Wednesday 13 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রানা, এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন


১৬ মার্চ ২০১৯ ১০:০৭

।। মুশফিক পিয়াল, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ।।

হাড় কাঁপিয়ে শীতবুড়োর বিদায়ে তখন দেশের মানুষ একটু হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। শান্তি শান্তি ভাব। কিন্তু, একজনের মনে তখনও শান্তির হাওয়া লাগেনি। বরং মনটা খারাপ করে বসে ছিলেন। কারণ ব্যাট-বল হাতে তুলে নেওয়ার পর থেকেই যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা তখনও পূরণ হয়নি। বিশ্বকাপে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার বড্ড শখ জেগেছিল মানজারুল ইসলাম রানার। কিন্তু সেবারের বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াডে জায়গা পেলেন না, রানার মনে তাই বিন্দুমাত্র শান্তি নেই। মন খারাপের দেশটা দেখেও না দেখার ভান করতে চেয়েছিলেন। অভিনয় করেই হয়তো বন্ধুদের নিয়ে মন খারাপটা দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কে জানতো ভাগ্যবিধাতা তাকে দূরে সরিয়ে দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীকে মন খারাপের দেশে পাঠিয়ে দেবেন।

বিজ্ঞাপন

রানাকে চেনেন না, এমন ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশে নেই। খুলনার লম্বামতন শ্যামলা ছেলেটা, ৯৬ নম্বর জার্সি নিয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করতেন, সেই ছেলেটা সবার পরিচিত। আড্ডার প্রাণ, খুনসুটি আর হাসিঠাট্টায় সবাইকে মাতিয়ে রাখা হাসিখুশি মানুষ এই রানা। উইকিপিডিয়া বা ক্রিকইনফোতে রানার প্রোফাইলের মুক্তোঝরা হাসিটা দেখলেও তো মন ভরে যায় যে কারো।

২০০৭ সালের ১৬ মার্চ, ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন রানা। মৃত্যুর আগে একটা ৭০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন। নিজের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে রেকর্ড ভাঙবেন রানা, সেটা যেন কল্পনাতেও ছিল না কারো। টেস্ট খেলা অস্ট্রেলিয়ার আর্চি জ্যাকসনের ৭০ বছরেরও পুরোনো রেকর্ড ভেঙে পরলোকে পাড়ি জমানো রানার বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর ৩১৬ দিন। রানা-সেতুর হয়তো বড্ড তাড়াহুড়ো ছিল। তাই বোধহয় সবাইকে ছেড়ে পাড়ি জমান পরলোকে। জাতীয় দল থেকে বাদ না পড়লে বিশ্বকাপে খেলতে যেতেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। থাকতেন হাবিবুল বাশার সুমনের দলে। থাকতেন মাশরাফিদের সতীর্থ যোদ্ধা হয়ে। খুলনার চুকনগর যাওয়ার পথে ডুমুরিয়া উপজেলার বালিয়াখালি ব্রীজ এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বাঁহাতি এই স্পিনার। ওই দুর্ঘটনায় আরও প্রাণ হারান রানার বন্ধু ও খুলনা বিভাগীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাজ্জাদুর রহমান সেতু।

বিজ্ঞাপন

২০০৫ সালেও রানা ছিল বাংলাদেশ দলের প্রাণ, অটোমেটিক চয়েজ। ২০০৬ সালের শেষ দিকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কেনিয়া সিরিজে ব্যর্থতার পর বাদ পড়েন দল থেকে। আর ফিরে আসা হয়নি রানার। হাবিবুল বাশার-আবদুর রাজ্জাকরা বিশ্বকাপ খেলতে চলে গেলে জাতীয় লিগে খুলনার অধিনায়ক হয়েছিলেন রানা। ১৫ই মার্চ, ফতুল্লায় ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে জাতীয় লিগের ম্যাচটি ছিল সেতুর ক্যারিয়ারের পঞ্চাশতম। ফতুল্লার ম্যাচটা শেষ করেই প্রিয় শহর খুলনা চলে যান দু’জনে। পরদিন স্থানীয় একটি ম্যাচ খেলে চুকনগরের বিখ্যাত আব্বাসের হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। বিধাতা হয়তো তাকে ওখান থেকেই তুলে নিতে চেয়েছিলেন। বিশ্বকাপের দলে সুযোগ না পাওয়ায় বসে থাকেননি। মন খারাপের সময়টা দূরে সরিয়ে খুলনায় স্থানীয় ওই ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন। সেই দলটিতে ছিলেন বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগে শেখ জামালের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। রানার মৃত্যুর পর সোহান কাঁদো কাঁদো গলায় বলেছিলেন, ‘রানা ভাই জীবনের শেষ ইনিংসে আমার সাথে ব্যাট করছিল। আমি সেদিন নটআউট ছিলাম, রানা ভাইও নটআউট ছিল। কিন্তু রানা ভাই এভাবে নটআউট হয়ে থাকবেন…।’

ম্যাচ শেষে একটি দুটি বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রানা, সেতু, সেলিম ও শাওন। সেলিমের বাইকে ছিলেন সেতু। বিধাতা হয়তো নির্দেশ করেছিলেন, কী মনে করে সেলিমের বাইক থেকে প্রিয় বন্ধু সেতুকে নিজের বাইকে তুলে নেন রানা। গন্তব্য ঝাল কিছু খাওয়া। গন্তব্যে না পৌঁছতেই বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কা খায় রানার বাইক। ছিটকে পড়ে যান দুজনই। তারপর ইলেকট্রিক পোলের সঙ্গে আরেকটি ধাক্কা খান দু’জনই। নিমেষেই সব শেষ, রানা ও সেতুর রক্তাক্ত নিথর শরীর দুটোই শুধু পড়ে ছিল। বাইকের গতিটা কি বেশী ছিল? নাকি মাইক্রোবাসের নিয়ন্ত্রণটাই ছিল না? নাকি রানাদের যাত্রাটাই ছিল অশুভ? কে জানে!

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অন্য জায়গায় তুলে নিতে কোচ ডেভ হোয়াটমোরের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। এই হোয়াটমোরই আবিস্কার করেছিলেন রানাকে। তার মাঝে খুঁজে পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বমানের এক ক্রিকেটারের প্রতিচ্ছ্ববি। কোচের আস্থার সবটুকু অর্জনও করে ফেলেন রানা। আর বাংলাদেশ তখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে আন্তর্জাতিকমানের এক দুর্দান্ত অলরাউন্ডারকে। একটু প্রাসঙ্গিকতার বাইরে যেতে চাই। অস্ট্রেলিয়ান কোচ হোয়াটমোর বাংলাদেশ দলে কাজ করেছেন ২০০৩-০৭ সাল পর্যন্ত, তৈরি করে গেছেন বিশ্ব ক্রিকেটে চোখে চোখ রেখে খেলার মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সেই হোয়াটমোরের যেদিন জন্ম, প্রিয় ছাত্র রানার সেদিন মৃত্যু।

ভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসার পর হোয়াটমোর ছুটে গিয়েছিলেন রানার বাড়িতে, সময় কাটান রানার পরিবারের সঙ্গে। সেখানে গিয়ে রানার ঘরে সময় কাটিয়েছেন, দেখেছেন সব আগের মতোই ছিমছাম গোছানো। ওয়ারড্রোবের ওপর রানার হেলমেট, ছোট-বড় কয়েকটা ট্রফি। সংবর্ধনায় পাওয়া বিশাল একটা প্লেট। সবই আছে, শুধু রানাই নেই! স্নেহের শিষ্যের অকাল প্রয়াণে ব্যথিত কোচ হোয়াটমোর সেদিন স্মৃতি হাতরে জানান, ‘রানার দলে আসার পরের দিনগুলোর কথা আজও মনে পড়ে। ক্যাম্পে তাকে দেখেই খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছিল, তাই জাতীয় দলেও নিয়ে নিয়েছিলাম। সে আমার কাছে সবসময়ই বিশেষ একজন হয়ে থাকবে, আমার হৃদয়ের মাঝে থাকবে। মনে আছে খুব হৃদয়ের একটা ছেলে ছিল রানা। ড্রেসিংরুমে তা মতো খেলোয়াড় আমার ক্যারিয়ারে কম দেখেছি। একটা মুহূর্তও হাঁসি সরেনি তার মুখ থেকে।’

বিশ্বকাপে খেলতে বাংলাদেশ দল তখন ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। লাল-সবুজদের প্রথম পরীক্ষা শচীন-গাঙ্গুলি-দ্রাবিড়দের ভারত। পরের দিন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ, আগের দিন রানা-সেতুর মৃত্যুর ঘটনা। খবরটা সবার আগে দেশ থেকে মুঠোফোনে জানিয়ে দেওয়া হয় দলের অধিনায়ক হাবিবুল বাশারকে। বুক চাপড়ে হাবিবুল টিম হোটেলের দিকে দৌড় লাগান। সে সময় হাবিবুলের মনে পড়ে, ক্যারিবীয়ন দ্বীপপুঞ্জে আসার আগে রানা কানের কাছে বলেছিলেন, ‘সুমন ভাই আমি তো বাদ পড়লাম। বিশ্বকাপে একটা ম্যাচ কিন্তু জিততেই হবে।’ কঠিন সত্য হলেও হাবিবুলকে জানাতে হবে রানার মৃত্যুর খবর। দলের অধিনায়ক মাঠের বাইরে পালন করলেন তার দায়িত্ব। গোটা দল ক্যারিবীয়ান দ্বীপপুঞ্জে তখন স্তব্ধ। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে নেমে আসে শোকের ছায়া। এক সমুদ্র জল জলোচ্ছ্বাসের মতো উথলে উঠে সবার চোখে। ত্রিনিদাদের সাগরতীরে বাংলাদেশ দলের হোটেলে কষ্টের একটা বিশাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে। আবেগের চোরাস্রোতে ভেসে যান হাবিবুল থেকে রাজ্জাক, সৈয়দ রাসেলরা। খুলনা দলে যে রানার সাথে বছরের পর বছর ধরে খেলে আসছিলেন ওরা। সেখানে ছিলেন না বর্তমান ওয়ানডে দলপতি মাশরাফি। তাকে পরে জানানো হয়েছিল। একটা কথাই শুধু মাশরাফি বলতে পেরেছিলেন, ‘রানা, এটা তুই কী করলি?’ টিম হোটেলে সে রাতে ঘুমাতে পারেননি কেউ। রাতটা পর করে সকালেই নামতে হবে ভারতের বিপক্ষে খেলতে।

ম্যাচ শুরুর আগে প্রচণ্ড জ্বরে ছটফট করছিলেন মাশরাফি। হাবিবুল মাশরাফির কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন, ‘ম্যাশ তুই পারবি?’ ১০৩ ডিগ্রি জ্বর শরীরে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে নিজের ভাষায় মাশরাফি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘না পারলেও খেলতি হবে সুমন ভাই। রানার জন্য খেলতি হবে।’

ম্যাচে খেলতে নামার আগে রানা-সেতুর মৃত্যুতে দুই দলের ক্রিকেটাররা নীরবতা পালন করেন। সেই শোক রূপ নিয়েছিল শক্তিতে। ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। মাশরাফির চোখ টকটকে লাল। বোলিং করতে গিয়ে বার বার কাঁপছেন মাশরাফি, ঠিক জ্বরে নয়, আবেগে। টকটকে লাল দুই চোখে মাশরাফি খুঁজে ফেরেন রানাকে! খুঁজে পাওয়া যায় না। বাইশ গজ থেকে মাশরাফি একে একে ফিরিয়ে দেন শেবাগ-উথাপ্পা-আগারকার-প্যাটেলকে। রানার প্রিয় দুই বন্ধু মাশরাফি-রাজ্জাকের বোলিংয়ের তোপে মাত্র ১৯১ রানেই গুটিয়ে যায় বিশ্বসেরা ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। ভারতের বিপক্ষে সেই জয়ে ফিফটি করেছিলেন সাকিব, তামিম এবং মুশফিক। হয়তো সাকিবের দলে আগমন রানার জায়গা পূরণের জন্যেই। তরুণ তামিম ফেরেন ভারতীয় বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালিয়ে। আরেক তরুণ মুশফিক ছিলেন ধৈর্য্যের প্রতিমূর্তি হয়ে, তার সঙ্গে জুটি গড়া সাকিব নামের এক নতুন মুখ ৮৪ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন।

ভারত সেদিন এক অন্যরকম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলেছিল, অদ্ভুত এক শক্তির কাছে মাথা নত করেছিল। রানার কথা রেখেছিলেন হাবিবুল বাশার। মুশফিকের জয়সূচক রানের পর ড্রেসিং রুমের সামনে শিশুদের মতো হাততালি দিলেন হাবিবুল বাশার, চোখে জল! সেই ম্যাচে বাংলাদেশের ১১ জন মাঠে ছিলেন, তাদের হৃদয়ে ছিলেন আরও দুইজন। অদৃশ্য ক্রিকেটার হয়ে সেদিন পোর্ট অব স্পেনের মাঠে ছিলেন রানা, সতীর্থদের হৃদয়ে মিশে গিয়ে হয়ে উঠেছিলেন জয়ের উপলক্ষ। সেদিন রানার জন্য খেলেছিলেন মাশরাফিরা, রানার জন্যই জিতেছিলেন ম্যাচ। পোর্ট অব স্পেনে বাংলাদেশের কাছে ৫ উইকেটে হেরে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল শক্তিশালী ভারত।

যে মার্চে রানা মারা গিয়েছিলেন, সেই মার্চে সাধারণত হারে না বাংলাদেশ। ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ, ঢাকায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ১১ মার্চ ইংল্যান্ডকে এবং ১৪ মার্চ নেদারল্যান্ডসকে হারায় বাংলাদেশ। ২০১২ সালের ১৬ মার্চ (রানার মৃত্যুর দিন) এশিয়া কাপের ম্যাচে ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। সেটি ছিল আবার শচীন টেন্ডুলকারের শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির দিন। ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জেতে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ (রানার মৃত্যুর দিন) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে মাত্র ৭৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে জয় পেয়েছিল টাইগাররা। ২০১৫ সালের ৯ মার্চ অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যায় বাংলাদেশ।

২০১৭ সালের ১৬ মার্চ বাংলাদেশের শততম টেস্ট জিতেছিল রানার সহযোদ্ধারা। ২০১৮ সালের ১০ মার্চ নিদাহাস ট্রফিতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। একই টুর্নামেন্টে রানার মৃত্যুর দিন (১৬ মার্চ) সেই লঙ্কানদেরই বিদায় করে দিয়েছিল টাইগাররা, উঠেছিল ফাইনালে। ১৮ মার্চ ফাইনালে শেষ বলের ছক্কায় ভারতের বিপক্ষে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এছাড়া, ২০১২ সালের ২২ মার্চ এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিশ্চিত জেতা ম্যাচ মাত্র ১ রানে হারতে হয়েছিল ভারতের বিপক্ষে।

 

রানার ছোটো ক্যারিয়ারটা খুব বেশি কিছুর ইঙ্গিত দিতে পারেনি। ছয় টেস্টে একটিমাত্র ফিফটিসহ ২৫.৭০ গড়ে ২৫৭ রান, সাথে ৮০ গড়ে মাত্র পাঁচটি উইকেট। আর ওয়ানডেতে ২৫ ম্যাচে ২০.৬৮ গড়ে একটি ফিফটিসহ ৩৩১ রানের পাশে ৩০ গড়ে ২৩টি উইকেট। এই পরিসংখ্যান বোঝাতে পারবে না বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটা অলরাউন্ডারের জন্য বছরের পর বছর হাহাকার, বোঝাতে পারবে না দেশের ক্রিকেটের করিডোরে জ্বলতে থাকা মিষ্টি আলোর উপস্থিতি। কারণ রানাই প্রথম বাংলাদেশি খেলোয়াড়, যিনি আইসিসি উদীয়মান তারকা তালিকায় প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছিলেন। কেভিন পিটারসেন, ইয়ান বেল, গৌতম গম্ভীর, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের টপকে পুরস্কারটা জিততে পারেননি রানা, কিন্তু এই স্বীকৃতিই প্রমাণ করে দিয়েছে তার সামর্থ্য। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে পথচলা শুরু হয় রানার। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেই রানা করে বসেন এক রেকর্ড। নিজের করা তৃতীয় বলেই মাইকেল ভনকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি।

বড্ড অসময়ে চলে না গেলে কে জানে, আজ হয়তো রানার ব্যাটিং-বোলিংয়ে একের পর এক ম্যাচ বগলদাবা করতো বাংলাদেশ। রূপসা পাড়ে ক্রিকেট আনন্দের রেণু ছড়ালেই রানার মা জামিলা খাতুনের হৃদয়ে হাহাকার ওঠে। ছেলের স্মৃতি হানা দেয় মায়ের মানসপটে। তখন সবার মনে পড়ে রানা নামে এক ক্রিকেটার ছিলেন, যার বাড়ির পাশেই খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম। কোনোদিন যেখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি, তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে খুলনার সেই শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের একটি স্ট্যান্ডের নাম বদল করে রাখা হয়েছে ‘মানজারুল ইসলাম রানা স্ট্যান্ড’।

রানা হয়তো স্বর্গে বসেই দেখছেন প্রিয় বন্ধুদের লড়াই, শুনছেন টাইগারদের গর্জন। হয়তো স্বর্গে বসে গল্প করছেন প্রিয় দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে। দেখছেন তারই মতো বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিবকে, যিনি বিশ্বসেরা মুকুট মাথায় লাল সবুজের প্রতিনিধিত্ব করছেন বিশ্বব্যাপী। হয়তো আফসোস করছেন সাকিবের মতো একজন বিশ্বসেরাকে খেলোয়াড়ি জীবনে স্পিন পার্টনার হিসেবে না পেয়ে। আফসোস আমরাও করি রানা, যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।

আরও পড়ুন : শনিবার রাতে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

সারাবাংলা/এমআরপি/এসএন

মানজারুল ইসলাম রানা স্পোর্টস স্পেশাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর