ঝিমিয়ে পড়া গতি পেছনে ফেলে স্বপ্নচূড়া স্পর্শের চেষ্টায় সারাবাংলা
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:০০ | আপডেট: ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:০৯
মানুষ তো কত কী হতে চায়! আগে-পিছে না ভেবে আমি হতে চেয়েছিলাম ‘সাংবাদিক’। সে কারণে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই ‘মহান’ এ পেশায় ঢুকে পড়েছিলাম। সংবাদপত্রে কাজ করতে করতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনটাও হয়ে গেল। শুরুর অভিজ্ঞতা খুব ভালো ছিল না। সে গল্পটা সারাবাংলার পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে লিখেছিলাম। আজ আর ওদিকে না যাই।
ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে সাংবাদিকতায় আমার যাত্রা শুরু। প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল ‘দুই নেত্রী’র সাবজেল গেট কাভার করা। শুরুর আনন্দে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আসাদ গেটে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন দেখা করতে আসতেন। কে এলেন, কী নিয়ে এলেন— সেগুলো লিখে অফিসে পাঠানো ছিল আমার কাজ।
মাঝে-মধ্যে ‘দুই বন্দি’কে নিয়ে কথা বলতেন পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি, প্রিজন) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। সেটি হতো সেই দিনের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট! আমরা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়তাম।
১৮ বছর আগের এই কাহিনী কেন লিখতে বসলাম, তাও আবার পেশাগত জীবনের অতি ব্যক্তিগত বিষয়? হ্যাঁ, যোগসূত্র তো আছেই! আমার সাংবাদিকতার শুরুটা যেমন পরিবেশে হয়েছিল, অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সে রকম। বলতে গেলে একটা নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে সাত বছর পূর্ণ করে সারাবাংলা আট বছরে পা দিয়েছে। প্রিয় এ প্রতিষ্ঠানে আমারও সাত বছর পূর্ণ হলো। যোগদানের সময় ও তারিখ বিবেচনায় এই মুহূর্তে সারাবাংলায় আমি ‘প্রবীণতম’ ব্যক্তি! সুতরাং এখানে আরেকটা সম্পূরক প্রশ্ন এসে যায়— এক জায়গায় একটানা এতদিন কেন?
এ প্রশ্নের সম্মুখীন মাঝে-মধ্যেই হতে হয়। সে কারণে উত্তরটা সব সময় প্রস্তুত করে রাখি। আগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীওতে বলেছি, আজও বলছি— খুব ধুমধাম করে যাত্রা শুরুর পর বছর না যেতেই ‘মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে/ আমি আর বাইতে পারলাম না’ টাইপের ঘটনা গণমাধ্যম পাড়ায় অনেক দেখেছি। অথবা ‘দোকান খোলা রেখে বেচা-কেনা বন্ধ রাখার’ নজিরও কম দেখিনি। অর্থাৎ মিডিয়া খোলা থাকবে, বন্ধ থাকবে বেতন-ভাতা। আর সাংবাদিক নামক ভিনগ্রহের প্রাণীগুলো বেঁচে থাকবে হাওয়া-বাতাস খেয়ে!
সারাবাংলায় কাজ করার সুবাদে এই টাইপের সাংবাদিকতার অভিশাপ থেকে পরম করুণাময় আমাদের সবাইকে হেফাজত করেছে। গত ৮৪ মাসে বেতন-ভাতা নিয়ে একবারের জন্যও ভাবতে হয়নি— মিডিয়াতে যেটা রীতিমতো অকল্পনীয়!
কিন্তু ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর গাজী গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে সারাবাংলার পথচলা কঠিন করা হলো। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রাপথ থেমে যাচ্ছে— এমনটিই ভাবতে বাধ্য হলাম সবাই। অবশেষে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগণ্য ব্যক্তি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী দায়িত্ব নিলেন সারাবাংলার, দায়িত্ব নিলেন এখানে কর্মরত প্রায় শতাধিক মানুষের।
এই মুহূর্তে সারাবাংলা নতুন উদ্যমে, নতুন পরিবেশে, বৃহৎ পরিসরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বাড়তি জনবল। নতুন-পুরোনের সমন্বয়ে বাড়ছে কাজের গতি। মাঝের ঝিমিয়ে পড়া গতি পেছনে ফেলে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নচূড়া স্পর্শের চেষ্টায়রত সারাবাংলা।
ও হ্যাঁ, সারাবাংলার মালিকানা পরিবর্তন হলেও বিশুদ্ধ সংবাদ পরিবেশনের যে নীতি, সেটা পরিবর্তন হয়নি। তারপরও আমাদের কোনো ‘বাড়াবাড়ি’ বা ‘কমতি’ যদি পরিলক্ষিত হয়, তাহলে সেটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সারাবাংলার পাঠক, শুভানুধ্যায়ী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকল।
লেখক: স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা
সারাবাংলা/টিআর