ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া তো বুঝলাম, বাংলাদেশের সুসময় আসবে কবে?
১৩ জুলাই ২০১৮ ২২:১৩
আব্দুল আজীজ, সাবেক ফিফা রেফারি
প্রথম বারের মত ফাইনালে আসার জন্য ক্রোয়েশিয়াকে অভিনন্দন জানাতে হচ্ছে। আসলে খেলা জিততে হলে মনের ইচ্ছা থাকা লাগে। সেটা ইংল্যান্ডের থেকে ক্রোয়েশিয়ার বেশি ছিল। আমি অবশ্য মনে করেছিলাম ইংল্যান্ড ফাইনাল খেলবে। তবে আমার মনের ভাবনা তো আর মাঠে খেলে দেয় না।
ইংল্যান্ড খুব তাড়াতাড়ি গোল পেয়ে যায়। ৫ মিনিটেই ফ্রিকিক থেকে গোলে এগিয়ে যায়। কিন্তু তাদের ভাবখানা দেখে মনে হল খেলা শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে গোল পেয়েছে। আর কেইন মোটেও তার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারে নাই। গোল্ডেন বুট জিততে যাওয়ার একজন স্ট্রাইকার যদি ওয়ান বাই ওয়ান গোলকিপারকে এভাবে মিস করে তাহলে আর বলার কি আছে।
ক্রোয়েশিয়ার গোলগুলো ছিল প্রেসিং ফুটবলের ফসল। ভাগ্য খারাপ না হলে গোল আসারই কথা। তারপরেও প্যারিসিকের গোলটিতে তার নিজের অতিরিক্ত দক্ষতার কথাও বলতে হবে। গোলটি দেখে শুরুতে ভেবেছিলাম হেডের গোল। পরে দেখি ঐ উচ্চতায় সে পা দিয়ে প্লেস করেছে। আর অতিরিক্ত সময়ের গোলটি ছিল সুযোগের দারুন সদব্যবহার।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্বকাপ কি নতুন দল জিতবে নাকি ২য় বারের মত ফ্রান্স জিতবে? ফ্রান্সের সমর্থকরা বহুদিন ধরে কাপের আশায় আছে। ২০০৬ বিশ্বকাপ আর নিজের মাঠে ২০১৬ সালে ফাইনালে উঠেও কাপ জেতা হয় নি।
অন্যদিক দিয়ে নতুন দলের বিশ্বকাপ জিতাটাও বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ অনেক বাড়িয়ে দিবে। ৪০ লাখের দেশ ক্রোয়েশিয়ানদের মনে কি আনন্দই না দিয়ে যাবে। স্বাধীনতার পর এটাই তাদের জন্য সব থেকে বড় অর্জন হবে।
বাংলাদেশ ফুটবলের সাথে যখন সরাসরি জড়িত ছিলাম তখন আমরা বিশ্বাস করতাম আমরাও একদিন বিশ্বকাপ খেলব। সেই সময় ফুটবলে দর্শকের অভাব ছিল না। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গ্যালারীর তারকাটতে বসেও দর্শক খেলা দেখত এমন দিনও ছিল। উত্তেজনার পারড এতই বেশি থাকত যে আবাহনী মোহামেডান খেলায় রেফারী হিসেবে আমার পরিবারকেও পুলিশের আলাদা নিরাপত্তা দিতে হয়েছিল।
আজ আফসোস হয় আমাদের ফুটবলের সেই প্রাণের জোয়ার হারিয়ে গেল। এখন আমরা ভুটানের কাছে হারি অথচ ১৯৮০ এশিয়া কাপে ইনজুরী টাইমের গোলে উত্তর কোরিয়ার কাছে ৩-২ গোলে হেরেছিলাম। সেই উত্তর কোরিয়া যারা ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ইটালিকে হারিয়ে কোয়ার্টারে চলে গিয়েছিলা সেখানে পর্তুগালের সাথে একসময় ৩-০ গোলে এগিয়ে ছিল।
মালদ্বীপের সাথে খেলা হলে এখন আতংকে থাকি। চল্লিশ বছর আগে হিসাব করতাম বাংলাদেশের হয়ে কে কে হ্যাট্রিক করবে।
আশায় আছি কোন না কোনদিন আবার সুসময় আসবে।
শ্রুতিলিখনঃ রাসয়াত রহমান জিকো