নেইমার-রোনালদো পৃথিবীর আলো দেখেছেন একই দিনে
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:৩৩
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
দুজনই বর্তমান সময়ে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। একজন ইংলিশ-স্প্যানিশ লিগ দাপিয়ে ইতালির লিগের বড় তারকা, আরেকজন স্প্যানিশ লিগ ছেড়ে গিয়ে ফরাসি লিগের বর্তমান সুপার স্টার। গ্রহের অন্যতম সেরা ফুটবলার রোনালদো-নেইমারের জন্মদিন আজ। তারা পৃথিবীর আলো দেখেছেন একই দিনে! তাদের বয়সের ব্যবধান সাত।
আজ ৫ ফেব্রুয়ারি দুজনেরই জন্মদিন। রোনালদো পা দিলেন ৩৪ বছরে আর নেইমার ২৭ বছরে। ১৯৮৫ সালের এই দিনে পর্তুগালের মাদেইরাতে জন্মগ্রহণ করেন রোনালদো। এর ঠিক সাত বছর পর ব্রাজিলের সাও পাওলোতে পৃথিবীর আলো দেখেন পেলে-জিকো-রোমারিও-রোনালডো-রোনালদিনহোদের বর্তমান উত্তরসূরি নেইমার।
পর্তুগালের মাদেইরা শহরে ১৯৮৫ সালে জন্ম হয় রোনালদোর। তার বাবা ছিলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের ভক্ত। তাই মা-বাবা নাম রেখেছিলেন সে সময়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সঙ্গে মিল রেখে। ছোটবেলায় রোনালদোকে পাড়ার ছেলেরা ক্রাই বেবি নামে ডাকতো, কেননা ফুটবল খেলার সময় তার করা পাস থেকে বন্ধুরা গোল না করতে পারলে তিনি কান্না জুড়ে দিতেন। এছাড়াও তার আরেকটি নাম ছিল লিটল বি।
ফুটবলার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মাত্র ১২ বছর বয়সে খেলা শুরু করেন স্পোর্টিং দ্য লিসবনে। রোনালদো লিসবনের ক্লাবে ২৮ নাম্বার জার্সি পড়ে খেলতেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার পর তাকে দেওয়া হয় ডেভিড বেকহামের ৭ নাম্বার জার্সি। তারপর থেকে ক্লাবে তার পরিচিতি হয়ে দাঁড়ায় সিআর সেভেন। ফুটবলের টানে নিজ শহর মাদেইরা থেকে পরিবার-পরিজন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে যোগ দেন ইংলিশ প্রিমিয়ারের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। সেখানে ছয় বছর কাটিয়ে ২০০৯ সালে নাম লেখান রিয়াল মাদ্রিদে। গত মৌসুমে রিয়াল ছেড়ে নাম লেখান ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাসে।
২০০৩ সালে পর্তুগালের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচের যাত্রা শুরু করেন রোনালদো। তার পরের বছর ২০০৪ সালে তিনি পর্তুগালের অধিনায়কত্ব পান। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদো। জাতীয় দলের জার্সিতে ১৫৪ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৮৫টি। পিছনে ফেলেছেন লুইস ফিগো, নুনো গোমেজ আর রুই কস্টাদের মতো কিংবদন্তিদের। আর্জেন্টিনার খুদে জাদুকর লিওনেল মেসির সঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচটি ব্যালন ডি অর জিতেছেন রোনালদো।
এদিকে, ২৭তম জন্মদিন উদযাপন করছেন ট্রান্সফার ফি’র বিশ্ব রেকর্ড গড়ে বার্সেলোনা অধ্যায়ের ইতি টেনে প্যারিসে পাড়ি জমানো ব্রাজিলিয়ান আইকন নেইমার। মাত্র ৯ বছর বয়সে পেলের স্মৃতিবিজড়িত ক্লাব সান্তোসে নাম লেখান। ২০১৩ মৌসুমে সান্তোসের সঙ্গে গাঁটছড়া ছিন্ন করে যোগ দেন স্বপ্নের ক্লাব বার্সায়। পরে ২০১৭ সালে ট্রান্সফার ফির রেকর্ড গড়ে বার্সা থেকে নাম লিখিয়েছেন ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজিতে।
ফরাসি ক্লাবটির এই ব্রাজিলিয়ান তারকা নিজ দেশের হয়ে খেলছেন ২০১০ সাল থেকে। আর চারটি ম্যাচ খেললেই দেশের জার্সিতে সেঞ্চুরি ম্যাচ খেলার কীর্তি গড়বেন নেইমার। ব্রাজিলের হয়ে গোল করেছেন ৬০টি, পেছনে ফেলেছেন রোমারিও, জিকো, বেবেতো, রিভালদো, রোনালদিনহো, আদেমিরদের। ব্রাজিলের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে নেইমারের সামনে শুধু পেলে আর রোনালডো। ৭৭টি গোল করেছেন পেলে, রোনালডো করেছেন ৬২টি। নেইমারের গোল ৬০টি।
নেইমারের বাবা সিনিয়র নেইমার দ্য সিলভার ইচ্ছে ছিল বড় মাপের ফুটবলার হয়ে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর। সে লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের মধ্যাঞ্চলের শহর সাও ভিনসেন্ট ছেড়ে সাও পাওলোর মগি দাস ক্রুজেস শহরে পাড়ি জমান। কিন্তু পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় সিনিয়র নেইমারের। ঠিক এ সময়ে সিনিয়র নেইমারের ঘর আলো করে আসে ব্রাজিলের বর্তমান সুপারস্টার। যেহেতু বাবা একজন প্রফেশনাল ফুটবলার ছিলেন, তাই প্রথম হাতেখড়িটা বাবার কাছেই । এরপর স্বপ্নের পরিধি বেড়ে যায় তার। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা ছেলেকে দিয়ে পূরণের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। নেইমারের শুরুটা সেই রাস্তার ফুটবল দিয়েই, সাও পাওলোর রাস্তায় ফুটবল খেলতে খেলতে ফুটবলের সঙ্গে প্রেম হয়ে যায় সেদিনের ছোট্ট নেইমারের।
সারাবাংলা/এমআরপি