Tuesday 01 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিষণ্ণ বিকেলে বাকের ভাইয়ের মুগ্ধতা


১২ জুন ২০১৯ ০৮:৫৫ | আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ১৮:২৫
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসাদুজ্জামান নূর

শৈশবে বাকের ভাইকে কত জায়গায় কতবার দেখেছি তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু ব্রিস্টলে তার সঙ্গে দেখা হওয়াটা ছিল ভাবনারও অতীত। এভাবে দেখা হবে, এভাবে বিষণ্ণ একটি বিকেল কথার মায়াজাল বিছিয়ে আমাদের মুগ্ধ করে তুলবেন কে ভেবেছিল?

বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ধরাবাঁধা জয়ের ম্যাচটি বৃষ্টিতে পণ্ড হওয়ার পর মন বসছিল না কিছুতেই। দুপুর সোয়া দুইটা নাগাদ সংবাদ সম্মেলনে যাই বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে। শেষ করে প্রেস বক্সে ফিরে অফিসে নিউজ পাঠিয়েছি। তখন বিকেল ৫টা। সন্ধ্যা নামতে নামতে সাড়ে ৯টা। মানে পুরো সাড়ে চার ঘণ্টা হাতে। কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।

সোয়া ৫টার দিকে বাইরে বেরিয়েছি তখনো বেহায়া বৃষ্টির ঢলাঢলি। অবশ্য দুপুরের মতো অতটা প্রবল নয়। বেশ কমে এসেছে। গুড়ি, গুড়ি। মন বলছিল হোটেলে ফিরে যাই। মুখ দিয়েও তা বেরিয়ে এল। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচে বাংলাদেশ পয়েন্ট হারালো! কোথায় বা যাব? কী করব? পাশ থেকে এক সহকর্মী প্রস্তাব করলেন, কোথাও ঘুরে আসি, ভাল লাগবে।দ্বিমত করলাম না। তাতে যদি দগদগে ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ পড়ে।

বিজ্ঞাপন

ব্রিস্টল কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ড থেকে ট্যাক্সিতে চেপে রওনা হই। মিনেট বিশেক লাগল। ব্রিজের অদূরে ক্যাব থেকে নেমে কিছুসময় হেঁটে যেতেই মোটা মোটা তারে দুই পাহাড়ের মাঝে ঝুলন্ত কিছু একটা দৃষ্টিগোচর হল। বুঝলাম এই সেই বিখ্যাত ক্লিফটন সাসপেনশন ব্রিজ।

ঘন সবুজ বনানী আর তার পাশ দিয়ে কুলকুল রবে বয়ে যাওয়া অ্যাভন নদীর ওপরে ১৮৬৪ সালে নির্মিত হয়েছিল ব্রিজটি। যা ক্লিফটন ও লেইউডকে যুক্ত করেছে। বৃষ্টিস্নাত বিকেলে গাঢ় সবুজের সঙ্গে লেপ্টালেপ্টিতে কী অপার সৌন্দর্য্যই না ছড়াচ্ছিল সাসপেশন ব্রিজ। তাতে কিছু সময়ের জন্য মাশরাফিদের হারানো পয়েন্টের কষ্ট কিছুটা প্রশমিত হয়।

ঠাণ্ডায় হিম করে দেওয়া বাতাসে ব্রিজের এপার থেকে ওপার ঘুরে এসেছি। হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা হব। ঠিক তখন ক্লিফটনের পাড়ে চশমা পড়া, গায়ে চাদর মোড়ানো এক ভদ্রলোককে দেখি উদাস মনে একাকী ব্রিজের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। প্রথমে আমলে নেইনি। কত বাঙালিতোই ব্রিস্টলে থাকে। কিন্তু খানিক বাদেই সম্বিত ফিরে পাই, আরে এ তো নূর ভাই (আসাদুজ্জামান নূর)। ততক্ষণে তিনি আমাদের ছাড়িয়ে গেছেন, ব্রিজে উঠবেন। দ্রুত হেঁটে পেছন থেকে ডাকতেই ফিরে তাকান।

কেমন আছেন? স্মিত হেসে উত্তর দেন, ভালো। কথা বাড়তেই মনে হল, তারও মত মন খারাপ এবং কারণটিও একই। আমাদের মতো তিনিও বাংলাদেশের পয়েন্ট হারানোর বেদনা প্রশমনে এখানে এসেছেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পয়েন্ট হারিয়েছে বলে তার মনও আজ বিষণ্নতায় ছেয়ে গেছে।

‘দিনটি আমাদের জন্য বিষণ্ণ একটা দিন। প্রকৃতি যেমন বিষণ্ণ তেমনি আমরা বাংলাদেশ থেকে যারা খেলা দেখতে এসেছি বা প্রবাসী বাঙালি যারা আছেন সকলেই আজকে একটু বিষণ্ণ হয়ে আছেন। কারণ খেলাটা হয়নি। এবং এই খেলাটা আমাদের জন্য জরুরি ছিল। আমরা সবাই আশা করেছিলাম শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করার শক্তি বাংলাদেশ রাখে। জয় লাভ করলে অনেক বেশি এগিয়ে যেতাম। সেই জায়গাটিতে আমাদের একটা সমস্যা তৈরি হলো।’

তবে আশাহত নন দেশের স্বনামধন্য এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য। সামনের ম্যাচগুলো মাশরাফিরা ঠিকই স্বমহিমায় ফিরবেন বলেই তার বিশ্বাস। ‘তবে আমি আশা করি, আমাদের দল সামনে ভালো করবে এবং শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে যাবে। যাতে আমরা বাংলাদেশ দলকে নিয়ে গৌরব করতে পারি।’

স্বপরিবারে ক্রিকেটের মহাযজ্ঞ দেখতে বিশ্বকাপের শুরুতেই ইংল্যান্ডে এসেছেন আসাদুজ্জামান নূর। উদ্দেশ্য ছিল তিনটি ম্যাচ দেখে দেশে ফিরবেন। ম্যাচ দেখা শেষ। এবার দেশে ফেরার পালা। ‘আমি দুটো খেলা দেখেছি এবং এটাই শেষ ছিল। এখন দেশে ফিরে যাব।’

নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের আরেক পরিচয় আমরা কম বেশি সবাই জানি এবং একটু আগেই সেটা উল্লেখ করেছি; ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য তিনি। সেই সূত্রে জাতীয় সংসদে টাইগার দলের দলপতি মাশরাফি বিন মুর্ত্তজার সহকর্মী। ক্রিকেটে বিশ্বদরবারে দেশকে অনন্য উচ্চতায় মাশরাফিকে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে অনুভূতি কেমন?  জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্য হিসেবে আগামীতে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাওয়া তার জন্য কতটা সহজ হবে জানি না। কঠিনই হয়ে যাবে। তবে মাশরাফি আমাদের বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক বড় অবদান রেখেছে। অধিনায়ক হিসেবে, ক্রিকেটোর হিসেবে বাংলাদেশেকে বড় জায়গায় নিয়ে গেছে। তার প্রতি আমাদের অভিনন্দন। এবং আজকে তাকে সংসদ সদস্য হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত। সংসদ সদস্য হিসেবে সে ভূমিকাটি পালন করার সুযোগ এখনো তেমনভাবে পায়নি। আশা করি, ক্রিকেটে সে যেমন সাফল্য দেখিয়েছে সংসদ সদস্য হিসেবেও তেমনি সাফল্য দেখাবে।’

মাশরাফিকে নিয়ে এমন মন্তব্য অনেকেই করেছেন। কিন্তু আসাদুজ্জামান নূরের কণ্ঠে কথাগুলো অন্যরকই শোনাল। কী সাবলীল, কী তার বাচনভঙ্গী! বাক্যের প্রতিটি পরতে পরতে মুগ্ধতার যেন ছড়াছড়ি। সেই মুগ্ধতা গায়ে মেখে, টাইগারদের পয়েন্ট হারের গ্লানি ঝেড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে হোটেলে ফিরি।

বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র‍্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র‍্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।

আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে বৃষ্টির রেকর্ড

সারাবাংলা/এমআরএফ/একে

আসাদুজ্জামান নূর ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ টাইগার বাকের ভাই বিশ্বকাপ স্পেশাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর