বিশ্বকাপ মহারণের যাত্রায় প্রস্তুত ইংল্যান্ড-আফ্রিকা
৩০ মে ২০১৯ ১২:১৯
বলা যায় ক্রিকেটের জন্মদাতা হচ্ছে ইংল্যান্ড। তবে ক্রিকেটের জন্মটা ইংল্যান্ডে হলেও ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এখনো ওঠেনি ইংলিশদের মাথায়। এর আগে চার-চারবার বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেয়েছিল ইংলিশরা। আর তার ভেতর দু’বার ফাইনালে উঠেও অধরাই থেকে গেছে স্বপ্নের বিশ্বকাপ।
আর দক্ষিণ আফ্রিকার দশাও যে একই। বিশ্বকাপের পূর্বে সেরা দল হয়ে বিশ্বকাপে অংশ নেয় প্রায় প্রতিবারই, তবে কোনোবারই সফলতা দেখেনি আফ্রিকা। বারবার সেরা হয়েও ব্যর্থ হওয়ায় ‘চোকার’ তকমাও লেগে গেছে তাদের গায়ে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) এই দুই দলের মধ্যকার ম্যাচ দিয়েই শুরু পর্দা উঠছে ১২তম ওয়ানডে বিশ্বকাপের।
দু’দলেই রয়েছে বিশ্বসেরা সব ক্রিকেটার আর দু’দলই আছে ফেভারিটের তকমা নিয়ে শিরোপা জেতার দৌড়ে। বিশ্বকাপের মূল মঞ্চের লড়াইয়ে বিকেল সাড়ে তিনটায় ওভালে শুরু হবে ম্যাচ। ম্যাচের আগে দু’দলের ক্রিকেটার সম্পর্কে নেওয়া যাক কিছু ধারণা।
ইংল্যান্ডের দল:
সম্ভাব্য একাদশ: জেসন রয়, জনি বেয়ারস্ট্রো, জো রুট, ইয়ন মরগান (অধিনায়ক), বেন স্টোকস, জস বাটলার, মঈন আলী, ক্রিস ওকস, জোফরা আরচার, লিয়াম প্লাংকেট, আদিল রশীদ।
এবারের বিশ্বকাপের হট ফেভারিট ইংল্যান্ড। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই শক্তিশালী তারা। তার ওপর নিজেদের মাঠে বসেছে ক্রিকেটের মহারণের মঞ্চ। আর নিজেদের মাঠ বলে বরাবরই এগিয়ে থাকবে প্রতিটি ম্যাচে। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জেসন রয় আর জনি বেয়ারস্ট্রো আছেন অসাধারণ ফর্মে।
বিগত কয়েক ম্যাচে প্রতিপক্ষের বোলারদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন তারা। এছাড়াও টপ অর্ডারে আছে আরও দুই ব্যাটসম্যান জো রুট এবং অধিনায়ক ইয়ন মরগান। রুট, যিনি নামানুসারে খেলার রাস্তাটা ধরতে পারেন বেশ ভালোমতোই। শান্তশিষ্ট ব্যাটসম্যান, স্ট্রাইক রোটেট করতে জানেন বেশ ভালো করেই। আর রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে সতীর্থের সাথে খুব ভালো বোঝাপড়াও করতে পারেন এই ইংলিশ ক্রিকেটার। একটু দূরেই বল ঠেলে দিয়ে বের করতে পারেন সিঙ্গেল।
আর অধিনায়ক মরগান আছেন ভয়াবহ ফর্মে। পরিস্থিতি অনুযায়ী খুব ভালো ব্যাট চালাতে পারেন। ধীরস্থির গতিতেও খেলতে জানেন আবার দ্রুতগতিতেও ব্যাট চালাতে জানেন।
দলে আছে ইংল্যান্ডের সেরা পেস অলরাউন্ডার বেন স্টোকসও। এই ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের ভরসার অন্য এক নাম। কখনো বল হাতে আবার কখনো বা নিজের অসাধারণ ব্যাটিং দিয়ে কিংবা দুটো দিয়েই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তার আছে।
ইংলিশ দলে এরপর আছে জশ বাটলার ও মঈন আলী। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান বাটলার আর মঈন স্পিন অলরাউন্ডার। দুজনেই লোয়ার অর্ডারের দিকে দলের হাল ধরার ক্ষমতা রাখে।
বোলিং বিভাগেও ইংল্যান্ড বেশ পাকাপোক্ত। নিজেদের মাঠ হওয়ায় বাড়তি সুবিধাও তাদের। পিচে আর মাঠের সাথে তারা অধিক পরিচিত। পেসারদের আক্রমণভাগে আছেন প্লাংকেট, আরচার, ওকস। পাশাপাশি সহায়তায় থাকবেন অলরাউন্ডার স্টোকস।
আর স্পিন অ্যাটাক দুদিক থেকে করবেন অফ ও লেগি উভয় দিয়েই। মঈন আলী অফ স্পিন ও আদিল রশিদ লেগ স্পিন দিয়ে আক্রমণ চালাবেন প্রতিপক্ষের উপর। তবে ইংল্যান্ডের পেসবান্ধব পিচে স্পিন কতটুকু ভূমিকা রাখবে সেটা দেখার বিষয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল:
সম্ভাব্য একাদশ: হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি কক, আইডেন মার্কারাম, ফাফ ডু প্লেসিস (অধিনায়ক), জেপি ডুমিনি, ডেভিড মিলার, ক্রিস মরিস, এনডেল ফেলুওয়াকাও, কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিধি এবং ইমরান তাহির।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিবারই তাদের সেরা দল নিয়ে লড়াইয়ে নামে বিশ্বকাপের। কিন্তু ছুঁয়ে দেখা হয় না বিশ্বকাপের স্বর্ণালি শিরোপা কখনোই। প্রতিবারই তারা কোনো না কোনোভাবে জয়ের কাছাকাছি এসেও হেরে যায়। আর একারণে ‘চোকার’ নামকরণও করা হয়েছে আফ্রিকাকে।
এবারের আফ্রিকা দলটাও সেরা একটা দল। তাদের ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সবকিছুই দুর্দান্ত। ব্যাটিং লাইনআপে আছেন ভরসার প্রতীক হাসিম আমলার মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান, ডি ককের মতো তরুণ মারকুটে ব্যাটসম্যান। ডু প্লেসিসের মতো সময়োপযোগী ব্যাটসম্যান, মিলারে মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান।
আর বোলিংয়ে আছে রাবাদা, ফেলুওয়াকাও এর মতো তরুণ গতি দানবীয় পেসার, এছাড়াও আছে এনগিধির মতো ডেথ স্পেশালিস্ট। মরিসের মতো অভিজ্ঞ পেসার, তাহিরের মতো বিশ্বসেরা লেগ স্পিনার।
তাহিরের স্পিরিট দেখে ইয়াং জেনারেশন অনুপ্রাণিত হয়। বয়সের ছাপ শরীরের উপর পড়লেও তাহির কখনো তা পড়তে দেননি মাঠে। তাই তো প্রায় ৪০ বছর বয়সী হয়েও এখনো বিশ্ব সেরাদের একজন এই লেগি।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ফিল্ডিং নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন ওঠে না। কারণ বরাবরই ওরা ফিল্ডিংয়ে বিশ্বের অন্য সব দেশ থেকে এগিয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডারও যে তাদেরই ঝুলিতে। মিলার, প্লেসিস, ডুমিনির মতো সেরা ফিল্ডার খুব কমই আছে অন্য দেশগুলোর কাছে।
ইংল্যান্ড আর আফ্রিকার শক্তিমত্তা:
দুই দলের শক্তির তুলনা করতে গেলে ব্যাটিংয়ের দিক থেকে বেশ এগিয়ে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রয় থেকে শুরু করে টেল এন্ডার পেসার আরচার পর্যন্ত মোট নয়জন ব্যাটসম্যান আছে। পক্ষান্তরে আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন আমলা থেকে শুরু করে মরিস পর্যন্ত মোট সাতজন ব্যাটম্যান।
টি-টোয়েন্টিতে মরিস ব্যাটসম্যান হিসেবে কাজ করলেও ওডিআইতে তাকে খুব একটা কার্যকর ভূমিকায় দেখা যায়নি। তবে শেষ মুহূর্তে নামলে ঝড়ো ইনিংস উপহার দিতে পারেন এই বোলার কাম ব্যাটসম্যানও।
বোলিংয়ের দিক দিয়ে নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা। রাবাদা, এনগিধি, ফেলুওয়াকাও আর মরিসের মতো দুর্দান্ত পেসার আছে আফ্রিকার। সেই তুলনায় প্লাংকেট, ওকস, আরচাররা নিজের দেশেও থাকবেন দ্বিতীয় সেরা হয়েই। ব্যাটিং-বোলিংয়ের সমন্বয়ের দিকে তাকালে দেখা যাবে জমজমাট লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের।
তবে নিজেদের মাটিতে কিছু হলেও এগিয়ে থাকবে ইংলিশরা। আর ওদিকে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম সাফল্য খোঁজার লড়াইয়েও মরিয়া থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিশ্বকাপের সকল ম্যাচ দেখা যাবে স্যাটেলাইট চ্যানেল জিটিভিতে। এছাড়া অনলাইনে কোন প্রকার সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই বিশ্বকাপের সবগুলো ম্যাচ দেখা যাবে র্যাবিটহোলে ওয়েবসাইটে এই লিংকে— www.rabbitholebd.com
সারাবাংলা/এসএস
ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা উদ্বোধনী ম্যাচ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ বিশ্বকাপ