জেলের শাস্তি পেতেই হবে নেইমারকে?
১ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:৩৬
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
ট্রান্সফার ফি সংক্রান্ত ঝামেলা নিয়ে বারবার নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেছেন নেইমার। ব্রাজিলের এই ফরোয়ার্ডের দাবি, তিনি অপরাধী নন। কিন্তু, ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোস থেকে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায় যোগ দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন নেইমার। আর্জেন্টিনার তারকা লিওনেল মেসি ও পর্তুগালের তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর এবার স্পেনে ৬ বছর কারাবাসের শাস্তির মুখে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার।
স্পেনে সাধারণত দুই বছরের শাস্তি হলেও সেটা স্থগিত সাজার আওতায় আনা হয়। তাই সরাসরি জেল খাটতে হয়নি মেসি-রোনালদোকে। কিন্তু নেইমার হয়তো ব্রাজিলের আদালত থেকে পার পাচ্ছেন না। তার শাস্তি বাড়ানোর জন্য ব্রাজিলের আদালতে নতুন একটি বিভাগ খোলা হয়েছে। যেখানে নেইমারের অভিযোগ আরও বেশি প্রাধান্য দিয়ে দেখা হচ্ছে। শঙ্কা জেগেছে তাতে হয়তো জেলের শাস্তি পেতে হবে নেইমারকে।
২০১৪ সাল থেকে শুনানি চলছিল। স্পেনের আদালতে নেইমারের বিচারপর্ব প্রায় শেষের দিকে। আগামী মাসেই শুনানি পর্ব শেষ হবে, তারপরেই রায় দেওয়া হবে। ২০১৩ সালে ব্রাজিলের সান্তোস থেকে নেইমারকে বার্সায় আনার সময় অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছিল। তারও আগে ২০১১ সালে বার্সার তখনকার সভাপতি সান্দ্রো রোসেল নিয়ম বহির্ভূত নেইমারের বাবাকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে একটি চুক্তি করেছিলেন। যেখানে বলা হয়েছিল ২০১৩ সালে নেইমারকে বার্সায় আনা হবে। বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদে নয়, বার্সাকেই বেছে নেওয়া নিশ্চিত করতে নেইমার ও তার বাবাকে আরও বড় অঙ্কের অর্থ দেন রোসেল।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, নেইমারের বাবা ৪০ মিলিয়ন ইউরো এবং তার সাবেক ক্লাব সান্তোস ১৭.১ মিলিয়ন ইউরো পেয়েছিল বার্সার কাছ থেকে। ব্রাজিলের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ডিআইএস নেইমারের ট্রান্সফার ফি’র ৪০ ভাগ অর্থের দাবিদার ছিল। সান্তোসকে দেয়া ১৭.১ মিলিয়ন ইউরো থেকে ৬ মিলিয়ন ইউরো পেয়েছিল ডিআইএস। কিন্তু ডিআইএস অভিযোগ করেছিল, দলবদলের আসল অঙ্কটা গোপন করে তাদের ঠকানো হয়েছে। নেইমাররা আরও বেশি অর্থ পেয়েছিল অভিযোগ করে ডিআইএস আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। তাতে বার্সার তখনকার সভাপতি সান্দ্রো রোসেলকেও অভিযুক্ত করা হলে পরে এই ঘটনায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। বার্সা পরে স্বীকার করে যে, তারা নেইমারকে ৮৬.২ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছে।
এদিকে, মাদ্রিদের একটি আদালতের বিচারক হোসে মারিয়া ভাজকুয়েজ হনরুবিয়া জানিয়েছেন, চার থেকে ছয় বছর জেল হতে পারে নেইমারের। অভিযোগটি তিনি জাতীয় আদালতের ফৌজদারি বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখানে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট নেইমারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন। নেইমারের আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন, বিচারকাজ যেন স্পেনে অনুষ্ঠিত হয়। কারণ, স্পেনে সাধারণত দুই বছরের শাস্তি হলেও সেটা স্থগিত সাজা হয়, কিন্তু ব্রাজিলে সে সুযোগ নেই। ব্রাজিলের আদালতের যুক্তি চুক্তির ঘটনাটি ২০১১ সালের, তখনো নেইমার বার্সায় যোগ দেয়নি, ফলে এর বিচার ব্রাজিলেই হতে হবে। নেইমারের যদি ছয় বছরের জেল হয়, তাহলে বার্সেলোনার তৎকালীন সভাপতি সান্দ্রো রোসেলও কারাবাসের সম্মুখীন হবেন। নেইমারের সঙ্গে তার বাবা, বার্সার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোসেফ মারিয়া বার্তোমেউ এবং তার পূর্বসূরি রোসেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলায় কী শাস্তি হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাইয়ে স্পেনের একটি আদালত ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪১ লাখ ইউরো কর ফাঁকির জন্য বার্সার প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি ও তার বাবা হোর্হে মেসিকে ২১ মাসের কারাদণ্ড দেয়। আর এ বছরের জুলাইয়ে রোনালদোর বিরুদ্ধে ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৪৭ লাখ ইউরো কর ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়েছিল। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে জুভেন্টাসে যোগ দেওয়া পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলারকেও মেসির মতো জেল খাটতে হয়নি। দুই পক্ষের চূড়ান্ত সমঝোতায় কর ফাঁকির পরিমাণ ধরা হয় ৫৭ লাখ ইউরো। আর জরিমানা আর সুদ ধরা হয় ১ কোটি ৩১ লাখ ইউরো। কর ফাঁকির মামলায় স্পেনের রাজস্ব বিভাগ রোনালদোকে দুই বছরের জেল আর প্রায় ১৯ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করে।
কিন্তু, স্পেনের আইনে জরিমানা দিয়ে এ ধরনের কারাবাস এড়ানো যায়। আর স্পেনে সহিংস অপরাধ না করলে প্রথম অপরাধের ক্ষেত্রে দুই বছর বা এর নিচে সাজার ক্ষেত্রে কারাবাস হয় না। কিন্তু, নেইমারকে সাজা দিতে প্রস্তুত ব্রাজিলের আদালত, তাতে হয়তো মেসি-রোনালদোর মতো পার নাও পেতে পারেন পিএসজির সেরা তারকা।
সারাবাংলা/এমআরপি