এশিয়া কাপের সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্মরণীয় জয়টা পেতে শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৫ রান। ওভারের প্রথম বলেই চার হাঁকিয়ে ম্যাচের উত্তেজনা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছিলেন জাকের আলী অনিক। পরে অবশ্য উত্তেজনা বেড়েছে বাংলাদেশের কারণেই। তিন বলের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারার শঙ্কাও জেগেছিল বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ওভারের পঞ্চম বলে গিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন নাসুম আহমেদ।
এশিয়া কাপের সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৪ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। আগে বোলিং করে শ্রীলংকাকে ১৬৮ রানে আটকে রেখেছিল লিটন দাসের বাংলাদেশ। পরে ১৯.৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করেছে লাল-সবুজের দল। বাংলাদেশের হয়ে দারুণ দুটি ফিফটি করেছেন সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয়।
দারুণ এই জয়ে এশিয়া কাপের সেমিফাইনালের সমীকরণে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। সুপার ফোরে বাংলাদেশ তাদের পরবর্তী দুটি ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে। ভারত এই মুহূর্তে শক্তির বিচারে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তানকে কিছুদিন আগেই সিরিজ হারিয়েছে বাংলাদেশ। সুপার ফোরে পাকিস্তানকে আরেকবার হারালে সেমিফাইনালের সমীকরণ উজ্জ্বল হবে বাংলাদেশের।
এশিয়া কাপের শুরুতে মনে হচ্ছিল সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয় দুজনও সেরা একাদশে নিশ্চিত নয়। আজ এই দুজনেই ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। তাওহিদ হৃদয় অনেকদিন ধরে অফ ফর্মে থাকলেও তাকে বাদ না দিয়ে টানা খেলিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আজ সুপার ফোরের বড় ম্যাচে প্রতিদান দিলেন হৃদয়।
ওপেনিং জুটিতে পারভেজ হোসেন ইমন বাংলাদেশ একাদশে অনেক আগ থেকেই মোটামুটি অটো চয়েজ। সেই ইমনকে বাদ দিয়ে ওপেনিংয়ে সাইফকে খেলিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। বাজিটা কাজে লাগিয়েছে দারুণভাবে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলংকার ১৬৮ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ শুরুতেই বড় ধাক্কা খেয়েছে। দারুণ ফর্মে থাকা তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ২ বল খেলে ফিরেছেন শূন্য রান করে। তবে অপর ওপেনার সাইফ হাসান ছিলেন দারুণ ছন্দে।
তিনে নামা অধিনায়ক লিটন দাসকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে তুলেছেন সাইফ। দারণ খেলতে থাকা লিটন ১৬ বলে ২৩ রান করে ফিরলে এই জুটি ভাঙে। এরপর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে দলকে টেনেছেন সাইফ।
দলীয় ১১৪ রানের মাথায় সাইফ যখন ওয়েনেন্দু হাসারাঙ্গার বলে আউট হয়ে ফিরছিলেন তখন তার নামের পাশে ৬১ রান খেলা। ৪৫ বলে খেলা সাইফের ইনিংসে চার ২টি আর ছক্কা ৪টি। সাইফ যে ভিত্তিটা মজবুদ করে দিয়েছিলেন এরপর শামীম হোসেন পাটোয়ারীকে সেটা আরও শক্ত করেছেন তাওহিদ হৃদয়।
অনেকদিন অফ ফর্মে থাকা হৃদয় আজ অফ ফর্মটা বুঝতেই দেননি। ৩১ বলে ফিফটি পূর্ণ করা হৃদয় ফিরেছেন বাংলাদেশ যখন জয় থেকে মাত্র ৯ রানে দূরে তখন। ফেরার আগে ৩৭ বলে ৪টি চার ২টি ছয়ে ৫৮ রান করেছেন হৃদয়। এরপর জাকের আলি অনিক ক্রিজে এসে তিন বলের ব্যবধানে দুই চার হাকিয়ে জয় একদম কাছাকাছি নিয়ে আসেন। তারপর সেই শেষ ওভারের নাটক!
দাশুন শানাকার করা শেষ ওভারের প্রথম বলে চার হাকানো জাকের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাকাতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড। ওভারের তৃতীয় বল ডট। চতুর্থ বলে হাকাতে গিয়ে শেখ মাহেদিও আউট। পঞ্চম বলে গিয়ে সিঙ্গেল নিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন নাসুম আহমেদ।
এর আগে বাংলাদেশের হয়ে দাপুটে বোলিং করেছেন মোস্তাফিুজর রহমান। টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো হয়নি। শরিফুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদকে শুরুর দিকে তুলোধুনু করেছেন শ্রীলংকান দুই ওপেনার। তাসকিন আহমেদ পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসে ওপেনিং জুটি ভাঙেন। ততোক্ষণে শ্রীলংকার স্কোর ৪৬ রান।
দলীয় পঞ্চাশের পর শ্রীলংকার অপর ওপেনার কুশল মেন্ডিসকে ফেরান শেখ মাহেদি। দুই ওপেনার ফেরার পর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারাচ্ছিল শ্রীলংকা। তবে মিডল অর্ডারের দাশুন শানাকাকে আটকে রাখতে পারেনি বাংলাদেশি বোলিং আক্রমণ।
শেষের কয়েকটা ওভারে রীতিমতো দাপট দেখিয়েছেন শানাকা। ৩৭ বলে ৩টি চার ৬টি ছয়ে শেষ পর্যন্ত ৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। ১২ বলে ২১ রান করেন অধিনায়ক চারিথ আশালাঙ্কা। ওপেনার কুশল মেন্ডিস ২৫ বলে ৩৪ ও অপর ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ১৫ বলে ২২ রান করেন।
২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রানে থেমেছে শ্রীলংকা। বাংলাদেশের হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ২০ রান খরচায় নিয়েছেন তিন উইকেট। ২৫ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন শেখ মাহেদি।