বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব: হারানো সুদিন ফেরানোর লড়াই এবার
৭ জুন ২০১৯ ২০:৩৩
ঢাকা: ফুটবলের সুদিন বা ঐতিহ্য দেখেছে দেশের ফুটবল সমর্থকরা। অনেকের মতেই সে সুদিন আর নেই। না থাকার কারণও যৌক্তিক। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলার দিবাস্বপ্নে বিভোর দেশের ফুটবল অভিভাবক। গতবার ভুটানের কাছেও হেরে নির্বাসনে যেতে হয়েছিল দেশের ফুটবলকে। সেই ২০১৬ সালে ভুটানের কাছে হেরে দীর্ঘ ১৭ মাস আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে ছিল বাংলাদেশ।
এর দায় যেমন ফুটবলারদের তেমনি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের। এই ১৭ মাসে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অনেক জল গড়িয়েছে। বাংলাদেশ র্যাংকিংয়ের তলানিতে ঠেকেছিল (১৯৭)। ম্যাচ হেরে র্যাংকিংয়ে এশিয়ার মধ্যে উপরে না থাকায় বলতে গেলে ‘উটকো ম্যাচ’ খেলতে হচ্ছে জামাল-রবিউলদের।
কখনও যেটা করতে হয়নি সেই বিশ্বকাপ প্রাক বাছাইপর্ব টপকানোর চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। যেখানে এখন মূল বাছাইপর্বে পর্বের প্রস্তুতি নেয়ার কথা। ২০০৫ সাল থেকে সরাসরি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অংশ নিয়ে আসছে লাল-সবুজরা। ১৬ বছরে এবারই প্রথমবার প্রাক বাছাইপর্ব খেলতে হচ্ছে বাংলাদেশের।
যেখানে প্রতিবেশি দেশগুলো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করে খেলার মানের পাশাপাশি র্যাংকিংটাও এগিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখছে ভারত। যাদের সঙ্গে একটা সময় টক্কর দিয়ে এসেছে সালাউদ্দিন-বাবলুরা। তারা এখন র্যাংকিংয়ে ১০০’র ঘরে। আর এদিকে বাংলাদেশও এগিয়ে গেছে পেছানোর দিক থেকে। তাই তো লাওসের সঙ্গে প্রাক বাছাইপর্ব খেলে মূল পর্বের আশা করতে হচ্ছে লাল-সবুজদের।
তাই লাওসের সঙ্গে প্রাক বাছাইপর্বের অ্যাওয়ে ম্যাচে জিতেও আক্ষেপের সুর সাবেক ফুটবলারদের মুখে। সাবেক তারকা ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলু যেমনটা বলছিলেন সারাবাংলাকে, ‘এই ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। নি:সন্দেহে ভালো পারফরমেন্স করেছে। তবে, কথা হলো প্রাক বাছাই খেলে মূল পর্বে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। যেটা কখনই হয়নি। উচ্ছ্বাসের চেয়ে দুঃখটাও কম না। আজকে দেশের ফুটবল যদি ঠিক পথে থাকতো তাহলে এ দিন হয়তো দেখতে হতো না। আমাদের মূল ভাবনা হওয়া উচিত বিশ্বকাপের মূল বাছাইপর্বে সরাসরি খেলা। ’
আক্ষেপটা এই জায়গায়। দীর্ঘমেয়াদী কোনও পরিকল্পনার ছাপ নেই বাফুফের। কোনও টুর্নামেন্ট সামনে এলেই সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল অভিভাবককে। যার কারণে ক্ষমতায় এসে সর্বোচ্চ অভিভাবকের দেয়া ‘২০২২ সালে বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ’ ভবিষ্যৎবাণী এখন হাস্যরসের যোগান দেয়।
ঘরোয়া ফুটবলে এখন অনেক খেলোয়াড় সংকট। পাইপলাইনে ফুটবলারের অভাব। সেটার দিকে নজর নেই ফেডারেশনের। দেশের ফুটবলের ভবিষ্যত না গড়ে ঠিক কোন পথে এগুচ্ছে বাফুফে সেটা সুস্পষ্ট নয় কর্মকর্তা-ফুটবলার বা সংবাদকর্মীদের কাছেও।
সে নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথাও নেই অনেকের। আপাতত সবাই বুদ হয়েছে প্রাক বাছাইয়ের সেকেন্ড লেগের দিকেই। ১১ জুন ঢাকায় সন্ধ্যা সাতটায় লাওসকে আতিথ্য দেবে বাংলাদেশ। অ্যাওয়ে ম্যাচে লাওসকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে মূল বাছাইপর্বে এক পা দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। সমীকরণটা এমন, ড্র করলেই মূলপর্বে পা রাখবে জেমি ডে ও তার শিষ্যরা।
ম্যাচটা হবে হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার ম্যাচ। ম্যাচটা হবে জোয়ার ফিরিয়ে আনার ম্যাচ। অন্তত লাওস বধের নায়ক রবিউল হাসান তাই মনে করেন, ‘হোম ম্যাচে ভালো খেলে দেশে ফুটবলের হারানো জোয়ারটা আবার ফেরত আনতে চাই।’
সারাবাংলা/জেএইচ
আরও পড়ুন:
লাওস বধ করে বিশ্বকাপের মূল বাছাইপর্বে এক পা বাংলাদেশের
‘বিশ্বকাপ ফুটবল স্বপ্নের’ ফেরিওয়ালা রবিউল
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মূলপর্বে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে লাওসে বাংলাদেশ
বিশ্বকাপ প্রাক বাছাইয়ে যাদের পায়ে মিলবে ম্যাজিক
থাই ক্লাবকে উড়িয়ে শেষ হলো বাংলাদেশের প্রস্তুতি
বাংলাদেশের ফুটবলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সরব উপস্থিতি
বাংলাদেশ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বিশ্বকাপ প্রাক বাছাইপর্ব লাওস