হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারেনি মাশরাফিরা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:৪৯
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে কিছুই পাওয়া হলো না টাইগারদের। তিন ম্যাচের এই সিরিজের তিনটিতেই হেরে হোয়াইটওয়াশ হলো মাশরাফিবাহিনী।
সিরিজের আগের দুটি ওয়ানডেতে হারের পর বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ডানেডিনে সিরিজের শেষ ম্যাচে ৮৮ রানে হারে বাংলাদেশ।
ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে নিয়মরক্ষার এই ম্যাচটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে তিনটায় (বুধবার দিবাগত রাত, ২০ ফেব্রুয়ারি)। টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৩০ রানে তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৭.২ ওভারে ২৪২ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় টাইগাররা।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই উইকেট তুলে নেন টিম সাউদি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তামিম ইকবাল। চতুর্থ বলে বোল্ড হন সৌম্য সরকার। দলীয় ১ রানেই বাংলাদেশ হারায় দুই উইকেট। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আবারো আঘাত হানেন সাউদি। প্রথম বলে এলবির ফাঁদে ফেলেন লিটন দাসকে। রিভিউ নিতে সময়ক্ষেপণ করেন মুশফিক-লিটন। ব্যক্তিগত ১ রানে ফিরতে হয় লিটনকে। দলীয় ২ রানের মাথায় বাংলাদেশ হারায় তিন উইকেট।
এরপর মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গে করে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিম। তবে দলীয় ৪০ রানে বোল্টের বলে মুনরোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ১৭ রানে ফেরেন মুশফিক।
এরপর ব্যাটিংয়ে আসেন সাব্বির রহমান। তবে সাউদির করা ১১তম ওভারের তৃতীয় বলে বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন তিনি। তাতে শূন্য হাতেই ফিরতে হতো তাকে। কিন্তু সেই ক্যাচ মিস করেন ফার্গুসন। শুধু ক্যাচ হাতছাড়াই নয়, সেই বল পরিণত হয়েছিল ওভার বাউন্ডারিতে। তাতেই রক্ষা পান সাব্বির। তবে দলীয় ৬১ রানে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের বলে মুনরোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১৬ রানে ফেরেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
এরপর সাইফউদ্দিনকে সঙ্গে করে দলের হাল ধরেন সাব্বির। তাতে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ অর্ধশতক তুলে নেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। সাইফউদ্দিনকে সঙ্গে করে গড়েন ১০১ রানের জুটি। তবে দলীয় ১৬২ রানে সেই জুটি ভেঙে দেন বোল্ট। তার বলে গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৪৪ রানে ফেরেন সাইফউদ্দিন।
এরপর সাব্বিরের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে দলীয় ১৭০ রানে সাউদির বলে বোল্টের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ২ রানে ফেরেন তিনি।
মাশরাফি ফেরার পর মিরাজকে সঙ্গে করে এগুতে থাকেন সাব্বির। তাতে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক তুলে নেন সাব্বির। ১০৫ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় শতক তুলে নেন তিনি। মিরাজের সঙ্গে ৬৭ রানের জুটি গড়েন প্রথম শতক পাওয়া এই ব্যাটসম্যান। তবে সেই জুটিতে আঘাত হানেন। সাউদি। তার করা বলে গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৩৭ রানে ফেরেন মিরাজ।
এরপর সাব্বিরের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে আসেন রুবেল হোসেন। তবে রানআউটের শিকার হয়ে দলীয় ২৪২ রানে ব্যক্তিগত ৩ রানে ফেরেন তিনি। আর রান যোগ হওয়ার আগে সাব্বিরকে থামিয়ে দেন সাউদি। তার করা ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তার হাতে ক্যাচ দিয়েই ব্যক্তিগত ১০২ রানে থামেন সাব্বির। তাতেই হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
এর আগে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ২৫ ওভারে ১২০ রান তোলে কিউইরা। পরের ২৫ ওভারে এসেছে ২১০। ফিফটি করেছেন হেনরি নিকোলস, রস টেইলর ও টম ল্যাথাম। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ রান দিয়েছেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান।
কিউই ইনিংসের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে মাশরাফি ফিরিয়ে দেন কলিন মুনরোকে। এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায়ের আগে মুনরো ৭ বলে করেন ৮ রান। ইনিংসের ১২তম ওভারে মাশরাফি বল তুলে দেন সাইফুদ্দিনের হাতে। নিজের প্রথম ওভারের শেষ বলে গত দুই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে ফেরান সাইফ। গাপটিলকে ফেরানোর মূল কৃতিত্ব দিতে হবে তামিমকে। বাউন্ডারি লাইনের বাইরে শূন্যে শরীর ভাসিয়ে যে ক্যাচটি তিনি নিয়েছেন, ক্রিকেটে এমন ক্যাচ সত্যিই দুর্লভ। সাজঘরে ফেরার আগে গাপটিল ৪০ বলে তিনটি চার আর একটি ছক্কায় করেন ২৯ রান।
ইনিংসের ২৯তম ওভারে মিরাজের বলে তামিমের তালুবন্দি হন হেনরি নিকোলস। বিদায়ের আগে তিনি করেন ৭৪ বলে ৬৪ রান। নিকোলসের ব্যাট থেকে আসে সাতটি বাউন্ডারি। ৩৯তম ওভারে রুবেলের বলে মাহমুদুল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন রস টেইলর। এই ম্যাচের মধ্যদিয়ে রস টেইলর নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়ানডে রানের মালিক হলেন। সাবেক অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিংকে টপকে যান তিনি। একই সঙ্গে আট হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন টেইলর। ৮২ বলে ৬৯ রান করার পথে টেইলর সাতটি বাউন্ডারি হাঁকান।
এরপর মোস্তাফিজের আঘাত। তার আগে জেমস নিশাম ব্যাটে ঝড় তুলে ২৪ বলে তিনটি চার আর দুটি ছক্কায় করেন ৩৭ রান। ইনিংসের ৪৭তম ওভারে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন দলপতি টম ল্যাথামকে। সৌম্য সরকারের হাতে বন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে কিউই অধিনায়ক ৫১ বলে দুই চার, তিন ছয়ে করেন ৫৯ রান। মিচেল স্যান্টনার ৯ বলে ১৬ এবং কলিন ডি গ্রান্ডহোম ১৫ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন।
মোস্তাফিজ ১০ ওভারে ৯৩ রান খরচায় পান দুটি উইকেট। এছাড়া, মাশরাফি, রুবেল, মিরাজ এবং সাইফুদ্দিন একটি করে উইকেট পান।
এর আগে সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছেন নিউজিল্যান্ডের ওপেনার মার্টিন গাপটিল। আড়াইশোর কাছাকাছি রান করেন জিততে পারেনি সফরকারীরা। দুটি ম্যাচেই মাশরাফির দল হেরেছে ৮ উইকেটের ব্যবধানে।
ইনজুরির কারণে ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি করা মোহাম্মদ মিঠুন ছিলেন না এই ম্যাচে। তার বদলে দলে এসেছেন পেসার রুবেল হোসেন। এছাড়াও নিউজিল্যান্ডের নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এই ম্যাচে বিশ্রাম ছিলেন। তার জায়গায় দলের নেতৃত্ব দেন টম ল্যাথাম।
বাংলাদেশ একাদশ :
তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন।
নিউজিল্যান্ড একাদশ:
মার্টিন গাপটিল, কলিন মুনরো, হেনরি নিকোলস, রস টেইলর, টম ল্যাথাম, জেমস নিশাম, কলিন ডি গ্রান্ডহোম, মিচেল স্যান্টনার, টিম সাউদি, লুকি ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্ট।
সারাবাংলা/এমআরপি/এসএন