নেইমার-কুতিনহোর ১০ বছরের বন্ধুত্বই তিতের মূল অস্ত্র
৬ জুলাই ২০১৮ ১৫:০১
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মূল শক্তি নেইমার-কুতিনহো। নেইমার খেলবেন ১০ নম্বর জার্সিতে আর কুতিনহো খেলবেন ১১ নম্বর জার্সিতে। এই দুইজনের বন্ধুত্বটাও দারুণ, বয়সটাও একই। মাঠেও দুই বন্ধুর দুর্দান্ত বোঝাপড়া এগিয়ে নিচ্ছে ব্রাজিলকে। অনেকেই বলাবলি করছেন, তাদের বোঝাপড়া এতটাই মসৃণ যে একে অপরের দিকে না তাকিয়েও নির্ভুল পাস দিতে পারেন। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হেক্সা জয়ের মিশনে কোচ তিতের বড় অস্ত্র এই দুই বন্ধু।
নেইমার-কুতিনহো জুটির পরিচয় ২০০৮ সাল থেকে। নেইমার ও কুতিনহোর বন্ধুত্বের পথ চলা শুরু হয়েছিল স্পেনের শহর বার্সেলোনাতে। সেবার আন্তর্জাতিক মেডিটেরিয়ান কাপে জিরোনাতে খেলতে গিয়েছিল ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৬ দল। সেই দলের সদস্য ছিলেন নেইমার-কুতিনহো। বন্ধু নেইমারকে নিয়ে বলতে গিয়ে কুতিনহো জানান, আমরা সেখানে সবাই ছিলাম, কিন্তু নেইমারের সঙ্গে আমার কথা এবং পরিচয় হয় সফরের তৃতীয় দিন। তখন আমাদের বয়স ছিল মাত্র ১৫। নেইমারকে আমি এতটাই পছন্দ করি যে বলে বোঝানো যাবে না। তার আর আমার খেলার ধরনও ছিল একই। শুরু থেকেই মাঠে আমরা একে অপরের সঙ্গে বোঝাপড়াটা বাড়িয়ে নেই, দুজনের কম্বিনেশনটা আমরাই ভালো বুঝতে পারি।
এক মৌসুম আগে স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেন নেইমার। আর নেইমারের জায়গা পূরণে লিভারপুল থেকে কিনে আনা হয় কুতিনহোকে। ইতিহাসের সবচেয়ে দামী ফুটবলার হিসেবেই পিএসজি নেইমারকে কিনে নেয় রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে। তার বিকল্প হিসেবে কুতিনহোকে কিনতে বার্সার খরচ হয়েছে ১৬০ মিলিয়ন ইউরো।
কথিত আছে, ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে খেলতে গিয়ে বার্সায় দলের এক নৈশভোজে সময়মতো পৌঁছতে পারেননি নেইমার। বন্ধুর অনুপস্থিতিতে কিছুই খাননি কুতিনহো। পরে একসঙ্গে খেয়েছেন, টিম হোটেলে ফিরেছেন। সংবাদমাধ্যম ঘেটে আরও জানা, গত ব্রাজিল বিশ্বকাপে লুই ফেলিপে স্কোলারির স্কোয়াডে বন্ধুর নাম না দেখে ভেঙে পড়েছিলেন নেইমার। পরে নাকি কুতিনহো নিজেই বুঝিয়েছেন নেইমারকে। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘সামনে অনেক বিশ্বকাপ পড়ে আছে। একদিন না একদিন আমরা ব্রাজিলের জার্সিতে দুজন পাশাপাশি বিশ্বকাপ খেলবো। সে কথাই সত্য হয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপে। পাশাপাশি থেকেই ব্রাজিলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই দুই বন্ধু।
নেইমার ১৯৯৯ সালে পর্তুগিজা সান্তিস্টায় নাম লেখান। ইয়ুথ ক্যারিয়ারে ২০০৩ সালে যোগ দেন সান্তোসে, খেলেছেন ২০০৯ পর্যন্ত। সান্তোসের মূল দলে এরপর খেলেছেন ২০১৩ সাল পর্যন্ত। এদিকে, ইয়ুথ ক্যারিয়ারে কুতিনহো ১৯৯৯ সালে যোগ দেন ভাস্কো দা গামায়। এরপর খেলেছেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। তারপরই কুতিনহোকে কিনে নেয় ইতালিয়ান জায়ান্ট ক্লাব ইন্টার মিলান। ২০১৩ পর্যন্ত ছিলেন সেখানে। এরই মধ্যে ভাস্কো দা গামা, এসপানিওলের হয়ে ধারে খেলেছেন। ২০১৩ সালে নেইমার যোগ দেন বার্সায়, খেলেছেন ২০১৭ পর্যন্ত। আর ২০১৩ সালে কুতিনহো যোগ দেন লিভারপুলে, খেলেছেন ২০১৭ পর্যন্ত। নেইমার এরপর চলে যান পিএসজিতে আর নেইমারের জায়গায় বার্সায় আসেন কুতিনহো।
এ ব্যাপারে কুতিনহো জানান, ২০০৮ সালে আমার আর নেইমারের মাঝে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল, সেটা এখনও আগের মতোই আছে। যদিও আমাদের কখনো একই ক্লাবে খেলা হয়নি, দুজনের পথ দুদিকে চলে যায়। নেইমার এখন ব্রাজিলিয়ানদের আইডল। সে আমাদের জাতীয় দলের প্রধান খেলোয়াড়। সে আমার কাছের বন্ধু, সতীর্থ। চেয়েছিলাম বার্সায় তার পাশে খেলবো, কিন্তু সেটা হয়নি। জাতীয় দলে তার পাশে খেলছি।
বিশ্বকাপে ব্রাজিলের স্বপ্নপূরণ নেইমার ও কুতিনহোর নৈপুণ্যে নির্ভরশীল বলেই দাবি করেছেন দেশটির সাবেক কিংবদন্তিরা। কোনো ম্যাচে নেইমার অনুজ্জ্বল থাকলে তার ঘাটতি পূরণ করেন কুতিনহো। দলে নেইমারকে ছাড়িয়ে নিজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে।
সারাবাংলা/এমআরপি