বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ুক সারাবাংলায়

December 6, 2023 | 11:33 am

আনোয়ার হাকিম

একটা সময় ছিলো যখন দৈনিক পত্রিকাই ছিলো দেশ-বিদেশের হাল-হকিকত জানার এক মাত্র উপায়। আর ছিলো রেডিও। এগুলো ছিলো একান্তে পড়ার ও শোনার মাধ্যম। আর আর প্রত্যন্ত অঞ্চল জুড়ে ছিলো সিনেমা হল। আপামর জনগণের বিনোদনের একমাত্র প্লাটফর্ম। তখন সাদা-কালো টিভিও ছিলো। তবে সেটা ছিলো সম্ভ্রান্ত ও পয়সাওয়ালাদের ড্রয়িং রুমের বিনোদন উপকরণ।

বিজ্ঞাপন

তখন শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজ তাদের শিক্ষা-দীক্ষায়, প্রভাবে-আচরণে, নেতৃত্বে-পরামর্শে ছিলো অগ্রণীর ভূমিকায়। তাদের চিত্ত ও জ্ঞানের খোরাক যোগাত রাজধানী থেকে ছাপার হরফে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা। পত্রিকার লেটার হেড থেকে শুরু করে সম্পাদক, প্রকাশের নাম-ধাম সব কিছুই ছিলো পড়ার বিষয়। ছিলো রাজনীতির খবরাখবর, বিশ্ব পরিস্থিতির সর্বশেষ খবর। সাপ্তাহিক আয়োজনে থাকত সাহিত্য পাতা, বিনোদন তথা সংস্কৃতির পাতা, মফস্বল খবরের পাতা, খেলাধুলার পাতা, ছোটদের পাতা প্রভৃতি। আরো থাকত বিশেষ সংখ্যা, দিবস ভিত্তিক ক্রোড়পত্র। দৈনিকের এই চিরচেনা আদল এভাবেই চলে আসছে বহুকাল ধরে।

তবে কালে কালে পরিবর্তনের ঢেউয়ে বিশ্বের মেরুকরণে সাধিত হয়েছে প্রভূত ভাঙাগড়া। গ্লোবাল ভিলেজে একাকার হয়ে গেছে পূর্ব-পশ্চিম আর উত্তর-দক্ষিণের তাবত রাষ্ট্র ও জাতি সত্ত্বা। নতুন প্রজন্মের উন্মেষ হয়েছে। উত্থান-পতনের চক্রে অর্থনীতির চাকা বিভিন্ন জোটের অংশী হয়েছে। অর্থনীতি সচল রাখার তাগিদে নিত্যনতুন উদ্ভাবন আর বিপণনের প্রসার হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তনের ছাপ সুস্পষ্ট। সংবাদমাধ্যম ও সংবাদপত্রও এর থেকে দূরে থাকতে পারে নি। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে সাদা-কালো দৈনিকে মাল্টি কালারের দখলদারিত্ব বেড়েছে। সনাতনী ছাপাকলের পরিবর্তে অফসেট রাজত্ব শুরু করে দিয়েছে অনেক আগে থেকেই। এখন তো হাতে বোনা অক্ষরের পরিবর্তে চলেছে কম্পিউটারের একচ্ছত্র আধিপত্য।

অনেক পরে এসেছে দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের কাল। সব ধরণের টাটকা খবরের পসরা নিয়ে সার্বক্ষণিক উন্মীলিত থাকছে দৈনিকের অনলাইন সংস্করণ। এর পর ওয়েব পোর্টালের কাল। পাঠকের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রিন্ট মিডিয়ার ডিজিটাল ভার্সন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত অনলাইন সংস্করণের সাথে সমানতালে পাল্লা দিয়ে চলেছে ওয়েব পোর্টালের চব্বিশ ঘন্টার সংবাদ প্রবাহ। দৈনিকে যা আছে, অনলাইন সংস্করণে যা আছে তার সবই আছে এই ওয়েব পোর্টালে। সবই হচ্ছে লেখক-পাঠকের চাহিদাকে সামনে রেখে। এ যেন লেখায়-রেখায় নিত্যদিনের ম্যাগাজিন।

বিজ্ঞাপন

প্রিন্ট বা অনলাইন যা-ই বলি না কেন, এসবকে ঘিরে পাঠকের প্রত্যাশা থাকে অনেক। নবীন-প্রবীন লেখকের লেখায় সমৃদ্ধ এই সব মাধ্যম যোগান দিয়ে যাচ্ছে নানাবিধ খোরাক। মনে রাখতে হবে, বুভুক্ষু পাঠকের চাহিদার প্রতি সম্মান দেখাতে না পারলে স্বকীয়তা নিয়ে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে। সরকারের তরফ থেকে জননিরাপত্তা বিধান, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা, অশ্লীলতা রোধ ও নীতি-নৈতিকতাকে সমুন্নত রাখার তদারকি অবশ্যই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। সুনাগরিকের চাহিদাও এর বিপক্ষে নয়। তবে পাঠকের, নাগরিকের চাহিদাপত্রে আরো থাকে নির্মল বিনোদন, সুস্থ সাংবাদিকতা, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। খবরের কাগজ আর ওয়েব পোর্টাল দলীয় মুখপাত্র হলে বা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যপূরণের প্রচারপত্র হয়ে পড়লে সেই দৈনিক বা ওয়েব পোর্টাল খুব সহজেই তার বিশ্বাসযোগ্যতা আর আস্থার জায়গা হারায়। পাঠক মুখ ফিরিয়ে নেয় তা থেকে। তখন তা হয়ে পড়ে মুষ্টিমেয় লোকের ইশতেহার। লেখকের দিক থেকেও চাহিদা থাকে। আর তা হলো নবীন-প্রবীনের লেখায়-রেখায় সংবাদ মাধ্যম হয়ে উঠবে চিন্তাশীলতার ও সৃজনশীলতার অন্যতম প্লাটফর্ম। লেখার মানে আপোষ করা হলে, মুখ দেখে প্রতিষ্ঠিতদের লেখা দিয়ে পাতা ভরে রাখলে পাঠকের অরুচি হতে পারে। একপেশে চিন্তার প্রতিফলন হতে পারে। এতে করে বহুমত প্রকাশের কন্ঠরোধ হতে বাধ্য। পরিশীলিত ও উন্নত ভাষা যে কোন পত্রিকার অলংকার স্বরূপ। বস্তুনিষ্ঠতা এর সারবত্তা। তাই পাঠকের চাহিদাও অনুরূপ। আজকাল সিন্ডিকেটের যুগ। আমাদের সমাজ জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের প্রতাপ দৃশ্যমান। সংবাদপত্র তথা সংবাদ মাধ্যমও এ থেকে মুক্ত না।

সারাবাংলা নিত্যদিনের সংবাদমাধ্যম। এর অঙ্গসৌষ্ঠব, বিষয় বস্তুর বৈচিত্র্য ও নবীন-প্রবীনের মুক্তমত-দ্বিমত ক্রমান্বয়ে স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে উদ্ভাসিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দীর্ঘ ছয় বছরের ধারাবাহিক শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখে বন্ধুর পথে অগ্রযাত্রা ও লেখক-পাঠকের আস্থা ধরে রাখা অনেক বড় ব্যাপার। টিকে থাকার এই সংগ্রাম, মননশীলতার উন্মেষ ঘটানোর এই প্রয়াস ও কোটারি স্বার্থের উর্ধে উঠার প্রচেষ্টা সারাবাংলাকে করতে পারে সারাবাংলায় আপামর মানুষের কাছে বরণীয় ও আদরণীয়।

৭ম বর্ষে পদার্পণের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সারাবাংলার সকলের প্রতি রইলো শুভ কামনা। শুভ হোক আগামীর পথ চলা। সারাবাংলা হয়ে উঠুক মুক্তচিন্তা চর্চার এক অনন্য প্লাটফর্ম । কলতানে মুখরিত থাক এর প্রতিটি বিভাগ। একজন পাঠক ও সৌখিন লেখক হিসেবে আগামীতে এই প্রত্যাশার যথাযথ প্রতিফলন দেখতে পাবো বলে আশা করি, বিশ্বাসও করি। সবার সুবোধ জাগ্রত হোক।

বিজ্ঞাপন

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন