সরিষা ক্ষেতে মধু চাষ
১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৩৯
সে এক অপরূপ দৃশ্য। চোখ মেললেই মন জুড়িয়ে যায়। পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে হলুদ গালিচায়। সরিষার রূপ আর গন্ধে মাতোয়ারা চারিধার। আর তারই বুক জুড়ে মৌমাছি, প্রজাপতির অবিরাম খেলা। এর মধ্যেই সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ক্ষেতের পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। মৌমাছিরা সরিষার ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে তুলে নেয় মধু, আর সেই মধু সংগ্রহ করতেই যেন মৌয়ালরা উৎসবে মেতেছেন। ফুলে-মৌমাছিতে-মানুষে প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেছেন সারাবাংলার সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট হাবিবুর রহমান
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের সাতগাঁও গ্রামে সরিষার মৌসুমে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মধু সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন মৌচাষিরা।
শুরুটা অবশ্য ‘মতিমধু’ মৌচাষ প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রায় দুই যুগ আগে এই সাতগাঁওয়ে সরিষা মধু সংগ্রহের প্রকল্প শুরু করে তারা। মধু চাষ করে অর্জন করেছে জাতীয় পুরস্কারও। তাদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েই শুরু হয় দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌচাষিদের আনাগোনা।
মৌচাষিরা জানালেন, সরিষা ক্ষেতে মধু চাষ খুবই লাভজনক। এতে কৃষক ও মধু চাষি— দু’পক্ষই লাভবান হন৷ ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাড়তি ফলন পান কৃষক, আর মৌচাষিরা পান মধু।
মৌচাষিরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে ৮-১০টি মোম দিয়ে তৈরি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়।
প্রতিটি মৌ বাক্সের ভেতরে রাখা হয় রানি মৌমাছি। ফুল থেকে মৌমাছিরা মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। বাক্সে একটি রানি মৌমাছি রাখা হয়৷ রানি মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। চাকের বাক্সের মাঝখানের নিচে ছিদ্র করে রাখা হয়। সে পথ দিয়ে মৌমাছিরা আসা-যাওয়া করতে থাকে।
মৌচাষিরা জানান, বাক্সের ভেতরের চাকগুলো মধুতে পরিপূর্ণ হতে সময় লাগে ছয় থেকে সাত দিন। এরপর মধু চাষিরা বাক্স খুলে চাকের ফ্রেম থেকে মেশিনের মাধ্যমে মধু বের করে নেন।
এদিকে, সরিষা চাষিরা বলছেন, সরিষা ক্ষেতগুলো সাধারণত দেড় মাসের মতো ফুলে ফুলে ভরে থাকে। যতদিন ফুল থাকে, ততদিনই চলে মধু সংগ্রহ।
সারাবাংলা/টিআর