‘সাদা নেকড়েদের’ শিকারে ধরাশায়ী ‘বাঘেরা’
১৪ আগস্ট ২০১৮ ১৮:৫১
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: উজবেকিস্তানকে বলা হয় সাদা নেকড়ে (হোয়াইট ওল্ভস)। বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সেই সুবাদে দেশের খেলোয়াড়দেরও টাইগার বা বাঘ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়ে থাকে। সাদা নেকড়েরা আর বাঘেরা মিলিত হয়েছে রণাঙ্গনে। ফুটবল খেলার মাঠে। সেই যুদ্ধে বাঘেদের পুরোপুরি বিধ্বস্ত করেছে বুনো নেকড়েরা।
এশিয়ান গেমসের প্রাথমিক পর্বের বি গ্রুপে বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তান মিলিত হয়েছে আজ। সেখানে বাঘেরা বিধ্বস্ত হয়েছে এই সাদা নেকড়েদের কাছে। কৌশলে-গতিতে নেকড়েদের কাছে পেরেই উঠেনি বাঘেরা।
ব্যাপারটা একটু খোলাসা করা যাক। জাকার্তায় পাকানসারি স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে উজবেক আর লাল-সবুজরা। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের এই ম্যাচ বড় একপেশে করে জিতে গিয়েছে উজবেকিস্তান।
পুরো ম্যাচজুড়ে ৭৩ শতাংশ বল দখল ছিল উজবেকদের। লাল-সবুজদের গোলবারে শট নিয়েছে ২০ বার। যার ১১টি টার্গেটে ছিল। সেখানে বাংলাদেশের মাত্র দুটি শট। কোনটিই টার্গেটে ছিল না। বলতে গেলে কোনও সুযোগই গড়ে তুলতে পারে নি জেমি ডে’র শিষ্যরা।
পুরো ৯০ মিনিটে জামাল-সুফিলদের পায়ে বল ছিল মাত্র ১৭ মিনিট। যেখানে উজবেকরা রেখেছে ৪৭ মিনিট। বল নিয়ন্ত্রণে কতটা দাপট সেটা অন্তত এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট। রক্ষণভাগে আক্রমণ এসেছে মুহূর্মুহূ। রক্ষণ দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছে সাদা জার্সিধারীরা।
তিনটি গোলই হয়েছে ডি বক্সের ভেতরে। বলতে গেলে সিক্স ইয়ার্ডের ভেতরে। ডি বক্সের ভেতরে অনেক সময় বল রাখতে সক্ষম হয়েছে উজবেকরা। তিনটি গোলই একই ধরনের। ডান বা বাম থেকে একই দৃশ্যায়ন দেখা গেছে। লাল-সবুজদের কোচ জেমি ডে’র কৌশল বা ফরম্যাশনের কার্যকারিতা চোখে পড়ে নি সেভাবে।
যদিও উজবেকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের রেকর্ড সুখকর নয়।
এশিয়ান গেমস ফুটবলে বাংলাদেশ কখনোই গ্রুপ পর্ব টপকাতে পারেনি। এর আগে ২৩ ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র তিনটিতে। বাকি ২০টিতেই হার। উজবেকিস্তানের বিপক্ষে অতীত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এবং কাগজেকলমে বাংলাদেশ পিছিয়েই থাকবে নিজেদের প্রথম ম্যাচে এমনটা অনুমিতই ছিল।
এ নিয়ে এশিয়ান গেমসে তৃতীয়বারের মতো উজবেকিস্তানের মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ। ৩-০ হেরেছে এশিয়ান গেমসের এই ম্যাচে। তার আগে কোনোবারই তাদের বিপক্ষে সুখের হাসি হাসতে পারেনি লাল-সবুজ বাহিনী। মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে। আগের দুইবার ২০১০ সালে চীনের গুয়াংজু ও ২০১৪ সালে কোরিয়ার ইনচনে ৩-০ গোলে জিতেছিল উজবেকিস্তান। এশিয়ান গেমসের বাইরে দুই দেশের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের আরেকবার সাক্ষাৎ হয়েছিল অলিম্পিক প্রি-কোয়ালিফাইং রাউন্ডে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিজেদের মাঠে নিজ পরিবেশে সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৪-০ গোলে। অনূর্ধ্ব-২৩ এবং জাতীয় দল কখনোই জিততে পারেনি উজবেকিস্তানের বিপক্ষে। এমনকি ড্র করার নজির নেই লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। ১৯৯৯ সালে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের হারের ব্যবধান ছিল ৬-০ গোলে। ২০০৬ সালে দুইবারের সাক্ষাতে উজবেকিস্তানের জয়ের ব্যবধান ছিল যথাক্রমে ৫-০ ও ৪-০ গোলে।
‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের অন্য দুই প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ড ও কাতার। এ হারে টেবিলের সবার নিচে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। থাইল্যান্ড পরবর্তী প্রতিপক্ষ জামাল-সুফিলদের। ১৬ আগস্ট তিনটায় ম্যাচটি শুরু হবে। তারপরের ম্যাচ কাতারের সঙ্গে ১৯ আগস্টে। ম্যাচটি শুরু হবে বিকেল ছয়টায়।
এশিয়াডে ফুটবল দল: আশরাফুল ইসলাম রানা, আনিসুর রহমান, বিশ্বনাথ ঘোষ, ফজলে রাব্বি, জাফর ইকবাল, জামাল ভূঁইয়া, মাহবুবুর রহমান, তপু বর্মন, মাহফুজ হাসান প্রীতম, মনজুরুর রহমান, মাসুক মিয়া জনি, মো: আবদুল্লাহ, সুশান্ত ত্রিপুরা, টুটুল হোসেন বাদশা, সা’দ উদ্দিন, রহমত মিয়া, মতিন মিয়া, রবিউল হাসান, বিপুল আহমেদ, আতিকুর রহমান ফাহাদ।
ম্যানেজার : সত্যজিৎ দাস রুপু, কোচ- জেমি ডে, সহকারী কোচ- স্টুয়ার্ট পল ওয়াটকিস, ফিটনেস কোচ- রজার পল ডেভিস।
সারাবাংলা/জেএইচ