রোহিঙ্গা সংকট: ফেলে আসা ২৪ ও আগামীদিনের প্রত্যাশা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৭
২০২৪ সালের শুরু থেকেই মিয়ামারের আভ্যন্তরীণ সংঘাত ও রাখাইনে আরাকান আর্মির (এ এ) সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলমান থাকায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নেয়া পাইলট প্রকল্পের কার্যক্রম থেমে যায়। মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসার সম্ভাবনা এখনও অনিশ্চিত হওয়ায় রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি আরও জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা কমে আসায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর চাপ পড়ছে। রোহিঙ্গারা ব্যাপক হারে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যাচ্ছে এবং এতে স্থানীয়রা আতঙ্কিত। বাংলাদেশ সরকার, জন্মসনদ, এনআইডি ও পাসপোর্ট করতে রোহিঙ্গাদের যারা সহায়তা করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে এবং ইতিমধ্যে যারা এগুলো সংগ্রহ করেছে তা বাতিল করারও নির্দেশ দিয়েছে। সৌদি আরব বাংলাদেশের পাসপোর্টে সেদেশে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা তৈরি বাংলাদেশকে তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য জানায়। বাংলাদেশ সরকার পাসপোর্টগুলো নবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য ২০২৪ সালের জে আর পি তে ৮৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার চাওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭.৬ মিলিয়ন, জাপান ২.৬ মিলিয়ন ডলার এবং নরওয়েও ৬.৫ মিলিয়ন ক্রোনার দেয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ২০২৪ সালে এক কোটি মার্কিন ডলারের মানবিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ইউএনএইচসিআর, আইওএম, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং ইউএনএফপিএ’র মাধ্যমে এ সহায়তা দেওয়া হবে। বাংলাদেশকে এই সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সকল অংশীজনকে সাথে নিয়ে নানামুখী উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে।
মিয়ানমার ও রাখাইন পরিস্থিতি_
২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর জাতিগত সংখ্যালঘু তিনটি গোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি একত্রে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে জোট গঠন করে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত হামলা শুরু করে। অপারেশন ১০২৭ এর অংশ হিসেবে ১৩ নভেম্বর আরাকান আর্মি রাথেডং, মংডু ও মিনবাইয়া শহরে পাঁচটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। আরাকান আর্মি জানুয়ারী মাসে রাখাইন রাজ্যে একটি ‘জান্তা-মুক্ত-জোন’ প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। চীনের মধ্যস্থতায় ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স ১০ জানুয়ারি থেকে উত্তর-পূর্ব শান রাজ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। মিয়ানমার জান্তা এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করায় টিএনএলএ ২৫ জুন থেকে অপারেশন ১০২৭- ফেজ ২ নামে পুনরায় জান্তার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। বর্তমানে রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চলমান এই সংঘর্ষ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রভাব রোহিঙ্গা সমস্যাকে আরও সংকটাপন্ন করছে।
আন্তর্জাতিক উদ্যোগ _
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ন্যাম সম্মেলনের সময় মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অনুকূল নয় এবং মর্যাদার সাথে নিরাপদে ফেরার মত পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং পরিস্থিতির উন্নয়নে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিলের পরিমাণ বাড়ানো খুবই জরুরি বলে মনে করে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। অস্ত্রবিরতি হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আবার আলোচনার পথ সুগম হবে বলে জানিয়েছেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
গ্রুপ অব সেভেন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ১৯ এপ্রিল ইতালির ক্যাপ্রিতে অনুষ্ঠিত জি-সেভেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরির প্রয়োজনীয়তা এবং রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিতের ওপর জোর দেয়। বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি ১০ জুলাই জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫৬তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এই প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের জন্য অপর্যাপ্ত ও কমে আসা আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা প্রদান করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ সহায়তা _
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অ্যামি পোপ ৭ মে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার এবং মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করে। ২২ মে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করে ও নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের পাশে থাকবে ও রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা কার্যক্রমে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতাও অব্যাহত রাখবে বলে জানায়। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট কেট ফোর্বস ৪ জুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এবং কক্সবাজারে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চলমান মানবিক কার্যক্রম পরিদর্শন করে। ৬ জুন কারিতাস ইন্টারন্যাশনালিজের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যালিস্টার ডাটন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও সহায়তার আহবান জানায়। কারিতাস রোহিঙ্গাদের জন্য ৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার ১৭ অক্টোবর উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করে। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা এবং তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ১.৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে এবং তাদের এই সমর্থন চলমান রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত মোট ২.২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা প্রদান করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, মিয়ানমারের অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানায় এবং সমগ্র অঞ্চল জুড়ে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ কমাতে সম্ভাব্য সব বিকল্প খুঁজতে অবিচল থাকার উপর গুরুত্ব আরোপ করে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। ৭০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩১৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান ও ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ। ৩১৫ মিলিয়ন ডলার অনুদানের সাথে এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে আরো ৩৮৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক পৃষ্টপোষকতায় ও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায়, ইউনিসেফ ও ব্র্যাক, ভাসানচরে ৩৮টি ক্লাস্টারে ১৮টি স্কুলের মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন, বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদন এবং সবজি চাষে সহযোগিতা দিচ্ছে। এসব কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯ শত ৫০ জনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাসিক আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার সার্বিক উন্নয়ন ঘটেছে। বর্তমানে ৮ হাজার ২২২টি রোহিঙ্গা পরিবারের ৩৫ হাজার ২৬ জন সদস্য সেখানে বসবাস করছে।
বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি _
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে এ এ’র চলমান সংঘাতের সময় গুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণে বাংলাদেশের ভেতরে দুজনের মৃত্যু ও ৯ জন আহত হয়। এপ্রিল মাসে নাফ নদীতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীর কাছে এ সব ঘটনার পর প্রতিবাদপত্র পাঠায়। মিয়ানমার থেকে আসা গোলাগুলির কারনে ৫ জুন থেকে প্রায় ১০ দিন ধরে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াত, যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায় এবং সেখান বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিরাপত্তাহীনতাসহ খাদ্য সংকটে পড়ে। বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে এ এ চলমান সংঘর্ষের কারনে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে বি জি পি ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শুরু করে। ১৫, ২৫ এপ্রিল ও ৯ জুন তিন দফায় ৭৫২ জন বি জি পি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। ১৪ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১২৩ জন বি জি পি সদস্য ও পরবর্তীতে মিয়ানমারে ফিরে যায়। বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে।
রোহিঙ্গা – রাখাইন উত্তেজনা _
রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে মোতায়েন করেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমার সরকারের পক্ষে লড়াই করার জন্য প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেয় এবং পরিকল্পিতভাবে উত্তর রাখাইনের পরিস্থিতিকে জটিল করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ানোর পরিকল্পনা করে। রাখাইনের মংডু দখলের পর জাতিগত বিদ্বেষ উস্কে দেওয়ার জন্য একজন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নির্মম সেনাঅভিযানের আগে ফেসবুকের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ঘৃণা ছড়ানো হয়েছিল এবং এর পেছনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাত ছিল বলে জাতিসংঘের তদন্তে উৎঘাটিত হয়েছে। ফেসবুক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারনে ২০২১ সালে রোহিঙ্গারা ফেসবুকের বিরুদ্ধে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মামলা করে।
সংকট নিরসনে নেয়া উদ্যোগ _
জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ত্রাণ সংস্থা স্পেশাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমার ১৯ আগস্ট এক বিবৃতিতে রাখাইন রাজ্যে একটি মানবিক করিডোর চালু করতে এবং রাষ্ট্রের সব জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কাছে ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য আরাকান আর্মির প্রতি আহ্বান জানায়। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিনটি প্রস্তাব দেন। জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে সব স্টেকহোল্ডার নিয়ে সম্মেলন আহ্বান করে সংকটের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহ্বান জানায়। একই সাথে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানকে শক্তিশালী করে ত্রান সহায়তা বাড়ানোর জন্য আরও রাজনৈতিক চাপ দেয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যামূলক অপরাধ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির ব্যবস্থাকে গুরুত্বসহকারে সমর্থন করার প্রস্তাব করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টার থমাস অ্যানড্রুজের সাথে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময় রোহিঙ্গাদেরকে তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘের সহায়তা চায়। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করছে এবং একই সাথে আন্তর্জাতিক আদালতের আশ্রয় নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময়ে নেয়া পরিকল্পনা অনুসারে রোহিঙ্গাদের ওপর আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার বিষয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
রোহিঙ্গাদেরকেও তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন থাকতে থাকে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শিক্ষিত করা প্রয়োজন। শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদেরকে আত্মনির্ভরশীল করা গেলে তারা নিজেদের অধিকার নিশ্চিতে কাজ করতে পারবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আগামী দিনগুলোতে মিয়ানমারে যে সরকারই আসুক না কেন আরাকান আর্মি রাখাইনের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। আরাকান আর্মিকে সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রধান উপদেষ্টা একজন উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন, যা একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। তিনি গভীরভাবে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সব অংশীজনদের সাথে আলোচনা ও সমন্বয় করবেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্য সকল অংশীজনদেরকে একত্রে কাজ করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের মোকাবেলায় একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। যে কোন পরিস্থিতিতে ত্রান ও আর্থিক সাহায্য চলমান রাখতে জরুরী ভিত্তিতে আপতকালিন ব্যবস্থা গ্রহন ও রিজার্ভ গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতা ও নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে এ এ, জাতীয় ঐক্যের সরকার এবং অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে অর্থবহ রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করতে হবে। সবশেষে, ২০২৪ সাল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আগস্ট মাসে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ও ডিসেম্বরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে আসায় নতুনভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২০২৫ সালে অর্থবহ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে এটাই কাম্য।
লেখক: এন ডি সি, এ এফডব্লিউ সি, পি এস সি, এম ফিল (অব.), মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক
সারাবাংলা/এএসজি
ব্রি. জে. হাসান মো. শামসুদ্দীন (অব.) মত-দ্বিমত রোহিঙ্গা সংকট