হেসে-খেলেই জিতল টাইগাররা
৭ মে ২০১৯ ২৩:৩০
মাশরাফির জ্বালাময়ী বোলিংয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সংগ্রটা নিদারুণ দীনতায় ভরা ছিল উইন্ডিজের। ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটের খরচায় সাকুল্যে সংগ্রহ দাঁড়ালো ২৬১ রান। জয়ের জন্য ২৬২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে টাইগার ট্রায়ো তামিম, সৌম্য ও সাকিবের প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটিংয়ে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ৫ ওভার বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে লাল সবুজের দুর্বার যোদ্ধারা।
ক্যারিবীয়দের দেওয়া ২৬২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা দারুণ করেছিলেন দুই টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। তাদের প্রান্ত আগলে ব্যাটিংয়ে বিনা উইকেটে দলীয় ১৪৪ রান এলে জয়ের সুবাস বইতে শুরু করে টাইগার শিবিরে।
ঠিক তখনই পা হরকালেন সৌম্য। ২৬ তম ওভারে রোস্টন চেজের শেষ বলটি ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে সীমানা পার করতে গেলে বাউন্ডারি ঘেঁসে দাড়িয়ে থাকা ব্রাভো প্রথমে তালুবন্দি করতে না পেরে ওপরে তুলে দেন। এরপর বাউন্ডারির বাইরে থেকে ভেতরে এসে তা তালুবন্দি করেন। ব্যক্তিগত ৭৩ রানে নিজের ইনিংসের ফুলস্টপ টেনে দেন এই ওপেনার। এই রান সংগ্রহে তিনি বল খেলেছেন ৬৮টি। যেখানে চারের মার ছিল ৯টি ও ছয় ১টি।
ড্রেসিংরুমের পথ ধরার আগে তিনি তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৮ম ফিফটি। হাফ সেঞ্চুরির পথে তিনি বল খেলেছেন ৪৭টি। যেখানে চারের মার ছিল ৫টি ও ছয় ১টি। সৌম্যর পর ফিফটি তুলে নেন তামিম ইকবালও। ওয়ানডেতে এটি তার ৪৫ তম হাফ সেঞ্চুরি।
হাফ সেঞ্চুরিটি অবশ্য বেশ সতর্ক ব্যাটেই করেছেন তামিম। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে কেমার রোচের বল ড্রাইভ করতে গেলে কাভার অঞ্চলে তা তালুবন্দি করতে দৌঁড়ে আসেন রোস্টন চেজ। কিন্তু ভাগ্য দেবীর প্রসন্ন দৃষ্টি থাকায় এই যাত্রায় বেঁচে যান।
এরপর আর কোন বিপদ নয়। দারুণ সেন্সিবল ব্যাটে ৭৮ বলে তুলে নেন ফিফটি। যখানে চারের মার ছিল ৫টি। তবে ছিল না কোন ছয়ের মার।
সৌম্য-তামিম জুটির বিচ্ছেদের পর তামিমকে সঙ্গে নিয়ে জয়ের বাদ বাকি কাজটুকু সেরে দিতে আসেন সাকিব। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন খেলছিলেনও সেভাবেই। এই জুটিতে ৫৫ রান থেকে এল ৫০ রান। তবে সেখান থেকে খুব বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারেননি এই দুই অভিজ্ঞ টাইগার।দলের সঙ্গে আর মাত্র ২টি রান যোগ করে ব্যক্তিগত ৮০ রানে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের শর্ট ডেলিভারিটি ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডারের ক্যাচে পরিণত হন তামিম। তবে ফিরে যাওয়ার আগে দলকে জয়ের তীর দেখিয়ে যান। টাইগারদের দলীয় সংগ্রহ তখন ১৯৬ রান।
তৃতীয় উইকেটে সাকিবকে সঙ্গ দিতে এলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক। দৃঢ় ব্যাটে এক প্রান্ত ধরে রাখলেন। আর অপর প্রান্ত থেকে ক্যারিবীয় বোলারদের কচু কাটা করলেন সাকিব। দারুণ ক্ষুরধার ব্যাটে তুলে নিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪১তম অর্ধশতক।
তাতে কাজও হল বিস্তর। মাত্র দুই উইকেটের খরচায় কাঙ্খিত লক্ষ্য ছুয়ে জয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত হল স্টিভ রোডস শিষ্যরা।
সাকিব ৬১ বল খেলে অপরাজিত ছিলেন ৬১ রানে। চার মেরেছেন ৩টি ও ছয় দুটি। আর মুশফিক অপরাজিত ৩২ রানে। যা সংগ্রহে তিনি সহায়তা নিয়েছেন ২৫টি বলের।
মঙ্গলবার (৭ মে) ডাবলিনের ক্লনটার্ফে বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই সাইফউদ্দিনের ওপর মৃদু ঝড় চালালেন শেই হোপ। ইনিংসের একেবারে প্রথম ও তৃতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে প্রথম ওভার শেষে স্কোর লাইন দাঁড় করালেন বিনা উইকেটে ৮ রান।
দ্বিতীয় ওভারে ম্যাচের আবহ বদলে দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম বলে তুললেন এলবি’র আবেদন। কিন্তু আম্পায়ার তা কানে নিলেন না। ক্রিজে থরহরিকম্প আমব্রিজ কোন রকম নিজেকে সামলে দাঁড়ালেন। পরের বলটি আবার পায়ে লাগিয়ে জোরালো আবেদন তুললেন ম্যাশ। না, এবার লাইন বিচ্যুত। লেগ স্ট্যাম্পের কিছুটা বাইরে আম্পায়ার নাকচ করে দিলেন। সাকুল্যে ২ রান দিয়ে ওভারের সমাপ্তি টানলেন।
তৃতীয় ওভারে এসে অবশ্য বেশ সংযত সাইফউদ্দিন।একটি রানও দিলেন না। এমন হিসেবি বোলিং চললো ৫ ওভার পর্যন্ত। উইন্ডিজদের দলীয় সংগ্রহ বিনা উইকেটে ১৫ রান।
এরপর থেকেই মূলত রানের গতি বাড়াতে থাকেন দুই ক্যারিবিয় ওপেনার।পাশাপাশি মাথায় রাখেন উইকেট হারানো যাবে না। কৌশলটি কাজেও দেয় বিস্তর।
১৬ ওভার পর্যন্ত কোন উইকেট না হারিয়ে ৮৫ রান তোলে জ্যাসন হোল্ডার ও তার দল।
মাশরাফি, সাইফউদ্দিন ছাড়াও ১৬ ওভারের মধ্যে বল করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং সাইফউদ্দিরে বদলি হিসেবে আসা মোস্তাফিজকে বেশ খরুচেই ছিলেন।
কিন্তু মিরাজ বোলিংয়ে আসতেই ভোজবাজির মত বদলে গেল ম্যাচের দৃশ্য। ১৭তম ওভারে তার দ্বিতীয় ডেলিভারিটি একটু বেরিয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে তুলে দিতে চেয়েছিলেন সুনিল আমব্রিস।।কিন্তু লাফিয়ে উঠে দারুণ দক্ষতায় বলটি তালুতে জমান মাহমুদউল্লাহ। ৩৮ রানে ফিরে গেলেন এই ওপেনার।
ঠিক তার পরের ওভারেই উইন্ডিজ বধের মিশনে সামিল হলেন সাকিব। দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ব্যক্তিগত ১ রানে উইকেটের পেছনে মুশফিকের নিরাপদ গ্লাভসে তুলে দিলেন ড্যারেন ব্রাভোকে।
২২ম ওভারেও উইকেটের দারুণ সুযোগ তৈরী করেছিলেন মিরাজ। শেই হোপ তার শেষ ডেলিভারিটি থার্ড ম্যান অঞ্চলে কাট করলে বেশ কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে ছিল। কিন্তু তা তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন মুশফিক।
সেই সুযোগে তৃতীয় উইকেটে রোস্টন চেজকে সঙ্গে নিয়ে দলকে ২শ রানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে শেই হোপ তুলে নেন নিজের ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
বলে রাখা ভাল এটি বাংলাদেমের বিপক্ষে তার টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে তিন ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডের শেষ দুটিতে সেঞ্চুরি করেছিলেন এই ক্যারিবিয় ওপেনার।১১ ডিসেম্বর শের ই বাংলায় অপরাজিত ১৪৬ রানের ইনিংস খেলা হোপ ১৪ ডিসেম্বর সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে করেছিলেন অপরাজিত ১০৮ রান। এবার ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম মোকাবেলায় করে বসলেন আরেকটি শতক।
হোপের সেঞ্চুরির পরই ওয়ানডেতে নিজের প্রথম ফিফটির দেখা পান রোস্টন চেজ। তবে এরপর আর নিজের ইনিংসটি টেনে নিতে পারেননি। ৪১তম ওভারে মাশরাফির লেংথ ডেলিভারি ডাউন দ্য উইকেটে পুল করতে চাইলে টপ এজ হয়ে শর্ট ফাইন লেগে অঞ্চলে মোস্তাফিজের হাতে ধরা পড়েন। তার আগে সংগ্রহ করেছেন ৫১ রান।
চেজের ফিরে যাওয়ার পর উইকেট আঁকড়ে রাখতে পারেননি সেঞ্চুরিয়ান শেই হোপও। ব্যক্তিগত ১০৯ রানে মোহাম্মদ মিঠুনের নিরাপদ হাতে পাঠিয়ে দেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
এরপর আবার মাশরাফি আঘাত। তাতে উইকেট ছাড়া হয়ে দলকে বড় বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে যান অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডার। তার আগে নামের পাশে যোগ করেছেন মাত্র ৪। ২২১ রানে নেই ক্যারিবিয়ানদের ৫ উইকেট!
মাশরাফির পর জ্বলে উঠলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজ।
৪৫তম ওভারের কথা। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের একেবারে প্রথম ডেলিভারি,কিছুটা খাট লেংথের; যা পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগ অঞ্চলে সৌম্যর শিকার বনে যান ডরউইচ। যাওয়ার আগে দলকে দিয়ে যান ৬ রান। এরপরের শিকারি মোস্তাফিজ। জোনাথান কার্টারকে (১১) স্লোয়ার মেরে লং অনে সাকিবের ক্যাচে পরিণত করেন। মোস্তাফিজের পর সাইফউদ্দিনের হানা দ্বিতীয় আঘাতে ১ রানে ক্লিন বোল্ড হয়ে ফেরেন কেমার রোচ।
এরপর ১৭ বলে ১৯ রান করা অ্যাশলি নার্সকে লং অনে সাব্বিরের তালুতে পুরে দেন মোস্তাফিজ। তাতে ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটের বিনিময়ে উইন্ডিজতের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ২৬১ রান।
সারাবাংলা/এমআরএফ/জেএইচ