Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যে মাঠকর্মীর কারণে সপ্তম ইউসিএল জিতেছিলো রিয়াল মাদ্রিদ!


১৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:২০

শুনতে একটু অবাক লাগলেও ১৯৯৮ সালে সত্যিই ঘটেছিল এমন ঘটনা। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে অগাস্টিন হেররিন কাজ করেছেন ১৮ বছর। আর বলা চলে তার কল্যাণেই রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছিল তাদের সপ্তম চ্যাম্পিয়নস লিগ।

গেল বৃহস্পতিবার ৮৬ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন রিয়াল মাদ্রিদের এই সাবেক কর্মকর্তা। আর ৫০ বছরেরও অধিক সময় ধরে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এই মাদ্রিদিস্তা। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন লা লিগা কর্তৃপক্ষ, রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এবং বর্তমান ফুটবলাররা, রিয়াল মাদ্রিদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেও জানানো হয় শোকবার্তা।

বিজ্ঞাপন

তার পরিচয় আরও বিস্তারিত বলতে গেলে বলতে হয়, তিনি এমন একজন ছিলেন যার সাথে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও তার ব্যলন ডি অর জয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে ফিফা ব্যলন ডি অর যখন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রদর্শন করছিলেন ক্রিস্টিয়ানো, তখন একজন বৃদ্ধকে ডেকে নিয়েছিলেন মাঠে তার সাথে। তিনিই অগাস্টিন হেররিন।

তিনি ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের কর্মকর্তা। তবে স্পেনের মাদ্রিদ সমর্থকদের কাছে তিনি বেশি পরিচিত ১৯৯৮ সালের সেমিফাইনালে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সাথে ম্যাচে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য। তার প্রত্যুত্বপন্নমতিতে সেবার রক্ষা হয়েছিল রিয়ালের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন।

ঘটনাটি ঠিক ২০ বছর আগের ১লা এপ্রিল ১৯৯৮ সালের। রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে মুখোমুখি চ্যাম্পিয়ন বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের। মাদ্রিদ তখন ৩২ বছর ধরে ইউসিএল জিততে ব্যর্থ। আর ম্যাচ শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তেই ঘটলো এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। যার সমাধানের জন্য রিয়াল মাদ্রিদকে উয়েফা দিলো মাত্র ৩০ মিনিট। অন্যথায় বুরুশিয়াকে ৩-০ গোলে ম্যাচটি জিতিয়ে দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

আর সেখানেই সমাধি হয়ে যাবে লস ব্ল্যাঙ্কোসদের সপ্তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ঘরের তোলার স্বপ্নকে। তবে সেখানে যে ছিলেন অগাস্টিন। তিনি থাকতে তাদের এই স্বপ্নকে ভেঙে দেবে এমন ক্ষমতা কার?

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগ মুহুর্তে রিয়াল মাদ্রিদের উগ্র সমর্থক গোষ্ঠী দক্ষিণ পার্শ্বের গোলবার ভেঙে ফেলেন। আর ক্লাব করিডরে তখন ছিল না অতিরিক্ত কোন গোলবারও। তবে কি ম্যাচ শুরুই হবে না? সমাধানের জন্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন অগাস্টিন।

তিনি ম্যাচ রেফারির কাছে আরও কিছু সময় চাইলেন। আর ম্যাচ রেফারিও তাকে সে সময় দিলেন। অগাস্টিন আর সাথে সাবেক মাদ্রিদ গোলকিপার মিগুইল এঞ্জেল একটি গাড়িতে করে বেরিয়ে পড়লেন নতুন গোল বার খুঁজতে।

এদিকে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বাড়ছে দুঃশ্চিন্তা। দর্শকরা ধৈর্য্য হারা হয়ে পড়ছেন প্রত্যেকটা সেকেন্ড অতিবাহিত হচ্ছে দুর্বিষহ স্বপ্ন ভাঙার শব্দে।

পুলিশের সাহায্য নিয়ে অগাস্টিন চলে গেলেন রিয়াল মাদ্রিদের তখনকার ট্রেনিং গ্রাউন্ডে। ট্রেনিং গ্রাউন্ড সান্তিগো বার্নাব্যু থেকে প্রায় দুই কিলোমিটারের দূরত্বে। কিন্তু বাঁধা যেন রিয়ালের পিছুই ছাড়ছিলো না সেদিন। সেখানে পৌঁছে দেখেন ট্রেনিং গ্রাউন্ডের গেটে ঝুলানো তালা। অগাস্টিন এত সহজে মাদ্রিদের ৩২ বছরের স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে দিবেন না। ৬৩ বছর বয়সী অগাস্টিন প্রাচীর বেয়ে চলে গেলেন ট্রেনিং গ্রাউন্ডের ভেতরে আর ভেতর থেকে খুলে দিলেন গেট।

এই রাতটা রিয়াল মাদ্রিদের জন্য কতটা দুর্বিষহ ছিল তা আসলে শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ট্রেনিং গ্রাউন্ডের যে ঘরে প্রয়োজনীয় সকল কিছু রাখা সে ঘরেও তালা ঝুলানো। আর চাবি ছিলো না অগাস্টিনের কাছে। তবে অগাস্টিন যে হার মানতে নারাজ। ট্রেনিং গ্রাউন্ডের পাশেই রিয়াল মাদ্রিদের ট্রাক ড্রাইভারকে খুঁজে বের করলেন তিনি। আর ট্রাক ড্রাইভারকে সাহায্য করতে অনুরোধ করলেন।

এরপরও চাবি খুঁজে না পাওয়ায় অগাস্টিন নিলেন এক পাগলাটে সিদ্ধান্ত । ট্রাক ড্রাইভারকে বললেন, ‘ট্রাকে উঠে বসো তুমি। আর ট্রাক দিয়ে ভেঙে ফেলো দরজা।’ উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে শুধু দেখলেন অগাস্টিনের কার্য। সত্যিই ভেঙে ফেললেন দরজা। এরপর বের করলেন নতুন গোল পোস্ট।

ট্রেনিং গ্রাউন্ড থেকে স্টেডিয়ামে পৌঁছালেন মাত্র আট মিনিটে। রাস্তায় তারা কোন বাঁধা মানেননি। সে রাতে ভেঙেছিলেন প্রত্যেকটা ট্রাফিক সিগন্যাল আর ট্রাফিক রুলস। রেফারির দেয়া সময়ের ভেতরে অগাস্টিন হাজির নতুন গোল পোস্ট নিয়ে।
সেই ট্রাক ড্রাইভার অগাস্টিন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘অগাস্টিন সে রাতে এতটাই ঘামছিলেন যে মনে হচ্ছিলো সে স্ট্রোক করবে। আর এই রাতে যদি স্ট্রোক না করে তাহলে এই মানুষটার হৃদক্রীয়া কখনোই বন্ধ হবে না।’

সেদিনের আসল হিরোরা ছিলেন অগাস্টিন হেররিন, মিগুইল এঞ্জেল আর ট্রাক চালক ক্যান্দিদো গোমেজ। নির্ধারিত সময়ের ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট পরে ম্যাচ শুরু হয়।

ম্যাচ শুরু হলে এক অন্য রিয়াল মাদ্রিদকে দেখতে পারে বার্নাব্যুবাসী। বুরুশিয়াকে যেন ছিঁড়ে খুড়ে খেতে শুরু করে গ্যালাক্টিকোরা। হয়তো সে রাতের হিরোদের জন্য ম্যাচ জিততে মাঠে নামে রিয়াল মাদ্রিদ। বুরুশিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনাল এক প্রকার নিশ্চিত করে রিয়াল। আর ফাইনালে জুভেন্টাসকে ১-০ গোলে হারিয়ে ৩২ বছর পরে ঘরে তোলে সপ্তম চ্যাম্পিয়নস লিগ।

এরপর, ২০ অক্টোবর অগাস্টিনকে রিয়াল মাদ্রিদ কর্তৃপক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়। তাকে রিয়াল মাদ্রিদের স্টেডিয়াম সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর একটি রেপ্লিকা দেওয়া হয়। আর বার্নাব্যুবাসী দাঁড়িয়ে সম্মাননা জানায় তার এই অকল্পনীয় কর্মে।

সেদিন থেকে অগাস্টিন হেররিনকে রিয়াল মাদ্রিদের সৌভাগ্যের কান্ডারি বলা হয়। এরপরে একে একে মাদ্রিদ আরও ছয়টি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে তবে সে রাতের জন্য অগাস্টিনের কাছে চীর কৃতজ্ঞ থাকবে রিয়াল মাদ্রিদ আর পুরো পৃথিবীর কোটি মাদ্রিদিস্তা।

তাই তো কর্ম জীবন শেষেও যুক্ত ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের সাথে। আর সকলে ভালবেসে তাকে দাদু বলে সম্বোধন করতেন। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রিয়ালের সাবেক ফুটবলাররাও। তার বিদায়ে ব্যথিত পুরো রিয়াল মাদ্রিদ পরিবার। তার স্মরণে রিয়াল মাদ্রিদ পরবর্তী ম্যাচে কালো ব্যান্ড পরে খেলতে নামবে এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করবে।

সারাবাংলা/এসএস

অগস্টিন হেররিন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লীগ রিয়াল মাদ্রিদ

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর