নিজেকে ফিরে পাচ্ছি: সারাবাংলা’কে তাসকিন
২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:৪৭
।। মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
পিঠের ব্যথা ও ফর্মহীনতায় গেল বছরের মার্চে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন তাসকিন আহমেদ। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সেই চোট কাটিয়ে ওঠায় মনের গহীনে এক চিলতে আশা উঁকি দেয়, মে মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভারতের দেরাদুনে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিশ্চয়ই জায়গা মিলবে। গন্তব্য অনিশ্চিত। তবুও লক্ষ্যে অবিচল থেকে মিরপুর জাতীয় একাডেমির জিমনেশিয়ামে জিম করেন, মাঠে রানিং ও বোলিং অনুশীলন করেন। না, জায়গা মেলে না। নির্বাচকরা তাকে আনফিট বলে স্কোয়াডের বাইরে রাখেন।
তাতে বিচলিত হয়ে পড়েননি, আশা হারাননি। এখানে হয়নি তো কী হয়েছে? আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ আছে সেখানে নিশ্চয়ই হবে। যে ফিটনেসের কারণে আগের সিরিজে জায়গা মেলেনি তা ধরে রাখতে যাবতীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। স্কোয়াড ঘোষণা হবে ঠিক তার আগে জুলাইয়ে আবাহনীর মাঠে ঐচ্ছিক অনুশীলনে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ডান হাতের দুই আঙুলের মাঝখান ফেঁটে যায়। আবার চার সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে। তাতে ক্যারিবীয়ান দলেও জায়গা মেলে না।
চার সপ্তাহ বাদে সেই ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ পড়ায় নির্বাচকরা তাসকিনকে ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড সফরে পাঠান। কী দুর্ভাগ্য! স্বাগতিক আইরিশদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ চলাকালীন পিঠের পুরোনো ব্যথা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। চিকিৎসকের পরামর্শে সমস্যার সমাধান মিললেও ম্যাচে ফিল্ডিং করার সময় হাতের তালু ফেঁটে যায়।দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাসকিনকে। একই চোট তাকে ছিটকে দেয় পরের মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গড়ানো এশিয়া কাপ থেকেও। এবার তাসকিন আশাহত হন। ফেরার পথটা ক্রমাগতই তার আরো বন্ধুর মনে হতে থাকে। জাতীয় দল সে তো দূরের বাতিঘর।
এরপর আবার শুরু করেন ফেরার দুর্বার লড়াইয়ে। এবার আর হার নয়। ইনজুরিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নিউজিল্যান্ড সিরিজে দলে জায়গা করে নেন। পুনর্বাসন ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে এক বছর পর আবার লাল সবুজের দলে নিজের হারানো জায়গা ফিরে পান এই গতি তারকা। তার নেপথ্যে ছিল বিপিএলে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স। ৮ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে সেরা শিকারির তালিকায় সাকিব আল হাসানের (১ নাম্বার) পরেই তিনি (২ নাম্বার)।
বিপিএলে গতির ঝড় তুলে উইকেটের পসরা সাজিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন ২২বছর বয়সী এই ডানহাতি পেসার। এতে করে বাংলাদেশ ক্রিকেট ফিরে পেয়েছে পুরোনো তাসকিনকে। আর তাসকিন ফিরে পেয়েছেন জাতীয় দলে নিজের হারানো বহু কাঙ্খিত জায়গা।
সারাবাংলা.নেটের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে বেশ আবেগতাড়িত হয়ে সেকথাই জানালেন তাসকিন। জানিয়েছেন, বিপিএলে তার দল সিলেট সিক্সার্স হেড কোচ, পাকিস্তানি সাবেক অধিনায়ক, পেস বোলার ওয়াকার ইউনুসের ছোঁয়ায় কতটা শানিত হয়েছেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজে লক্ষ্য কী এবং বিশ্বকাপ; স্কোয়াডে থাকার অভিপ্রায়ও। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো।
সারাবাংলা: প্রায় এক বছর নিজের জায়গা ফিরে পাওয়া কতটা আনন্দের?
তাসকিন: এটা অন্যরকম অনুভূতি। ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। কারণ যেহেতু প্রায় এক বছরের মতো জাতীয় দলের বাইরে ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে হারানো কিছু একটা ফিরে পেয়েছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আবার জাতীয় দলে ফিরতে পারলাম। সবাই দোয়া করবেন যেন সুস্থ থাকতে পারি এবং ভালো করতে পারি।
সারাবাংলা: বিপিএলে আপনার এমন ধারাবাহিক বোলিংয়ের রহস্য কি? ওয়াকার ইউনুসের ছোঁয়া?
তাসকিন: ওয়াকারের ভূমিকা অবশ্যই ছিল। কারণ তিনি আমাকে অনেক মোটিভেশন দিয়েছেন, সাপোর্ট দিয়েছেন। ছোট ছোট ভুল সম্পর্কে বলেছেন। তিনি আমাকে বিশ্বাস করাতে চেয়েছেন যে ভালো করতে পারবো। এখন অনেক ভালো লাগছে। আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। সেই সাথে চেষ্টা করেছি যতটুকু সম্ভব ভালোমতো পারফর্ম করা যায়। সত্যি কথা বলতে ভালো খেলা অনেকটাই নির্ভর করে আত্মবিশ্বাসের ওপরে। আত্মবিশ্বাস কম থাকলে পারফর্ম করাটা কঠিন। যেহেতু আমি প্রায় এক বছর জাতীয় দলের বাইরে ছিলাম, আমার আত্মবিশ্বাস অনেক নিচুতে ছিল। বিপিএলের প্রথম ম্যাচটায় অনেক নার্ভাস ছিলাম। পরে আস্তে আস্তে ব্যাক করেছি, বেটার হয়েছে। আশা করবো এটা ধরে রাখতে।
সারাবাংলা: নিউজিল্যান্ড সিরিজে আপনার লক্ষ্য কী থাকবে? যেহেতু লম্বা সময় পর দলে ফিরলেন, নিজেকে প্রমাণের একটি বিষয় কিন্তু থাকবে এখানে।
তাসকিন: আমি আমার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করবো। আসলে বেসিকটাই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ, মানে ভালো জায়গায় বল করা, ভেরিয়েশন আনা, সব চেষ্টাই থাকবে। আর আমার শক্তির জায়গা যেহেতু পেস সেটা তো থাকবেই। তবে আমি এটাকে বাড়তি চাপ হিসেবে নিতে চাচ্ছি না যে আমাকে ভালো করতেই হবে। আমি যদি বেশি চিন্তা করি বিপরীত হবে। ভালো জায়গা বেছে বল করার চেষ্টা করবো। নিজের সেরাটা দেব এটা নিশ্চিত।
সারাবাংলা: সামনে বিশ্বকাপ। নিশ্চয়ই সেই স্কোয়াডেও থাকতে চাইবেন।
তাসকিন: বিশ্বকাপ তো আমার স্বপ্ন। একটা খেলেছি, আরেকটা খেলতে চাই।
সারবাংলা: ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে যে তাসকিনকে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে সেই তাসকিনকে দেখা যাবে?
তাসকিন: অবশ্যই। কেন নয়?
সারাবাংলা: বোলিং নিয়ে নতুন কী কী করলেন?
তাসকিন: সত্যি কথা বলতে কি আমার মূল শক্তিই পেস। মাঝখানে গতি কমে গিয়েছিল, তার প্রধান কারণ ছিল আমার ব্যাক পেইন। ওইটা এখন অনেক ভালো। আমার ছন্দটাই প্রধান। রিদমে থাকলে আমি ১৪০ কিলোমিটারেরও বেশি বেগে বল করতে পারবো এটা আমার বিশ্বাস। বিপিএলে করেছি। আশা করি ভালো কিছুই হবে। পেস, সুইং। বিপিএলে প্রতিটি ম্যাচে পাওয়ার প্লে তে নতুন বলে বল করছি। টি-টোয়েন্টি অনেক চ্যালেঞ্জিং। তারপরেও এখানে ভালো হয়েছে। আশা করি সামনেও ভালো কিছুই হবে।
সারবাংলা: ইনজুরির সময়টা কতখানি কঠিন ছিল। ওই সময় কাকে বেশি কাছে পেয়েছেন?
তাসকিন: আমরা যারা খেলোয়াড় তাদের খারাপ সময়ে পাশে খুব কম মানুষকেই পাওয়া যায়। আমরা যখন ভালো করি জাতীয় দলে থাকি ফোন, মেসেজ, দেখা করতে চাওয়া…চাওয়া-পাওয়ার কোনো অভাব হয় না। দলে না থাকলে খোঁচামারা কথা, কটু কথা শুনতে হয়। এটাই বাস্তবতা।
সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।
তাসকিন: আপনাকেও।
সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি