সবাই ভাবে আমি আর্জেন্টিনার ফেডারেশন চালাই: মেসি
৩০ মার্চ ২০১৯ ১৭:২৭
আর্জেন্টিনার রেডিও এফএম ৯৪.৭ ক্লাব অকটুব্রে-কে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে অনেক কথাই বলেছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি অর জেতা মেসি। নিজের দেশের ফেডারেশন নিয়ে কথা বলেছেন, বলেছেন নিজের সমালোচকদের কথা। জানিয়েছেন বিশ্বেসেরাদের তালিকায় কারা কারা স্থান করে নিয়েছেন। আরও জানিয়েছেন নিজের ছেলের কথা, হতাশার কথা।
দিয়েগো ম্যারাডোনার পর মেসিকে ঘিরেই আর্জেন্টিনার যত স্বপ্ন। ক্লাব বার্সার হয়ে সব পাওয়া মেসি জাতীয় দলের হয়ে কিছুই পাননি। দেশের জার্সি গায়ে চাপলেই শুরু হয় তার সমালোচনা। এমন হতাশা ঢেকে রাখেননি মেসি। ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর দুই দুইটি কোপা আমেরিকার আসরের ফাইনালে হেরেছিল মেসির দল। এরপর সমালোচনায় টিকতে না পেরে অভিমানে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন। অনেক ঘটনার পর আবারো ফেরেন জাতীয় দলে। কিন্তু সেই না পাওয়ার বেদন আর সমালোচনা হাতে হাত ধরে চলতে থাকে।
একটা কথা মেসিকে প্রায়ই শুনতে হয়। জাতীয় দলে মেসির নেতৃত্বে রয়েছে আরেকটি দল। মূল একাদশে কে কে খেলবে, স্কোয়াডে কাকে রাখা হবে, কোচ হিসেবে কে আসবে না আসবে এসবের পেছনে থাকেন মেসি। এক কথায় নিজ দেশের ফুটবল ফেডারেশনের বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত নেন মেসি। সমালোচকদের এমন কথায় চিন্তিত নন মেসি। জানিয়েছেন নিজের ইচ্ছেমতো কোনো সিদ্ধান্ত তিনি ফেডারেশনকে চাপিয়ে দেন না।
বার্সার দলপতি জানান, আর্জেন্টিনা স্কোয়াডের মধ্যে আমার নেতৃত্বের আরেকটা উপদল আছে বলে আমি বেশ অনেক দিন ধরেই শুনছি। এর পেছনে সত্যতা কতটুকু সেটা আপনাদের দেখতে হবে। আমার ওপর যদি আসলেই দায়িত্ব থাকত, আগুয়েরো প্রত্যেকটা ম্যাচ খেলত। সবাই মনে করে আমি আর্জেন্টিনার ফেডারেশন চালাই। পছন্দমতো খেলোয়াড় দিয়ে একাদশ সাজাই। এসব কথা শুনলে আমার প্রচণ্ড কষ্ট হয়। মানুষজন এমন কথাও বলে যে ফেডারেশনের মধ্যে আমার বাবার আলাদা ক্ষমতা আছে। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।
মেসির বড় ছেলে থিয়াগো মেসি বাবার এমন সমালোচনা শুনে মাঝে মাঝে নাকি প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন-আর্জেন্টিনায় ওরা কেন তোমাকে ক্রুশবিদ্ধ করে? সমালোচকদের এমন কাণ্ডে মেসিও বেশ উত্তেজিত। তিনি জানালেন, এসব কথাবার্তার কারণে আমার পরিবারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর্জেন্টিনায় আমার অনেক আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব রয়েছে, তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমার নামে যে যা খুশি বলে বেড়ায়, আর মানুষজন সেটা বিশ্বাসও করে। অনেক খারাপ লাগে আমার। আমি ছেলেকে বলেছি, এটা গুটিকয়েক লোকের কাজ। আর্জেন্টিনার হয়ে খেলতে প্রবল ইচ্ছাটা আমি আগেও দেখিয়েছি, এ নিয়ে কারও কাছে আমার কিছু প্রমাণের নেই।
মেসি যোগ করেন, ‘বিশ্বকাপের পর ফেডারেশনের কারও সঙ্গেই কথা হয়নি। কোচ লিওনেল স্কালোনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তিনি চান আমি ফিরে আসি। কারণ তিনি দারুণ একটা প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছেন। আসলে দলে একটা পালাবদল চলছে, সেটাই স্বাভাবিক। বরং আরও কয়েক বছর আগেই এমনটি হওয়ার দরকার ছিল। তরুণ খেলোয়াড়েরা উঠে আসছে, ওদের সময় দেওয়া দরকার। এদেরও ক্রুশবিদ্ধ করতে পারি না আমরা!
মেসি সেখানে আরও বলেন, ‘এই সময়ে অনেক বিশ্বসেরা খেলোয়াড় খেলছে। আমার কাছে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় কাইলিয়ান এমবাপে, নেইমার, লুইস সুয়ারেজ, সার্জিও আগুয়েরো ও এডেন হ্যাজার্ড। আমার মনে হয় এখন এরাই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। কাউকে বাদ দিতে চাচ্ছি না বা ভুলে যেতে চাচ্ছি না। আমি এই তালিকা থেকে নিজেকে এবং রোনালদোকে সরিয়ে রাখছি। বিশ্বাস করুন, আমি সত্যি বলছি! আগুয়েরো আর সুয়ারেজ শুধু খেলার মাঠের মধ্যেই নয়, খেলার মাঠের বাইরেও আমাদের একটা আলাদা বন্ধন আছে।’
রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে আর্জেন্টিনা ছিটকে যাওয়ার পর আবারো বিশ্রামে ছিলেন মেসি। অনেকটা স্বেচ্ছা অবসর নেওয়ার মতো। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে চলতি মাসে ফিরেছিলেন। সেই ম্যাচে জিততে পারেনি মেসির দল। ইনজুরিতে ছিটকে পড়েন তিনি। পরে মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচে নামতে পারেননি, সেই ম্যাচে জিতেছিল আর্জেন্টিনা।
সারাবাংলা/এমআরপি