বাংলাদেশের ‘ব্রাডম্যান’কে খুব প্রয়োজন
১১ মার্চ ২০১৯ ১৪:১৫
।। মুশফিক পিয়াল, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ।।
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে যারা টেস্ট খেলেছেন তাদের মধ্যে একজনকে আলাদা করে রাখাই যায়। যাকে ডাকা হয় বাংলাদেশের ‘ব্রাডম্যান’। মুমিনুল হক। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্রাডম্যান টেস্ট ক্রিকেটে ছিলেন সবচেয়ে ধারাবাহিক। ১৯২৮ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত সাদা পোশাকে তিনি অজিদের হয়ে ৫২টি ম্যাচ খেলেছিলেন। যেখানে রেকর্ড ৯৯.৯৪ গড়ে ২৯টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি করেছিলেন ১৩টি হাফ-সেঞ্চুরি। তার টেস্ট রান ৬৯৯৬।
বাংলাদেশের মুমিনুল অবশ্য একটা সময় ব্যাটিং গড়ে ব্রাডম্যানের পরেই ছিলেন। তবে প্রতি সিরিজে আশাতীত সফলতা না পাওয়ায় তার গড় ৪১.৯৩ এ চলে এসেছে। বর্তমানে টেস্টে সেরা গড়ের দিক থেকে মুমিনুলের অবস্থান কোথায় তা বের করতে পরিসংখ্যান ঘাঁটতে হবে।
টেস্টে ধারাবাহিকভাবে হাফ-সেঞ্চুরি করার তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স এগিয়ে (১২টি)। মুমিনুল এই তালিকায় দুইয়ে। বাঁহাতি এই টাইগার মিডলঅর্ডার ছাড়াও টানা ১১টি করে ফিফটি করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভিভ রিচার্ডস, ভারতের গৌতম গম্ভীর, বীরেন্দ্রর শেওয়াগ, শচীন টেন্ডুলকার, ইংল্যান্ডের জন এডরিচরা। সেই ধারাবাহিক মুমিনুলের সবশেষ খেলা ৬টি ইনিংসে স্কোর হলো ১২, ২৯, ১২, ৮, ১৫ এবং ১০। শেষ চারটি ইনিংস নিউজল্যান্ড সফরে চলমান টেস্ট সিরিজের। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ইনিংস ব্যবধানে হারতে হয়েছিল। তবে, অনভিজ্ঞ বোলারদের দায়টাও ছিল অনেক বেশি। পাশাপাশি দায় নিতেই হবে সাকিব-মুশফিকের মতো ব্যাটসম্যানদের অভাবে যাকে বড় দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছিল, সেই মুমিনুলকে।
২০১৩ সালের ৮ মার্চ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ৬৭তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে মুমিনুলের সাদা পোশাকে অভিষেক হয়। তারও আগে ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের ১০৪তম ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম মাঠে নামেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ তকমাটা বেশ ভালোভাবেই গায়ে সেঁটেছে বাংলাদেশ দলের বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের। দেশের হয়ে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করার দারুণ কীর্তি আছে একমাত্র তার দখলে।
শ্রীলঙ্কার গলেতে জাতীয় দলের হয়ে নিজের অভিষেক টেস্ট ম্যাচে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন। সিরিজে ৫২.০০ রান গড়ে ১৫৬ রান সংগ্রহ করেন তিনি। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টেস্টে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭৪ বলে ১৮১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দেন তিনি। টাইগারদের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ৯টি সেঞ্চুরির মালিক তামিম ইকবাল। তার পরেই আছেন মুমিনুল। আশরাফুল-সাকিব-মুশফিককে টপকে মুমিনুল করেছেন আটটি সেঞ্চুরি। সাদা পোশাকে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করার দিক থেকে শীর্ষে সাকিব (২১৭)। দুইয়ে তামিম (২০৬), তিনে মুশফিক (২০০) আর চারে আশরাফুল (১৯০)। পরের দুটি জায়গা মুমিনুলের দখলে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ১৮১ রান। আর গত বছরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ১৭৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ১০৫ রান।
সারা বিশ্বের প্রথমশ্রেণির ক্রিকেটে গত বছর সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন মুমিনুল হক। দুইয়ে থেকে নতুন বছর শুরু করেন রানমেশিন খ্যাত তুষার ইমরান। আর এই তালিকায় তিনে ছিলেন ইংল্যান্ডের রোরি বার্নস। গত বছর মুমিনুল খেলেছেন ২০টি প্রথমশ্রেণির ম্যাচ। ৩৬ ইনিংসে ৫১.১৭ গড়ে করেন সর্বোচ্চ ১৭৯১ রান। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিল ২৫৮ রান। ২০১৮ সালে মুমিনুলের থলিতে জমে ৯টি সেঞ্চুরি আর দুটি হাফসেঞ্চুরি। এই তালিকায় দুইয়ে থাকা তুষার ইমরান ১৯ ম্যাচের ৩১ ইনিংসে ৫৬.১৭ ইনিংসে করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫৭৩ রান। যেখানে ৭টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি তার রয়েছে ৬টি হাফসেঞ্চুরি। তিনে থাকা ইংলিশ ব্যাটসম্যান রোরি বার্নস ১৮ ম্যাচের ৩০ ইনিংসে চারটি সেঞ্চুরি আর ৮টি ফিফটিতে করেন তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫৫৭ রান।
দেশের মাটিতে দুর্দান্ত সাফল্য মুমিনুলের ব্যাটে। কক্সবাজারে জন্ম, বেড়ে ওঠা মুমিনুল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামকে নিজেরই বানিয়ে নিয়েছেন। তার সবশেষ সেঞ্চুরিটিও সেখানেই। গত ২২ নভেম্বর মুমিনুল সেখানে ১২০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সে ভেন্যুতে তার আগে যে পাঁচটি ফিফটি করেছিলেন, তার সবগুলোই সেঞ্চুরিতে পরিণত করেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামে নিজের ষষ্ঠ ও ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি করা মুমিনুল এরপর আর বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ওই ম্যাচের ঠিক আগের টেস্টেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরে খেলেছিলেন ১৬১ রানের ইনিংস। চট্টগ্রামে ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৮১ রানের ইনিংস।
এরপর চট্টগ্রামে যতবার খেলেছেন, খুব বেশি নিরাশ হতে হয়নি তাকে। এই মাঠেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পেয়েছিলেন নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পেয়েছিলেন তৃতীয়। আর গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক টেস্টে দুই ইনিংসেই পেয়েছেন সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারে ৮টি সেঞ্চুরির কোনোটিই বিদেশের মাটিতে নয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পচেটসফ্টরুমে খেলেছিলেন ৭৭ রানের ইনিংস। সেটিই দেশের বাইরে মুমিনুলের সর্বোচ্চ ইনিংস। দেশের বাইরে বাংলাদেশের ‘ব্রাডম্যান’কে কবে দেখা যাবে-সেই প্রতীক্ষায় দেশের কোটি ক্রিকেটপ্রেমী।
** নতুন এক ব্রাডম্যানের বিপক্ষে খেলছে বাংলাদেশ
সারাবাংলা/এমআরপি