Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ত্রিমাত্রিক বাংলাদেশ


১১ জুন ২০১৮ ১৩:৪৩

টিভির পর্দায় চোখ লাগিয়ে বসে আছি সেই রাত বারোটার পর থেকে। চেম্বার কোনও মতে শেষ করে, রোগী দেখে না দেখে কোনও মতে বাসায় ফিরেছি। সেই থেকে টিভিতে চোখ সাটানো- কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষন? মহাকাশে ছুটবে বাংলাদেশের পতাকা। গড়াচ্ছে সময় আর লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে উত্তেজনার পারদ। কাউন্ট-ডাউনও শুরু হলো ঠিকঠাক। তারপর? তারপর সবশেষ। বৈরি আবহাওয়ার কারণে স্থগিত উৎক্ষেপন। ইচ্ছা হচ্ছিল হাতের গ্লাসটা টিভির পর্দায় ছুড়ে মারি, গলা ছেড়ে কাঁদি।

বিজ্ঞাপন

পরের দিন আবার সেই একই উত্তেজনা। একইভাবে হার্ট রেটের বুলেট ট্রেনের গতিতে ছুটে চলা। কাউন্ট-ডাউন চলছে। লিফট অফ বলামাত্র মহাকাশে ছুটতে থাকে বঙ্গবন্ধু -১। অবিশ্বাস্য! বাঙ্গালীর স্যাটেলাইট ছুটছে মাহাকাশে- দুলক-ভুলক-গোলক ভেদিয়া! একটা সময় ছিল যখন বানভাসি মানুষের আর্তনাদ আর ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডব আমাদের আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় নিয়ে যেত। আগাখান গোল্ডকাপ কিংবা আইসিসি ট্রফিতে সামান্য একটা বিজয় ছিল আমাদের সর্বোচ্চ প্রত্যাশা। আর আজ মহাকাশে আমরা- মহাকাশে বঙ্গবন্ধু।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে আমাদের কি প্রাপ্তি আমি সেই হিসাব কষি না। আমাদের নাকি আয় হবে অনেক, বাড়বে ইন্টারনেটের গতি, তুখোর হবে দূর্যোগের পূর্বাভাস- শুনছি এমন অনেক কিছুই। আমি এসবের থোরাই কেয়ার করি। আমার কাছে বঙ্গবন্ধু-১ বাঙ্গালীর এক ভিন্ন মার্গের অর্জন। এটি জাতি হিসেবে আমাদের নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। আমরা এখন বিশ্বের সেই এলিট ৫৭’র এর একটি যার পতাকা ঘুরছে মহাকাশে। প্রায়ই লেখায় আর বলায় পড়ি আর শুনি আমাদের নৌবাহিনী নাকি এখন ‘ত্রিমাত্রিক’। আমি তো বলি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুরো দেশটাই আজ ‘ত্রিমাত্রিক’। তিনি সমুদ্র জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের আয়তন বাড়িয়েছেন। ভারতের সাথে দীর্ঘ দিনের ছিটমহল সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের ভূ-মানচিত্রকে সম্প্রসারিত করেছেন। আমরা বেড়েছি আয়তনে। আর মহাকাশে যখন বঙ্গবন্ধু-১ তখনতো মহাশুণ্যেও আমরা। জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে এতো আমার ‘ত্রিমাত্রিক বাংলাদেশ’।
আর সবচেয়ে বড় কথা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের নিয়ে গেছে এমন এক উচ্চতায় যা শুধু আমার কাছে কেন বরং আমার আগে-পরের দু’য়েক প্রজন্মের কাছে ছিল স্বপ্নাতীত। বাঙ্গালীকে বঙ্গবন্ধু-১ নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে, নিজেকে চিনিয়েছে নতুন করে। আমরা বিশ্বাস করতে শিখেছি ‘আমরাও পারি’।

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় বাঙ্গালীর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। অথচ ‘৭৫-এর পর থেকে ক্রমাগত মিথ্যাচার আর মিথ্যার বেসাতিতে বাঙ্গালী তার সেই অর্জনও বিস্মৃত হয়েছিল। এই একটি বঙ্গবন্ধু-১ আমাদের মাঝে আবারো সেই হারানো বিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে। বঙ্গবন্ধু-১ -এর কাছ থেকে তাই আর চাওয়ার কিইবা আছে। অন্ততঃ আমারতো আর কিছু চাই না।

একদিন হেনরি কিসিঞ্জার সাহেব বলেছিলেন বাঙ্গালীর ঝুড়ির নাকি তলা নাই। আর আজ তার দেশ থেকেই উৎক্ষেপিত হলো বঙ্গবন্ধু-১। আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় কিনেছি স্পেসএক্স-এর রকেট। ভাড়া নিয়েছি কেপ ক্যানাভেরেলের রকেট লঞ্চিং প্যাড, তাও নিজের টাকায়। আমাদের টাকার জোরেই মার্কিন মুলুকের আকাশ চিড়ে মহাকাছে বঙ্গবন্ধু-১। বাংলাদেশ আর বাঙ্গালীর যারা সমালোচক, কথায় কথায় আওয়ামী লীগের ভুল-ত্রুটি খুঁজে পান যে বা যারা, তাদের জন্য এরচেয়ে বড় চপেটাঘাত আর কি হতে পারে?

বঙ্গবন্ধু-১ যখন থেকে মহাকাশে পূরণ হয়েছে আমার প্রত্যাশার সবটুকুই। এরপর আর যা কিছু তার সবই বাড়তি পাওয়া। অতএব ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ধন্যবাদ ত্রিমাত্রিক বাংলাদেশের জন্য, ধন্যবাদ বাঙ্গালী হিসাবে আমাকে আরো একবার গর্বিত করার জন্য।

সারাবাংলা/পিএম

বিজ্ঞাপন

বাঘায় কৃষককে গলা কেটে হত্যা
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর