস হল একটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ ‘শুদ্ধি’। মানসিক বিশ্লেষণে ক্যাথারসিসকে বোঝানো হয় মানসিক চাপ বা দুঃখ কমানোর একটি প্রক্রিয়া। ব্যাঙ্গাত্মক রিলগুলি আমাদের হাসায়। হাসি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ওষুধ যা আমাদের মনকে শান্ত করে এবং স্ট্রেস হরমোন কমায়।

বিজ্ঞাপন

আমরা যখন অন্যদের বিদঘুটে পরিস্থিতিতে হাসি, তখন আমরা একাকী বোধ করি না। অন্যের দুঃখে হাসি অশোভন হলেও, ব্যাঙ্গাত্মক রিলগুলি আমাদেরকে এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিকে একটি হাস্যকর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে সাহায্য করে। অনেক সময়, ব্যাঙ্গাত্মক রিলগুলি সমাজের বিভিন্ন সমস্যা বা অবিচারের বিরুদ্ধে একটি সরল এবং কার্যকর প্রতিবাদ হিসেবে কাজ করে।

ব্যাঙ্গাত্মক রিলগুলি শেয়ার করা, কমেন্ট করা এবং লাইক দেওয়ার মাধ্যমে আমরা অন্যদের সাথে যোগাযোগ করি। এই সামাজিক যোগাযোগ আমাদেরকে একাকিত্ব থেকে দূরে রাখে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যদিও ব্যাঙ্গাত্মক রিলগুলি মানসিক স্বস্তি দিতে পারে, তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে। নেতিবাচকতা, ঘৃণা এবং অশ্লীলতা ছড়ানো রিলগুলি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

আজকের দিনে মানুষের মনোযোগ ক্রমশ কমে যাওয়ায় সংক্ষিপ্ত ভিডিও বা রিলগুলি বিনোদনের জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এই রিলগুলো দর্শকদের মন মাতিয়ে তুলতে সক্ষম। বিশেষ করে ব্যঙ্গাত্মক রিলগুলো দর্শকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এই রিলগুলোতে সমাজ, রাজনীতি এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়কে কৌতুকপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা হয়। ফলে দর্শকরা দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে মুক্তি পেয়ে এক মুহূর্তের জন্য হাসতে পারে।

বিজ্ঞাপন

সমাজ, রাজনীতি, মানুষের আচরণ—যেখানেই অসঙ্গতি বা বিদ্রূপের জায়গা থাকে, সেখানেই ব্যঙ্গাত্মকতা জন্ম নেয়। সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটক থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সর্বত্র ব্যঙ্গ হাস্যরসের মাধ্যমে গভীর সত্য উন্মোচনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যঙ্গের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

মাত্র ১৫-৩০ সেকেন্ডের ছোট্ট একটি রিলের মধ্যেই জটিল সমস্যাগুলিকে এত সহজে উপস্থাপন করা হচ্ছে যে, দর্শকরা হাসির মধ্যে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সংক্ষিপ্ত ভিডিওগুলো এতটাই কার্যকরী যে, দর্শকদের মনকে দ্রুত আকর্ষণ করতে পারে এবং তাদের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।

ব্যঙ্গাত্মক রিলগুলি মানুষের মনকে মুক্ত করতে পারে কারণ এগুলো সরাসরি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সমস্যা ও অসুবিধার সঙ্গে সম্পর্কিত। হোক তা রাজনীতি, সমাজ, নাকি আমাদের নিজস্ব জীবন—এই রিলগুলোতে আমরা নিজেদেরই দেখতে পাই। যেমন, কোনো রাজনীতিবিদের ভুলকে খোঁচা দেওয়া হোক না কেন, বা সামাজিক নিয়মকে প্রশ্ন করা হোক না কেন, এই রিলগুলো আমাদেরকে হাসতে বাধ্য করে।

এই হাসির মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের ভেতরের হতাশা ও অসন্তুষ্টি কিছুটা হলেও ভুলে যেতে পারি। সহজ কথায়, এই রিলগুলি আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিকের একটি আয়না হয়ে ওঠে এবং হাস্যরসের মাধ্যমে আমাদের মনকে মুক্ত করে।

আজকের দিনে পুরো বিশ্বটা যেন একটা বড় অস্থিরতার মধ্যে আটকে আছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, আর সামাজিক চাপ—এসব মিলে মানুষের জীবনকে অনেকটা জটিল করে তুলেছে। এইসব জটিল সমস্যার মাঝে একটু হাসির ছিটে ফোটানোর কাজটাই করছে ব্যঙ্গাত্মক রিলগুলো।

মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে এই রিলগুলো আমাদেরকে নিয়ে যায় এক অন্য জগতে, যেখানে জটিল সমস্যাগুলোকে সহজ করে উপস্থাপন করা হয় এবং হাসির মাধ্যমে সেগুলোর ভয় কমানো হয়। এই রিলগুলো আমাদেরকে একটু সময়ের জন্য এই সব চিন্তা থেকে মুক্তি দেয় এবং আমাদের মনকে শান্ত করে।

এই রিলগুলি শেয়ার করে মানুষ একটি অনন্য সম্প্রদায় গড়ে তোলে। দর্শকরা কেবল এই ভিডিওগুলো দেখেই থামে না, বরং লাইক, শেয়ার এবং মন্তব্যের মাধ্যমে এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা তাদের অনুভূতি, চিন্তা ভাবনা অন্যদের সাথে ভাগ করে নেয় এবং বোঝে যে তারা একা নয়।

হাসির মাধ্যমে তারা একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলে যেখানে সবাই একে অপরকে সমর্থন করে। এইভাবে, ব্যঙ্গাত্মক রিলগুলি এক ধরনের ডিজিটাল থেরাপি হিসেবে কাজ করে যেখানে সবাই মিলে মিলে হাসি-ঠাট করে মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়।

ব্যঙ্গাত্মক রিলগুলি জটিল সমস্যাগুলোকে সহজ করে বোঝানোর একটি দক্ষ উপায়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এই রিলগুলো দর্শকদের মনে চিন্তা করার বিষয় তুলে ধরে। রাজনীতি, পরিবেশ বা সমাজের নানা সমস্যা—এগুলোকে এই রিলগুলোতে হাস্যরসের মাধ্যমে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, দর্শকরা গুরুতর বিষয়গুলোকে হালকাভাবে নিয়ে ভাবতে পারে এবং একইসাথে সেগুলোর প্রতি সচেতনও হয়ে ওঠে।

হাসির মাধ্যমে এই রিলগুলি দর্শকদের মনে একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জাগিয়ে তোলে, যার ফলে তারা নিজেদেরকে এই সমস্যাগুলো থেকে আলাদা মনে না করে, বরং সেগুলোর সমাধানে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত হয়।

টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিওর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় বিনোদনের ধরন পাল্টে গেছে। আগে দীর্ঘ সময় ধরে একই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন হতো, কিন্তু এখন স্বল্প সময়ের মধ্যে বিনোদন পাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

তবে এটা ভাবা ঠিক হবে না যে, এই ছোট ভিডিওগুলোতে গভীরতা নেই। এই ভিডিওগুলোতে খুব কম সময়েই বড় বড় বিষয়ের উপর মজার ছলে সমালোচনা করা হয়, যা শুধু হাসাহাসি নয়, দর্শকদের মনে চিন্তার খোরাকও জোগায়।

এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই রিলগুলির উন্মুক্ত প্রকাশ বিভিন্ন ধরনের মানুষকে তাদের মতামত তুলে ধরার এক অনন্য সুযোগ করে দিয়েছে। যেসব মতামত প্রচলিত মিডিয়ায় কমই জায়গা পায়, সেগুলো এখানে প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের মানুষের তৈরি এই রিলগুলি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করে এবং দর্শকদের কাছে বিষয়গুলোকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করে।

ব্যঙ্গাত্মক রিলগুলি আমাদেরকে হাসতে বাধ্য করলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এই রিলগুলি সাধারণত খুব দ্রুত গতিতে হয় এবং হাস্যরসের উপর জোর দেয়, যার ফলে গুরুতর সমস্যাগুলিকে খুবই সহজ করে দেখানো হয়। অনেক সময় দর্শকরা এই রিলগুলি দেখে শুধু হাসেন এবং এর গভীর অর্থ বুঝতে চান না। এছাড়াও, ব্যঙ্গাত্মক রিলগুলি কখনো কখনো যে বিষয়টিকে সমালোচনা করার চেষ্টা করে, সেই বিষয়টিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।

মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ব্যঙ্গাত্মক রিলগুলি দর্শকদের হাসিতে আচ্ছন্ন করে দিয়ে জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার শক্তি জোগায়। এই ছোট্ট ভিডিওগুলো শুধু মাত্র বিনোদন নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে মুক্তি পেতে একটি দ্রুত ও কার্যকর উপায়। ডিজিটাল জগতে ব্যঙ্গাত্মক রিলগুলি একটি অনন্য স্থান দখল করে নিয়েছে, যা হাসির মাধ্যমে মানুষের মনকে প্রশান্ত করে।

লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী

কেন ব্যাঙ্গাত্মক রিলগুলি এত জনপ্রিয়? ড. মতিউর রহমান মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর