জনকণ্ঠে গণছাঁটাইয়ের অভিযোগ
১৫ মার্চ ২০২১ ১৫:৩১ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২১ ১৬:৫৩
ঢাকা: বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের ইস্যু তোলায় দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় সাংবাদিক-কর্মচারীদের গণছাঁটাই করার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের জনকণ্ঠ ইউনিট প্রধান রাজন ভট্টাচার্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাংবাদিক-কর্মচারীদের ভবনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। জনকণ্ঠ ভবনে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। আমরা বিকেল ৪টায় জনকণ্ঠ ভবনের সামনে সমাবেশের ডাক দিয়েছি।’
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে জনকণ্ঠের সাংবাদিক ও কর্মচারীদের প্রমোশন নেই। ইনক্রিমেট দেওয়া হচ্ছে না। অষ্টম ওয়েজ বোর্ড পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এ সব দাবি বাস্তবায়নের জন্যে আমরা জনকণ্ঠ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।’
রাজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘কয়েকদিন আগে জনকণ্ঠ ভবনে এক বৈঠকে সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা চিঠিতে জানিয়েছিলাম ১৫ মার্চের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু সাংবাদিক কর্মচারীদের মেইলে ছাঁটাইয়ের চিঠি দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিক কর্মচারীদের ভবনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভাড়াটে গুণ্ডা মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে।’
প্রায় শ খানেক সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন জনকণ্ঠে কর্মরতরা। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত সহকর্মী যাদের সঙ্গে কথা বলছি তাদেরই চাকরি নেই। তারাই চিঠি পেয়েছেন।
জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার বিভাষ বাড়ৈ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার চাকরি কী কারণে গেছে আমি জানি না। অন্যদের চাকরিও কী কারণে গেছে আমরা জানি না। একটা কারণ হতে পারে এই যে, এখানে মালিক তিন চার জন লোকের দ্বারা প্রভাবিত হয়। যারা একজনও সাংবাদিক নন। যারা গ্লোবের কয়েকটি ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। যারা গত এক যুগ ধরে প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও দুর্নীতি করে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করেছে। আমরা সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাদের এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম। এ কারণে তারা মালিককে ভুল বুঝিয়ে প্রতিষ্ঠানকে অস্থির করে থাকতে পারে। কারণ ছাঁটাইয়ের এ ঘটনা জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান, প্রধান বার্তা সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং প্রধান প্রতিবেদক ওবায়দুল কবির এরা কেউই জানে না।’
এ বিষয়ে জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিক উল্লাহ খান মাসুদকে কল করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘স্যার মিটিংয়ে আছেন। এখন কথা বলতে পারবেন না।’
জনকণ্ঠের কোনো সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘সকাল থেকেই তো আমরা অফিসে আছি। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘জনকণ্ঠ থেকে ফোন এসেছিল, সেখানে গোলযোগ হতে পারে। সে জন্য একদল পুলিশ উপস্থিত রয়েছে। কিছুক্ষণ পর সেখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আসার কথা রয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘সাংবাদিকদের ছাঁটায়ের কারণে মালিকপক্ষের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। সে কারণে সাংবাদিক ও মালিকপক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।’
উল্লেখ্য, দাবি-দাওয়া আদায়ে গত বৃহস্পতিবার সমাবেশ করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ‘জনকণ্ঠ ইউনিট’ এবং দৈনিক জনকণ্ঠ সাংবাদিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। ইস্কাটনের জনকণ্ঠ ভবনের তৃতীয় তলায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জনকণ্ঠে কর্মরত দুই শতাধিক সাংবাদিক কর্মচারী সহ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত সমূহের মধ্যে রয়েছে, সাংবাদিক কর্মচারীদের কেউ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের পক্ষে নয়। আগের মতো প্রতিযোগিতামূলক পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখার দাবি সবার। আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে শ্রম আইন অনুযায়ি বঞ্চিতদের অস্টম ওয়েজবোর্ড হালনাগাদ, সকল সাংবাদিক কর্মচারীদের প্রমোশন ও ইনক্রিমেন্ট বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যায়ভাবে কোনো সাংবাদিক কর্মচারীকে ছাঁটাই করা যাবে না। জনকণ্ঠে কর্মরত সবাই অফিসের নিয়ম মেনে কাজ করতে বদ্ধ পরিকর।
জনকণ্ঠ ইউনিট চীফ রাজন ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, সাংবাদিক নেতা আতিকুর রহমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদুর রহমান জিহাদ, প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামানসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/ইউজে/একে