Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাফুফের সভাপতি কে হচ্ছেন?

নীলিমা তন্ময়
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৬

ফুটবল, সারা বিশ্বময় সাংস্কৃতিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে টিকে আছে। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির মাঝেও ফুটবল মানেই বাড়তি উন্মাদনা ও উচ্ছ্বাস। কিন্তু বাংলাদেশ, ফুটবল নেশন হিসাবে সফলতার মুখ দেখেনি। অথচ ফুটবলের প্রতি মানুষের যত আশা ও আবেগ, তা পূরণে কার্যকর ভুমিকা ফুটবল ফেডারেশন রাখতে পারলে বাংলাদেশও দারুণ কিছু করতে পারতো। এমন দাবি বা বক্তব্য দেশের ফুটবল বোদ্ধাদের। সুদীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বাফুফে সভাপতি হিসাবে দেশের ফুটবল গ্রেট কাজী সালাহউদ্দিন দায়িত্ব পালন করলেও দিনশেষে বাংলাদেশের ফুটবল বৈশ্বিক পর্যায়ে সফলতার মুখ দেখেনি। ধরা দেয়নি দক্ষিন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব তথা সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অভ্যাসে নেই বাংলাদেশ। এশিয়া কিংবা বিশ্ব ফুটবলে জায়গা নেয়া তো বহুদূরের গন্তব্য, এমন মত ক্রীড়া বিশ্লেষকদের।

বিজ্ঞাপন

এদিকে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে অবশেষে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন আগামী মাসের ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য বাফুফে নির্বাচনে সভাপতির পদে প্রার্থী হিসাবে থাকছেন না, তা স্পষ্টত ঘোষণা রেখে নতুন কান্ডারির জন্য পথ মসৃণ করেছেন, এবং তা বাধ্য হয়েই।

অন্যদিকে সকলেই অবগত যে, ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার অধীনে বা তত্বাবধানেই তাবৎ বিশ্বের মানচিত্রভিত্তিক দেশগুলোর ফুটবল ফেডারেশন পরিচালিত হয়ে আসছে। সেখানে ফুটবল ফেডারেশনের পরিচালনা পরিষদে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে একজন সভাপতি হতে হলে ক্ষমতাসীন দলের কৌশলী সমর্থন যে লাগে, তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।

কাজী সালাহউদ্দিন সভাপতি প্রার্থী না হওয়ার কারণে এখন কে হবেন ফুটবলের ত্রানকর্তা, তা নিয়ে আলোচনা বাড়ছে। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের ফুটবল পিছিয়ে গেলেও জাতীয় দলে খেলোয়াড়দের মান অতীতের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে, তা নিয়ে গভীর প্রশ্নে আত্মচিন্তায় পরিবেষ্টিত হলে উত্তর খুঁজে নেয়া যায়। হয়তো আবেগ কে প্রাধান্য দিয়ে সালাহউদ্দিন, চুন্নু, কায়সার হামিদ, মুন্না, সাব্বির কিংবা মামুন জোয়ারদারেরা ফুটবল পাগল দর্শকদের হৃদয়ের মণি কোঠায় আজ অব্দি জায়গা করে নিয়ে আছে। কিন্তু, এখন মোরসালিন কিংবা রাকিবেরাও দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে। সমস্যা হল, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দেশগুলোও খেলার মানের বিচারে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ ঠিক এখনো সুবিধা করতে পারছে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যেয়ে বোঝা যায় যে, অন্যান্য দেশগুলো অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে। কারণ, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কিংবা লিও মেসিদের সাপ্তাহিক লীগ ম্যাচগুলো দেখতে পারার জন্য সারাবিশ্বই ব্যাকুল থাকে। যার প্রভাব এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকাসহ সব মহাদেশেই পড়েছে। সঙ্গত কারণে খেলার মান বেড়েছে, সারবিশ্বের সব দেশেই।

বিজ্ঞাপন

এদিকে দেশের তৃণমূল ফুটবল ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মত ফুটবল বোদ্ধাদের। বাফুফে সাবেক সভাপতি এস এ সুলতান টিটো সব সময়ে বলে আসছেন যে, “আমাদের জেলা ভিত্তিক লিগ, শেরে বাংলা আন্তঃজেলা ভিত্তিক লিগ, বয়স ভিত্তিক লিগ, আন্ত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের নিয়মিত আসর না হওয়াতে ফুটবলের প্রসার হয়নি। সে কারণে ক্রিকেট এখন প্রধান খেলা হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। যার দায় কাজী সালাহউদ্দিন কিংবা সালাম মুর্শিদীদের নিতে হবে।”

তৃণমূল ফুটবলের অগ্রসর সংস্কৃতি ধরা না দিলেও গেল এক যুগের মধ্যে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ফুটবলের আসর বসিয়ে তরফদার রুহুল আমিন নামের এক ব্যবসায়ী সাড়া ফেলেছিলেন। যিনি তখনকার সময়ের ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদ নিয়ে চিটাগাং আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে উচ্চাভিলাসী উদ্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সাবেক হুইপ শামসুল হকের ছত্রছায়ায় তিনি ফুটবলে ভুমিকা রাখতে চান, তা বারংবার করে বলতে চেয়েছেন। এমন কি তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবল কে বদলাতে চান, তা ঘোষণা করেন। কিন্তু কাজী সালাহউদ্দিনের সাথে মতবিরোধে যেয়ে ফুটবল থেকে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন, তেমন খবরের চাউর আছে।

তরফদার রুহুল আমিন, সাইফ স্পোর্টিং নামের একটি ক্লাব করেছিলেন। তবে স্বার্থ উদ্ধার না হওয়ায় ধীরে ধীরে ফুটবল থেকে নিজেকে দূরে সরাতে থাকেন। শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের কেন্দ্রিয় সহসভাপতি হিসাবে এক পর্যায়ে তিনি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সাথে যুগপৎভাবে দাবা ফেডারেশন চালাতে থাকেন। বেনজীর আহমেদ ছিলেন সভাপতি। তরফদার রুহুল আমিন সহ সভাপতি !

এদিকে গেল ১৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে যখন কাজী সালাহউদ্দিন আগামী নির্বাচনে আর সভাপতির পদে নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা রাখেন, ঠিক তার ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাঁচ তারকা একটি হোটেলকে ভেন্যু করে বিএনপি অধ্যুষিত নেতা ও সাবেক গোলরক্ষক গ্রেট আমিনুল হকের প্রকাশ্য উপস্থিতি ও সমর্থনে তরফদার রুহুল আমিন ২৬ অক্টোবরের নির্বাচনে বাফুফে সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন, তা জানিয়ে দেন।

অন্যদিকে সরকার পরিবর্তনের অনিবার্য বাস্তবতায় ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি তাবিথ আওয়ালও সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন, তেমন গুঞ্জন আছে। যিনি নিজেও বিএনপির প্রভাবশালী যুব নেতা।

ফুটবলের সাফল্য ধরা দেয়ার প্রশ্নে বাংলাদেশের অগণিত ফুটবল ভক্ত চায় যে, সংস্কার করে ফুটবল কে ঢেলে সাজানো হোক। তেমন বাস্তবতায় ফেডারেশন চালানোর জন্য সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও আন্তর্জাতিক দূতিয়ালী করার পারঙ্গম কোন সংগঠক কে নির্বাচিত করা হোক। সারাদেশের ফুটবল কাউন্সিলরদেরকে তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কারণ, তারাই নির্বাচিত করবে ফুটবলের অভিভাবক কে হবেন, সেই প্রশ্নে। যদিও বিগত সময়ে নির্বাচনের আগে সকল কাউন্সিলরদেরকে রাজনৈতিক পর্যায় হতে বলে দেয়া হত, “অমুক কে কিংবা তমুক কে ভোট দিও।”

ফুটবলের স্বার্থ বিবেচনা করতে হলে আসন্ন ফুটবল ফেডারেশন নির্বাচনের জন্য সভাপতি হিসাবে বসুন্ধরা কিংস সভাপতি ও ফুটবল ফেডারেশনের সহ সভাপতি ইমরুল হাসান যোগ্য নাম। পেশাদারিত্বের প্রশ্নে, দায়বদ্ধতার প্রশ্নে ইমরুল হাসান এর ওপর ভরসা রাখার সুযোগ আছে বলে মনে করে দেশের সকল পর্যায়ের সংগঠকেরা। ক্লিন ইমেজের এই সংগঠক যেভাবে ক্লাব ফুটবলে সাফল্য দেখিয়েছেন, তা স্বীকার না করার সুযোগই নেই বলে মত সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের। এরপরেই বিতর্কিত অবস্থান হলেও আধুনিকচেতা তরফদার রুহুল আমিনের নাম আসবে। তবে বিগত সরকারের সুবিধা নেয়ায় বা দোসর হওয়াই তরফদার কতটা সুবিধা করতে পারবেন তা নিয়ে আলোচনা বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর