Saturday 12 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভিউয়ের লোভে সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুরতা: করণীয় কী?

ড. মতিউর রহমান
১২ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৩৯

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। এই ভার্চুয়াল জগতে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ এবং আর্থিক উপার্জনের হাতছানি অনেককেই আকৃষ্ট করে। তবে এই আকর্ষণ এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে, কিছু মানুষ নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যেকোনো কাজ করতে দ্বিধা করছেন না। সম্প্রতি আশুলিয়ায় সংঘটিত একটি ঘটনা আমাদের সমাজের এই অন্ধকার দিকটি আরও একবার উন্মোচিত করেছে। যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউ এবং অর্থ উপার্জনের লোভে এক মা তার নিজের সন্তানদের প্রতি অমানবিক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

শারমিন শিলা, যিনি সামাজিক মাধ্যমে ‘ক্রিম আপা’ নামে পরিচিত, তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগটি হলো, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয়তা লাভ এবং অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে নিজের সন্তানদেরকে ক্যামেরার সামনে এনে নানাভাবে নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করতেন। সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দায়ের করা এই মামলাটি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের একটি উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত।

বিজ্ঞাপন

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, শারমিন শিলা পেশায় একজন বিউটিশিয়ান এবং বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি করেন। নিজের ব্যবসার প্রচার এবং ব্যক্তিগত পরিচিতি বাড়ানোর জন্য তিনি নিয়মিতভাবে তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতেন। গত ৩০শে মার্চ তারিখে তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যা জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শারমিন শিলা তার আনুমানিক দুই বছর বয়সী শিশুকন্যাকে জোর করে মুখে চাপ দিয়ে ধরে কেক জাতীয় কিছু খাওয়াতে বাধ্য করছেন। শিশুটি যখন অনিচ্ছা প্রকাশ করছে, তখনও তিনি তার ওপর বলপ্রয়োগ করছেন। শুধু এই একটি ঘটনাই নয়, এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, শারমিন শিলা দীর্ঘদিন ধরে তার সন্তানদেরকে জোর করে ক্যামেরার সামনে এনে তাদের চুল কাটা, রং করা, কানে ভারী দুল পরানো, মুখে কুলকুচি করানো এবং অপমানজনক গালিগালাজ করতেন। এমনকি ভাইরাল হওয়ার জন্য তিনি তার সন্তানদেরকে থাপ্পড় মারতেন এবং শারীরিক কষ্ট দিতেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এই ধরনের অমানবিক আচরণের কারণে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং তাদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এই ঘটনাটি আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহারের একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। একজন মা, যিনি সন্তানের সবচেয়ে কাছের এবং ভরসার জায়গা, তিনিই যখন নিজের স্বার্থের জন্য সন্তানের প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ করেন, তখন তা সমাজের জন্য একটি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভিউ এবং লাইকের মোহে অন্ধ হয়ে শিশুদেরকে পণ্যের মতো ব্যবহার করা এবং তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিঃসন্দেহে যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমে মানুষ সহজেই নিজেদের ভাবনা, মতামত ও প্রতিভা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। তবে এর একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে। যেখানে কিছু মানুষ অতি দ্রুত পরিচিতি লাভ এবং অর্থ উপার্জনের লোভে নীতি-নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করে যায়। শিশুদের মতো অসহায় প্রাণীদেরকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করা কেবল অমানবিকই নয়, এটি একটি গুরুতর অপরাধও বটে।
শারমিন শিলার বিরুদ্ধে শিশু আইনের ৭০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ধারায় শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা ও তাদের অধিকার লঙ্ঘনের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইতিমধ্যেই অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। তবে শুধু আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমেই এই ধরনের ঘটনা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের বুঝতে হবে যে, সামাজিক মাধ্যমে ক্ষণস্থায়ী জনপ্রিয়তার লোভে সন্তানদেরকে ব্যবহার করা তাদের ভবিষ্যতের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ অপরিহার্য। কোনো প্রকার চাপ বা নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের প্রতিভা বা পরিচিতি তৈরি করা যায় না। বরং এর ফলে তাদের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোরও এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের উচিত এমন নীতিমালা তৈরি করা এবং তার কঠোর প্রয়োগ করা, যাতে কোনো ব্যক্তি শিশুদেরকে ব্যবহার করে অমানবিক বা অপমানজনক কনটেন্ট তৈরি করতে না পারে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে এমন ব্যবস্থা থাকা উচিত, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই এই ধরনের কনটেন্ট রিপোর্ট করতে পারে এবং কর্তৃপক্ষ দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোকেও এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তারা সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে পারে এবং ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের অধিকার এবং নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে।

এই ঘটনাটি আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয় যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার যেন কোনোভাবেই আমাদের মানবিক মূল্যবোধ এবং নীতি-নৈতিকতাকে ছাড়িয়ে না যায়। ভার্চুয়াল জগতে লাইক ও ভিউয়ের পেছনে না ছুটে আমাদের বাস্তব জীবনে মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সংবেদনশীলতা বজায় রাখতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের প্রতি আমাদের আরও বেশি যত্নশীল হতে হবে, কারণ তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ।

শারমিন শিলার ঘটনাটি একটি সতর্কবার্তা। এটি আমাদের সমাজের সেই দিকটি উন্মোচিত করে, যেখানে কিছু মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য শিশুদের জীবনকে বিপন্ন করতেও দ্বিধা করে না। এই ধরনের প্রবণতা রুখতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই আসুন, আমরা সকলে মিলে এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই এবং শিশুদের একটি সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করি।

এই মামলার দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত বিচার হওয়া প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এমন জঘন্য কাজ করার সাহস না পায়। একই সাথে, আমাদের সমাজের প্রতিটি সদস্যকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি সুস্থ ও মানবিক সমাজ গঠনে শিশুদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও সুরক্ষা অপরিহার্য।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউ এবং জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য সন্তানদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। শারমিন শিলার ঘটনাটি এই সমস্যার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই ধরনের অমানবিকতা বন্ধ করতে এবং শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

প্রথমত, অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। অনেক অভিভাবক হয়তো না বুঝে বা শুধুমাত্র সাময়িক খ্যাতির লোভে তাদের সন্তানদেরকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলেন। তাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, সামাজিক মাধ্যমে অর্জিত ক্ষণস্থায়ী জনপ্রিয়তা তাদের সন্তানের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করা, তাদের ইচ্ছাকে সম্মান জানানো এবং তাদের নিরাপদ ও স্বাভাবিক বিকাশের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা প্রত্যেক অভিভাবকের প্রধান দায়িত্ব। বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে অভিভাবকদের এই বিষয়ে সঠিক ধারণা দেওয়া যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের উচিত এমন অ্যালগরিদম এবং নীতিমালা তৈরি করা, যা শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বা শোষণমূলক কনটেন্টকে চিহ্নিত করতে এবং দ্রুত সরিয়ে ফেলতে সক্ষম। ব্যবহারকারীদের জন্য অভিযোগ জানানোর একটি সহজ ও কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা করতে হবে।

তৃতীয়ত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশু আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। শারমিন শিলার মামলার দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার এই ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক উদাহরণ স্থাপন করতে পারে। এছাড়াও, শিশুদের অধিকার সুরক্ষা এবং তাদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে তা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

চতুর্থত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদেরও এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্কুলগুলোতে শিশুদের অধিকার, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদেরকে সহানুভূতিশীল হতে এবং যেকোনো ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উৎসাহিত করতে পারেন।

পঞ্চমত, গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজ এই বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা এই ধরনের ঘটনার ভয়াবহতা এবং শিশুদের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে জানাতে পারে। বিভিন্ন আলোচনা সভা, সেমিনার এবং প্রচারণার মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করা যেতে পারে।

ষষ্ঠত, প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধ এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে বা অন্য কোনো মাধ্যমে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ দেখতে পান, তবে তার উচিত হবে অবিলম্বে সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো। নীরব থাকা বা এড়িয়ে যাওয়া এই ধরনের অপরাধকে আরও উৎসাহিত করতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, ভিউয়ের লোভে সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুরতা একটি জটিল সামাজিক সমস্যা। এর সমাধানে কোনো একক পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। সমাজের সকল স্তরের মানুষের সমন্বিত এবং সচেতন প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই অমানবিক প্রবণতা রোধ করা সম্ভব। আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি শিশু নিরাপদে বেড়ে উঠবে এবং তাদের অধিকার সুরক্ষিত হবে।

লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী

সারাবাংলা/এএসজি

ড. মতিউর রহমান ভিউয়ের লোভ মত-দ্বিমত সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুরতা

বিজ্ঞাপন

ছবির গল্প মার্চ ফর গাজা
১২ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৪৫

আরো

সম্পর্কিত খবর