বার্সাকে হারিয়ে ফাইনালে লিভারপুল
৮ মে ২০১৯ ০৪:২৫
নিঃসন্দেহে লিভারপুল গত কয়েক বছরের সেরা ম্যাচটিই খেলেছে। দুর্দান্ত প্রেসিং আর বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবলে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে জার্গেন ক্লপের শিষ্যরা। তিন গোলে এগিয়ে থেকে অ্যানফিল্ডে বার্সার এরকম হার একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। অ্যানফিল্ডের ইতিহাস রচনা করে বার্সাকে ৪-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পা রেখেছে অল রেডসরা। সেমি ফাইনালের আগের লেগে বার্সা লিভারপুলকে হারিয়েছিল ৩-০ গোলে।
ন্যু ক্যাম্পে যে স্কোয়াড ছিল সেটাই অ্যানফিল্ডে নামিয়ে কৌশলগত কোন পরিবর্তন দেখা মিললো না বার্সার। লিভারপুলের দিভোক ওরিগি এবং ভেইনালডাম জোড়া গোল করেন।
ঘরের মাঠে বার্সার পাওয়া সেই জয়ে ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়েছিলো দলটি। ফিরতি পর্বে লিভারপুলের মাঠে গোলশূন্য ড্র করলেও ফাইনালে পৌঁছে যেত দলটি। এটা ছিল একদম সহজ হিসেব। অপরদিকে ফাইনালে পৌঁছাতে হলে লিভারপুলকে জিততে হবে ৪-০ গোলের ব্যবধানে। ম্যাচের আগেই লিভারপুল হারিয়ে বসে দলের আক্রমণভাগের দুই তারকা খেলোয়াড় মোহামেদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনহোকে। বার্সার বিপক্ষে ম্যাচের আগে তাই লিভারপুলের সম্ভাবনাকে খুব একটা পাত্তা দিতে চায়নি ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে কাতালানদের জালে গোল উৎসব করে রূপকথা জয়ের মতোই ৪-০ গোলের জয় নিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় লিভারপুল।
মঙ্গলবার (৭ মে) রাতে অ্যানফিল্ডে বার্সার বিপক্ষে ৪-০ গোলে জিতে সেমিফাইনালের দুই পর্ব মিলে ৪-৩ গোলে এগিয়ে থেকে ফাইনালে পৌঁছালো ‘অল রেডস’ খ্যাত লিভারপুল।
সেমিফাইনালের প্রথম পর্বের ম্যাচে ন্যু ক্যাম্পেও আক্রমণ করে খেলা লিভারপুল নিজেদের মাঠে দ্বিতীয় পর্বের খেলাতেও শুরু থেকেই ছিল আক্রমণাত্মক। দলের আক্রমণভাগের সেরা দুই খেলোয়াড় না থাকলেও ক্লপের শিষ্যরা ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই বুঝিয়ে দেয় প্রতিপক্ষকে কোনো ছাড় না দিয়ে খেলে যাওয়ার।
ম্যাচের ৭ মিনিট সময়ে সফলতাও চলে আসে লিভারপুলের পক্ষে। ডি-বক্সের মধ্যে নেওয়া জর্ডান হ্যান্ডারসনের শট আন্দ্রে টের স্টেগান ঠেকাতে পারলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি পুরোপুরি। গোলমুখে সেই বল পেয়ে যান দিভোক ওরিগি। সেই বল জালে জড়াতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি বেলজিয়ামের এই ফুটবলার। ফলাফল ১-০। ম্যাচ জিতে ফাইনালে পৌঁছাতে লিভারপুলের দরকার তখন আরও ৩ গোল। একই সঙ্গে নিজেদের জাল অক্ষত রেখে খেলে যাওয়া পুরো ম্যাচ।
ম্যাচের দশম মিনিটে সাদিও মানে বার্সার সার্জিও রবার্তোর ট্যাকলের বিপক্ষে পেনাল্টি আবেদন করলে রেফারি তাতে সাড়া দেননি। ১৫ মিনিট সময়ে প্রথম সুযোগ পায় কাতালানরা। কৌতিনহোর বাড়িয়ে দেয়া বলে জর্ডি আলবার কাট ব্যাকে পাওয়া বলে শট নেন মেসি। কর্নারের বিনিময়ে লিভারপুলকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক আলিসন। ঠিক তার তিন মিনিট পরেই কৌতিহনোর নেয়া শট ঠেকিয়ে দেন আলিসন। ১৯ মিনিটে মেসির নেয়া শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে বার্সার হতাশা বাড়ে।
ম্যাচের ৫২ মিনিটে কর্নার কিক থেকে পাওয়া বলে লিভারপুলের ডাচ তারকা ডিফেন্ডার ফন ডাইকের ব্যাক হিল গোললাইন থেকে রক্ষা করেন বার্সেলোনা গোলরক্ষক। ঠিক তার পরের মিনিটেই মেসির পাসে সুয়ারেজের নেয়া শট ঠেকিয়ে দেন আলিসন।
ম্যাচের ৫৪ মিনিটে ডিফেন্ডার রবার্টসনের বদলি হিসেবে মাঠে নামা ভেইনালডামের গোলে লিভারপুল আরও এগিয়ে যায় ম্যাচে। যদিও এই গোলে বার্সার রক্ষণভাগের ভুল ছিল চোখে পড়ার মতো। জর্ডি আলবা পা থেকে বল কেড়ে ক্রস করেন অ্যালেকজান্ডার আর্ণল্ড। পেনাল্টি স্পটের কাছে পাওয়া বলে জোরালো শট নেন ভেইনালডাম। ফলাফল লিভারপুল ২-০ বার্সেলোনা।
ঠিক তার দুই মিনিট পরেই ম্যাচের ৫৬ মিনিটের মাথায় লিভারপুলের সুইস তারকা শাকিরির ক্রসে হেডে গোল করেন ভেইনালডাম। এই গোলে বার্সার প্রথম লেগের ৩ গোলের সমতা ফিরিয়ে আনে লিভারপুল। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে মেসি বাহিনীকে হতাশ করে স্কোরলাইন ৪-০ করেন ওরিগি। লিভারপুল কর্নার পেলেও রেফারির বাঁশি শুনে শট নেন অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড। আর সেখান থেকে বল পেয়ে বার্সার জালে জড়ান ওরিগি।
খেলার বাকি সময়ে মেসি-সুয়ারেজরা চেষ্টা করলেও লিভারপুলের রক্ষণভাগের দৃঢ়তাতে কাঙ্ক্ষিত গোল আর পাওয়া হয়নি। রেফারির শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে ৪-০ গোলে জয়ী হয়ে লিভারপুল রচনা করলো নতুন ইতিহাস। প্রথম লেগে এগিয়ে থেকেও দ্বিতীয় লেগে ব্যর্থ হওয়ার ইতিহাস আরও ভারী হলো বার্সার। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার লক্ষ্যে তাই স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের থাকতে হচ্ছে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। অন্যদিকে ক্লপের শিষ্যরা অপেক্ষায় থাকবে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা দ্বিতীয় ফাইনাল খেলার জন্য।
বুধবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আয়াক্স বনাম টটেনহাম ম্যাচ। সেই ম্যাচ যারাই জিতুক তাদের নিশ্চিত ভাবে ফাইনালে মোকাবিলা করতে হবে লিভারপুলের ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেও।
সারাবাংলা/জেএইচ/আরএ