লারার টর্নেডোর দিনটি হাবিবুলের জন্য স্মরণীয়
৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:৪৪
।। মুশফিক পিয়াল, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ।।
১১১ ওয়ানডে ম্যাচের ৬ ইনিংসে বল করেছেন ১৭৫টি, রান দিয়েছেন ১৪২টি, উইকেট নিয়েছেন একটি। সেরা বোলিং ফিগার ৩১ রানের বিনিময়ে এক উইকেট। আহামরি কিছু নয় মিস্টার ফিফটি খ্যাত হাবিবুল বাশার সুমনের বোলিং ক্যারিয়ার। তারপরও অন্যরকম এক গল্প লিখে রেখেছেন বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক। সেটি ওই একটি উইকেট নিয়ে।
৯ অক্টোবর ১৯৯৯, ১৯ বছর আগের আজকের এই দিনে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল ১৫১১তম ওয়ানডে ম্যাচ। প্রতিপক্ষ ছিল তখনকার শক্তিশালী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ খেলতে এসেছিল ক্যারিবীয়ানরা। দুটিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচটি হয়েছিল আজকের দিনে, ডে-নাইট ম্যাচ। ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল ছিলেন ক্রিকেটের বরপুত্র খ্যাত ব্রায়ান লারা। সেদিন ব্যাটে ঝড় তোলা লারা ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর হাবিবুল বাশার প্রথম বলে আউট হয়ে গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফিরেছিলেন।
তার আগে ফিল্ডিংয়ে নেমে লারার উইকেটটি নিয়েছিলেন ১০ ওভার হাত ঘোরানো হাবিবুল বাশার। ১০ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়েছিলেন এনামুল হক মনি। আর একজনই সেই ম্যাচে ১০ ওভারের কোটা পূর্ণ করেছিলেন। আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ১০ ওভারে ৫০ রান দিয়ে নিয়েছিলেন একটি উইকেট। ওয়ানডেতে তার দখলে আছে ৭টি উইকেট।
আগে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে তোলে ৩১৪ রান। জবাবে, বাংলাদেশ ৪৯.১ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে তোলে ২০৫ রান। স্বাগতিকরা হারে ১০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। ম্যাচটি আহামরি কিছু না হলেও হাবিবুল বাশারের জন্য স্মরণীয় ওই একটি উইকেট নেওয়ার কারণে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ওয়ানডে তার দখলে ওই একটিই উইকেট, তাও আবার যেনতেন ব্যাটসম্যানের নয়। ব্রায়ান লারার, যিনি ২৯৯ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৯টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি করেছিলেন ৬৩টি হাফ-সেঞ্চুরি। আর টেস্টে ১৩১ ম্যাচ খেলে ৩৪ সেঞ্চুরির পাশাপাশি তুলে নিয়েছিলেন ৪৮ হাফ-সেঞ্চুরি।
ওপেনিংয়ে নেমে লারা-ক্যাম্পবেল মিলে ১০.৩ ওভারে তুলে নেন ৯৮ রান। ক্যাম্পবেল ৩০ বলে ২৮ রান করে উইকেটের পেছনে খালেদ মাসুদ পাইলটের গ্লাভসবন্দি হন। বোলার ছিলেন সেই ম্যাচেই অভিষিক্ত হওয়া আহমেদ কামাল, যার ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে ওই একটি ম্যাচ খেলেই। ২০তম ওভারে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন লারা। হাবিবুলের সরাসরি ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ক্যারিবীয়ান এই কিংবদন্তি। তার আগে ব্যাট হাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঝড় তুলেছিলেন লারা। সেদিন দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটিও স্পর্শ করেন তিনি। ৪৫ বলে ১৭টি চার আর চারটি ছক্কায় তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন লারা। হাবিবুলের অফব্রেক ঘূর্ণিতে পরাস্ত হওয়ার আগে অধিনায়ক লারা ৬২ বলে ১৮টি চার আর ৪টি ছক্কায় করেছিলেন ইনিংস সর্বোচ্চ ১১৭ রান। পরে শিবনারায়ন চন্দরপল করেছিলেন ৮৭ বলে অপরাজিত ৭৭ রান।
৩১৫ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি বেশ ভালোই করে। ৬৫ রানের মাথায় বিদায় নেন ১৮ রান করা ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম। ৭০ বলে ৪৭ রান করেছিলেন আরেক ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন। হাবিবুল তিন নম্বরে নেমে নিজের প্রথম বলেই আউট হন। অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল ৮৯ বলে করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৬ রান। মিডলঅর্ডারে আল শাহরিয়ার রোকন (১২), খালেদ মাহমুদ সুজন (২), খালেদ মাসুদ পাইলটরা (৫) সেভাবে ইনিংস এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হন। এনামুল হক মনি ১৩, অভিষিক্ত আহমেদ কামাল ১১ রান করেন।
সেই সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭৩ রানে হারিয়েছিল সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ম্যাচটিও ছিল ডে-নাইট। লারা করেছিলেন ২ রান। আর দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেন ১১৭ রানের ইনিংস। দুই ম্যাচের সিরিজে দুই দলের ওই একটিই সেঞ্চুরি হয়েছিল। ব্যক্তিগত ১৭ রান করার মধ্যদিয়ে লারা ঢুকেছিলেন ৬ হাজারি ক্লাবে। সেটি ছিল লারার ১৩তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তার টর্নেডো ইনিংস থামাতে বাংলাদেশের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম ২০তম ওভারে আক্রমণে এনেছিলেন অকেশনাল অফ-স্পিনার হাবিবুল বাশারকে। নিজের চতুর্থ বলেই লারাকে বোল্ড করেন হাবিবুল। ১৫৮তম ওয়ানডে খেলতে নেমেছিলেন লারা। ওপেনিং সমস্যায় ব্যাট হাতে ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ইনিংস উদ্বোধনে নামেন তিনি। তার আগের ম্যাচেও ওপেনিংয়ে নেমে করেছিলেন ২ রান। তারও আগে ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে নেমে করেছিলেন ৮৮ রান। দুই বছর পর আরও একবার তাকে দেখা গিয়েছিল ওপেনার ব্যাটসম্যান হিসেবে।
সারাবাংলা/এমআরপি