অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের প্রস্তাব তুলে ঘুষি খেলেন মোল্লা বারাদার
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:০৫ | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:৩৯
তালেবানের গৃহবিবাদের খবর বাইরে আসতে শুরু করেছে। কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে তালেবানের দুই শীর্ষ নেতা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ। সংঘর্ষের জেরে প্রাসাদে গুলাগুলিও হয়েছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকজন তালেবান।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তালেবানের শীর্ষ পর্যায়ের এক বৈঠক বসে। এতে পশ্চিমা দেশগুলোর স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব করেন তালেবান নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার। তবে তার এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা খলিলুর রহমান হাক্কানি। বৈঠক চলাকালে হাক্কানি তার আসন থেকে উঠে তালেবান নেতা বারাদারকে ঘুষি মারতে শুরু করেন।
বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালেবান নেতাদের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই বৈঠকে দুই নেতার বিবাদে তাদের দেহরক্ষীরাও জড়িয়ে পড়ে। এসময় তারা প্রতিপক্ষের উপর গুলিবর্ষণ করেন। এতে নিহত হন কয়েকজন তালেবান। এ ঘটনায় মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার আহত না হলেও তিনি রাজধানী কাবুল ছেড়ে কান্দাহারে চলে যান।
উল্লেখ্য যে, গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের মাধ্যমে আফগানিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাত করে তালেবান। ওইদিন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এর কয়েক সপ্তাহ পর গত ৭ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে তালেবান। উগ্রবাদী গোষ্ঠীটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মোল্লা ওমরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা হাসান আখুন্দকে সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনীত করে শীর্ষ নেতৃত্ব। মোল্লা আখুন্দ প্রতিবেশী পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত।
৭ সেপ্টেম্বর সরকার গঠনের পর মোল্লা বারাদারকে কাবুলে দেখা যায়নি বলে দাবি করে আসছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম। মোল্লা বারাদারের মৃত্যু হয়েছে বলেও খবর রটে। যদিও ওই সংবাদ ভিত্তিহীন প্রমাণ করতে মোল্লা বারাদারের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে তালেবান। এতে দেখা যায়, কান্দাহার প্রদেশে একটি সভায় অংশ নিয়েছেন মোল্লা বারাদার। তবে ওই ফুটেজটি সাম্প্রতিক সময়ের নাকি পুরাতন সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে আফগানিস্তানে সিরাজুদ্দিন হাক্কানির নিয়ন্ত্রিত প্রভাবশালী হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে মোল্লা বারাদারের অনুগতদের একটি সংঘর্ষ হয়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়। হাক্কানি নেটওয়ার্ক প্রধানত পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চলে ঘাঁটি গড়েছে। আফগানিস্তানে বেশিরভাগ মর্মান্তিক আত্মঘাতী হামলার জন্য হাক্কানি গ্রুপকে দায়ী করা হয়। যদিও হাক্কানি নেটওয়ার্কের দাবি—মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে খলিলুর রহমান হাক্কানির।
মোল্লা বারাদার দোহাভিত্তিক তালেবান নেতা। তিনি তালেবানের সাম্প্রতিক উত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের তিন দিন পর তিনি দোহা থেকে আফগানিস্তানে ফেরেন। মোল্লা বারাদার আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন। তবে চলতি মাসে তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতার ছেলে সিরাজউদ্দিন হাক্কানিকে।
সারাবাংলা/আইই