গায়েবী মামলায় বাণিজ্য, বিব্রত সরকার
১৫ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৯
গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তিনদিন কার্যত কোনও সরকার ছিল না দেশে। চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি উৎরিয়ে যখন স্বাভাবিক হতে শুরু হলো তখন থেকেই প্রতিপক্ষ দমনে সেই পুরনো ধারার আশ্রয়। ভূয়া মামলা, গায়েবী মামলার আদলে ঢালাও মামলা। যে সকল মামলায় ঢালাও আসামী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সে সব মামলায় ঘটনার সাথে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা না থাকার পরও চলতে থাকে এসব মামলায় ‘বাণিজ্য’। আর মামলা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেয় রাজনীতির মাঠে সোচ্চার থাকা জামায়াত-বিএনপি। তেমনই জানা যায়, দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে। বিগত ষোল বছরের দোহাই দিয়ে চলে এহেন কার্যক্রম।
পাশাপাশি নিরীহ ও ধনার্ঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করেও চলে মৌসুমী এ বাণিজ্যের বিস্তার। বিগত সরকারের আমলে যে অভিযোগ করে মুখের ফেনা পর্যন্ত ফেলেছে তৎকালীন বিরোধীদলগুলো। এখন সেই একই কাজ করে প্রতিপক্ষ দমনে ব্যস্ত। আদতে এখন প্রতিপক্ষ কারা? যারা রাজনীতিতে কখনোই বেনিফিশিয়ারি না তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে কি ফায়দা ওঠানো যাবে? মূলতঃ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতেই তেমনটি করা হচ্ছে বলেও পত্রিকায় খবরে প্রকাশ। যদিও পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল ঢালাও মামলা হলেও যেনতেন গ্রেফতার নয়। যদিও সে কথা খুব একটা মানা হচ্ছে বলেও মনে হয় না। আরও বলা হয়েছিল সম্পৃক্ততা না থাকলে গ্রেফতার নয়। সেটাও রক্ষা করা হচ্ছে না। যেহেতু পতিত সরকারের কর্মী, সমর্থক, নেতা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছে। তারা সকলেই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে ধরে নেওয়ার যুক্তিযুক্ত কোনও কারণও নেই তাহলে কেন এত এত ঢালাও মামলা। শুধুই কি পদ-পদবীর কারণে মামলায় জড়ানো হচ্ছে? যে সকল ঘটনায় থানায় অভিযোগ কিংবা এজাহার প্রদান করা হয় সে সকল মামলায় অভিযোগ যদি সুনির্দিষ্ট না হয় তবে এইসব মামলার ভবিষ্যৎই বা কি?
যদিও মামলার তদারকি কিংবা মামলা করতে অভিযোগ লেখা সবই মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা বিএনপি-জামায়াতই করেছে বলেও জানা গেছে। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় বাদী বা এজাহারকারী কি এত এত লোকের নাম-ধাম সংগ্রহ কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা আসামীদের সবাইকে চিনেন? যেহেতু আন্দোলনে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়েছিল সেক্ষেত্রে কয়জনকে চিনতে পারবেন? আর কয়জনেরই বা নাম জানেন? যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনি বা তারা চিনবেন বা চিনেছেন তাহলে কি দাঁড়ায়? যারা আন্দোলনের সময় মিটিং, প্রতিবাদ সভা কিংবা অস্ত্রবাজি করেনি তাদের নাম কে বা কারা সরবরাহ করল? আন্দোলনে কারা অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছে সেটা নিশ্চয়ই এতদিনে পরিষ্কার কিংবা খোলাসা হয়েছে। যদি না-ও হয় তবে সেটাও তদন্তে প্রকাশ পাবে বলেও যারা বিশ্বাস রাখছেন তাদের কি আদতে সঠিক তদন্তে ‘নট সেন্ট আপ’ করা হবে? যদি না হয় তবে গৎবাঁধা তদন্তে দায়সারা প্রতিবেদন দাখিলের অর্থই বা তাহলে কি?
একটা মামলা দেখা যায় অনেককে আসামী শ্রেণিভুক্ত করা হয়। সেইসব মামলায় যদি রাজনৈতিক প্রভাব না থাকে আর পুলিশ নির্মোহ তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করে আসামী হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১০-২০ জন। আর এই সকল মামলায় ঘটনাস্থল অনেকটা কাছাকাছি বা সন্নিকটে তাই বলে সকল এজাহারের বক্তব্য অনেকটা একই হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র এজাহারকারীর নামই পরিবর্তিত হয়েছে। আর প্রায় সকল মামলায় আসামীও ঘুরেফিরে একই। যা নিছকই হঠকারী। কারণ ক্রিমিনাল মামলায় কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে মামলার অভিযোগ লিখতে হয়। তার ব্যত্যয় ঘটলে মামলা প্রমাণ করাও দুষ্কর। এ পর্যন্ত সারাদেশে ৫ শতাধিক মামলা হয়েছে। আসামী করা হয়েছে ২০-৩০ হাজার। অজ্ঞাতনামা রয়েছে তারও বেশি। এই সকল মামলায় বেশিরভাগে আসামী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্যরা। সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। পাশাপাশি নিরীহ কিছু লোককে আসামী করার খবর পাওয়া গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়াও হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী। এ মামলাটি রুজু হয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালতের রামপুরা থানার আমলী আদালতে। যার নাম্বার সিআর ৯৯/২০২৪। এই হত্যা মামলার বাদী মোছাঃ সুফিয়া বেগম। তিনি বলছেন ৪৯নং ক্রমিকের আসামীকে চিনেন না। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই তিনি ঘটনার সাথে জড়িত নন তারপরও তিনি অভিযুক্ত। আর ফৌজদারী মামলার আসামী সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগ পাওয়ায় সাধারণের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করার অবকাশ রয়েছে। তিনি যদি পদে থাকা অবস্থায় আসামী হতেন তা হতো ভিন্ন। কিন্তু ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী শপথ নিলেন পুলিশের নাকের ডগায়! তাহলে কি আইন মানুষভেদে ভিন্ন? সবার জন্য সমান সুযোগের যে দাবী তা কি ভূলন্ঠিত হয় না? সরল মনে এ আমারও জিজ্ঞাসা। জানি না মামলায় কি আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। স্বাভাবিক নিয়মে এই মামলা এফআইআর হিসেবে রুজুর আদেশ হওয়ার কথা। অথবা পিবিআই বা অন্য কোনও সংস্থাকে তদন্তের আদেশ হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই। বাদী যদি না-ই চিনেন তবে নাম কিভাবে আসলো তালিকায় তা-ও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরী। এতে করে সারাদেশের চিত্র ফুটে উঠবে। কারণ, আন্দোলন ও সরকার পতনের পর যত মামলা হয়েছে কে কাকে আসামী করল তা অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা যাবে অনেক কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে হয়তো শুনতে পাবো।
সরকার থেকে যদিও স্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সরকার কোনও মামলা করছে না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলা করছেন। আর সেক্ষেত্রে বিগত সরকারের ন্যায় গায়েবী মামলা হচ্ছে। যা ঢালাও মামলা হিসেবে অভিহিত করে বলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে সরকার বিব্রত! এ ক্ষেত্রে আইন উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ নজরুলের কথাই ধরে নেওয়া যায় সরকারের বক্তব্য। সেক্ষেত্রে সরকারের কি কিছুই করণীয় নেই? আমার তো মনে হয় সরকার এই ক্ষেত্রে একটা সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে পারে। আনীত মামলায় তদন্ত সাপেক্ষে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের। নচেৎ দেখা যাবে একই ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। আর এজাহারকারী কিংবা বাদী যা-ই বলি না কেন কেউ কাউকে না চিনেও মামলায় বাদী হয়ে বসে আছেন। যদিও আইনে একই ঘটনার একাধিক মামলার ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু যদি আসামী ভিন্ন ভিন্ন হয়? সেক্ষেত্রে কি উপায় অবলম্বন করবে? যদি থানায় এফআইআর রুজু হয় সেক্ষেত্রে দুটি মামলা বা একাধিক মামলা হলে এক সাথে কিংবা একই তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করার বিধান আছে। সিআর মামলা থানায় আসার আগেই তো আসামীর তালিকায় নাম দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে চক্র। থানার মামলার ক্ষেত্রেও তেমন হবে। এতে কোনও সন্দেহ নেই।
আবার মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে কেউ যদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে কোনও রীট করে বসেন সেক্ষেত্রে কি হতে পারে বলে ধারণা করা যেতে পারে। যদিও ভুক্তভোগী উচ্চ আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে ক্ষান্ত দিয়েছেন। অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে। যারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আসামী হয়েছেন অথবা অন্য কোনও ব্যক্তিস্বার্থের চরিতার্থের জন্যই আসামী করা হয়েছে সঙ্গত কারণেই তারা নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থী হতে পারছেন না। আইনগত চর্চার কারণে নিম্ন আদালত জামিন না দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। উচ্চ আদালত অধিকাংশ মামলায় শুনতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। শুধুমাত্র একটা বেঞ্চ শুনানির জন্য ফাইল গ্রহণ করলেও এত বেশি ফাইলের স্তুপ যে যারা জমা দিচ্ছেন তারা হয়তো আগামী ছয় মাসের মধ্যেও তারিখ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এর মধ্যে যদি কেউ গ্রেফতার হয়ে যান তবে আইনি মারপ্যাঁচে পড়ে অনূণ্য তিন মাস হয়তো জেল খেটে ফেলবেন। আর এই অবস্থা যদি নিরপরাধ কোনও ব্যক্তির সাথে ঘটে থাকে, তবে এর দায় কে নেবে? ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির শুধু শারীরিক মানসিক কিংবা আর্থিক নয় সামাজিক পারিবারিক মর্যাদাহানি ঘটলে যে কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। রেশ বয়ে বেড়াতে হবে যুগযুগ। আবার পুলিশ যে যথাযথ তদন্ত করে সেই ব্যক্তিবিশেষকে ‘নট সেন্ট আপ’ করবে সে আশাও ক্ষীণ। কারণ ঠিক পরবর্তী সরকার যদি বিএনপি গঠন করে ধরে নেই। এই সকল মামলার চালিকাশক্তিও বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব। তাহলে সেই অবস্থায় সরকারী দলের নেতাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পুলিশ সত্য প্রকাশ করবে এমনটা ধারণা করাও যে বোকামী। আদতে সরকার পরিবর্তন হলেও পুলিশ সেই একই আছে। নৈতিক কোনও পরিবর্তন দেখা যাবে বলে মনে হয় না।
এই আলোচনার অর্থ এই নয়, যে সকল হত্যা সংঘটিত হয়েছে সেগুলো হয়নি। মূলত হত্যা হয়েছে যেমন সত্য তেমন এজাহারকারীও এত এত অভিযুক্ত আসামী চেনা দুঃসাধ্য। তাই বলে এতসব নাম-ধাম সংগ্রহ করে থানায় কিংবা আদালতে নালিশ আনায়ন মোটেই সহজসাধ্য নয়। আর কিছু দুষ্কৃতকারী সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফায়দা ওঠাতে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ তদন্তকালীন সময়ে নাম বাদ দিতে লেনদেন করতে ছক কষছেন। তাহলে কি দাঁড়ায়? সোজাসাপ্টা কথা হচ্ছে ‘মেলার কারবার, ধুলায় অন্ধকার’। কেউ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে আর কেউ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত। এরই মধ্যে দিয়ে ভুক্তভোগীর যা হওয়ার হয়ে যায়। কখনো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জেলে থাকলে কি নিদারুণ কষ্ট পোহাতে হয় তা কেবলই ভুক্তভোগী ও তার পরিবার জানে। আইন পেশায় না এলে তেমনটা খুব জানা না হলেও একেবারে যে অভিজ্ঞতা নেই তা নয়। কোনও অপরাধ ছাড়াই আমার পরিবারের এক সদস্য যখন সামাজিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার তখন ঢের টের পেয়েছিলাম। যদিও সেই মামলায় দায়রা আদালত থেকে খালাস পেয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত হয়েছিল। তা কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পেরেছিল? সামাজিক মর্যাদা কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে? যে গ্লানি বয়ে বেড়াতে হয়েছে তা? নিজের মনের কষ্ট বুকে চেপে এলাম আইন পেশায়। এসে দেখি আরও দূরাবস্থার চিত্র।
একদিকে সরকারের কাছে নিত্যনতুন দাবী। যে দাবী আদায়ে উপর্যুপরি চাপ। অন্যদিকে সরকারের কাজেও মানুষ সন্তুষ্ট বলে মনে হচ্ছে না। শুরু থেকেই বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না এই সরকারের। যতটুকু আশা নিয়ে মানুষ সরকার পরিবর্তন চেয়েছে ঠিক ততটুকুই হতাশ করেছে। যেটা উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কথায়ও স্পষ্ট হয়। যিনি অকপটে বলে ফেললেন, ‘আগে সরকারের সমালোচনা করতাম আর মানুষ মাথায় তুলে নাচতো। এখন এত কাজ করি শুধু সমালোচনা পাই।’ তিনি অনেকটা অনুযোগ নিয়েই মিডিয়ায় কথাগুলো বললেন। তাতে কি বোঝা যায়? যত যা-ই কাজ করুক সমালোচনা থাকবে। সমালোচনা কেউ বন্ধ করতে পারবেও না। আর এতে করেই সরকার সঠিক পথে পরিচালিত হবে।
নতুন তিন উপদেষ্টার মধ্যে দুই উপদেষ্টাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। তাদের অপসারণ চেয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সরকারের অন্য কেউ এতে মুখ খুলছেন না। কেবল মিডিয়ার চাপাচাপিতে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন। তাতে কি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সন্তুষ্ট? তাদের কর্মকাণ্ড এবং বক্তব্যে পরিষ্কার তারা সরকারের এই উপদেষ্টাকে ফ্যাসিবাদের দোসর মনে করে। আর তাকে অপসারণের প্রতিবাদে আয়োজিত সভা থেকে চট্টগ্রামে পাঁচজন আটক করায় ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ক্ষেপেছেন। দেখা যাক এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কি হয়?
যদিও এতদিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যা দাবী করেছে তা-ই বাস্তবায়িত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতার ব্যানারকে অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন মাঠে প্রেসার গ্রুপ হিসেবে থেকে সরকারের কাজকে বেগবান করতে সহায়তা করবেন তারা। কার্যত হলো উল্টো! প্রথম হোঁচট খেলো রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে অপসারণ ইস্যুতে। এতে সরকার দাবী কানেই তোলেনি। মাঠের আরেক সক্রিয় গ্রুপ রাজনৈতিক দল হিসেবে শক্তপোক্ত অবস্থানে থাকায় সাংবিধানিক সংকটের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রপতি অপসারণে বাদ সাধে। আর দ্বিতীয় হোঁচট খেলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী আকিজ গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উপদেষ্টা পরিষদে যোগদান। দেখা যাক এখন কি ঘটে? আদতে কি সরকার পরিচালনা করছেন উপদেষ্টা পরিষদ নাকি প্রেসার গ্রুপ ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
আমরা দেখতে চাই সুস্থির বাংলাদেশ। রাজনীতির পটপরিবর্তন যেন মানুষের কল্যাণে হয়। মানুষ যেন আর দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করতে না হয়। সরকার আসবে যাবে জনগণ থাকবে। কেউ যেন জনগণকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। শাসক নয় প্রকৃত সেবকের হাতেই উঠুক দেশ পরিচালনার ভার। এর মধ্যে যাতে কেউ অনাচার কিংবা অবিচারের শিকার না হন। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। না হলে একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। যা কখনোই কাম্য নয়। ঘটনাকেন্দ্রিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার হোক আর প্রকৃত দোষী ব্যক্তিরা শাস্তি পাক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক।
লেখক: আইনজীবী
সারাবাংলা/এসবিডিই
গায়েবী মামলা ড. আসিফ নজরুল বিব্রত সরকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া শেখ হাসিনা