রোববার ভারত-পাকিস্তান মহারণ, প্রস্তুত বিশ্বমঞ্চ
১৫ জুন ২০১৯ ২১:৩০
ক্রিকেটের সব থেকে বড় মঞ্চ প্রস্তুত ফাইনালের আগে আরও এক ফাইনালের আয়োজনের জন্য। যে লড়াইয়ে মাঠে খেলবে ২২ জন কিন্তু লড়াইটা চলবে প্রায় ১৭০ কোটি মানুষের। ভারতের ১৫০ কোটি মানুষ চেয়ে থাকবে পাকিস্তানকে হারানোর জন্য। আর পাকিস্তানের ২০ কোটি মানুষ আশায় থাকবে বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর জন্য।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে এই মহারণের জন্য অপেক্ষা করতেছে ১৯তম দিন পর্যন্ত। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডের স্টেডিয়াম প্রস্তুত ভারত-পাকিস্তানের মহারণের আয়োজনের জন্য। বাংলাদেশ সময় রোববার (১৬ জুন) দুপুর সাড়ে তিনটায় ম্যাচটি মাঠে গড়াবে।
এই ম্যাচটি ঘিরে বাড়তি উত্তেজনা কাজ করে ক্রিকেট বিশ্বে। কেবল মাঠের ভেতরে দু’দলের লড়াইয়ের জন্য নয়। মাঠের বাইরে দু’দেশের সম্পর্কটা চরমে থাকার কারণে এই ম্যাচে বাড়তি উত্তেজনা কাজ করে দু’দেশের ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে।
যা মাঠের বাইরে থেকে ছড়িয়ে পড়ে মাঠের মধ্যেও। এটা কেবল একটি ক্রিকেট ম্যাচ থাকে না, এই ম্যাচটি হয়ে যায় তখন আরও বড় কিছু।
দুই দলের অবস্থান আইসিসির প্রকাশিত সবশেষ র্যাংকিংয়ে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত ১২২ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে আছে ২য় স্থানে আর ৯৩ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ৬ষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছে পাকিস্তান। দু’দলের রেটিং পয়েন্টের পার্থক্যটা নেহাতই কম নয়। ভারতের থেকে চার ধাপ পিছিয়ে থাকা পাকিস্তানের সাথে রেটিং পয়েন্টের পার্থক্য ২৯।
তবে ম্যাচটি যখন ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার তখন রেটিং পয়েন্ট কিংবা র্যাংকিংয়ের অবস্থান দিয়ে ম্যাচের গুরুত্ব বিশ্লেষণ হয় না। এ ম্যাচের উত্তাপটা কেবল দেখা মেলে খেলার ময়দানেই। যেখানে সমানে সমান লড়াই করে দু’দল। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের সাথে ঠিক যেন পেরে ওঠে না পাকিস্তান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ছয় দেখার একবারও ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান।
এবারের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপটি বিশ্বকাপের ১২তম আসর। আর ১২টি আসরের মধ্যে ৬টি আসরের ভারত পাকিস্তানের মুখোমুখি দেখা হয়েছে। যার প্রথমটি ছিল ১৯৯২ সালে, আর সেবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করেছিল পাকিস্তান।
আর সেখান থেকে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দ্বৈরথ শুরু। সেবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পাকিস্তানকে ৪৩ রানের ব্যবধানে হারিয়েছিল ভারত। এরপর নিয়মিতই বিশ্বকাপে দেখা মিলতো ভারত-পাকিস্তানের। ২০০৭ বিশ্বকাপ ছাড়া ১৯৯২ থেকে ২০১৫ প্রতিটি বিশ্বকাপেই একে অপরের বিপক্ষে খেলেছে এই দুই দল। তবে পাকিস্তানের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন আসেনি। হেরেছে ছয় বিশ্বকাপের ছয় ম্যাচের ছ’টিতেই।
ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শচীন টেন্ডুলকার। ১৯৯২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার সব গুলো ম্যাচ খেলছেন শচীন। আর এই পাঁচ ম্যাচে শচীন করেছেন ৩১৩ রান। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ৯৮। অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সর্বাধিক রান সংগ্রহ করেছেন সাইদ আনোয়ার। ১৯৯৬ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনটি বিশ্বকাপে তিন ম্যাচ খেলছেন সাইদ আনোয়ার। আর ভারতের বিপক্ষে করেছেন ১৮৫ রান। যার মধ্যে একটি আছে ১০১ রানের ইনিংসও।
ভারতের হয়ে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বাধিক উইকেট শিকারি ভেঙ্কটেশ প্রসাদ। ১৯৯৬ আর ১৯৯৯ দুই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮টি উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি পাকিস্তানি ওয়াহাব রিয়াজ ২০০৩ আর ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খেলছেন দুই ম্যাচ। এই দুই ম্যাচে ওয়াহাবের শিকার ছয়টি উইকেট।
এবারের বিশ্বকাপে ভারতের উড়ন্ত সূচনা আর অন্যদিকে ম্যাচ জিততেই যেন ভুলে গেছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে খেলা দুই ম্যাচের দু’টিতেই জিতেছে ভারত আর চার ম্যাচে কেবল একটি জয় পাকিস্তানের। বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালের স্বপ্ন জিয়িয়ে রাখতে পাকিস্তানের এই ম্যাচ জয়ের বিকল্প নেই। অন্যদিকে নিজেদের জয়ের ধারা অব্যহত রাখতে লড়বে ভারত।
ভেন্যু: বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্টেডিয়াম ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত ক্রিকেটের ঐতিহ্যের অন্যতম বাহক ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ড।
ক্রিকেটের সব থেকে প্রাচীন স্টেডিয়াম গুলোর ভেতরে অন্যতম এই ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই স্টেডিয়ামে প্রায় ২৬ হাজার সমর্থক খেলা উপভোগ করতে পারেন।
১৮৮৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে এই স্টেডিয়ামের। আর ১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাথে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়ে পথ চলা শুরু হয় স্টেডিয়ামটির।
ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামটি কেবল ক্রিকেট গ্রাউন্ড হিসেবেই সুপরিচিত নয়। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ইতিহাস এখনো জ্বলজ্বল করছে এখানে। ১৯৪০ সালে এই স্টেডিয়ামকে সৈন্যদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হত।
বোমার আঘাতে স্টেডিয়ামটির কয়েকটি স্ট্যান্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল ওল্ড ট্রাফোর্ড। তবে পরবর্তীতে আবারো সংস্কার করা হয় স্টেডিয়ামটির।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম সেমিফাইনাল সহ মোট ৬টি ম্যাচ আয়োজিত হবে এই স্টেডিয়ামে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার করা ৩১৮ রানই এই স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
বিশ্বকাপে মুখোমুখি দুই দল: মোট ম্যাচ: ০৬টি, ভারত জয়ীঃ ০৬টি, পাকিস্তান জয়ীঃ ০টি, পরিত্যক্তঃ ০টি, ড্রঃ ০টি। মুখোমুখি দুই দল মোট ম্যাচ: ১৩১টি, ভারত জয়ী: ৫৪টি, পাকিস্তান জয়ী: ৭৩টি। ড্র: ০টি ম্যাচ পরিত্যক্ত: ৪টি।
দৃষ্টি থাকবে যাদের ওপর পাকিস্তান: বাবর আজম, মোহাম্মদ আমির। ভারত: বিরাট কোহলি, জাসপ্রতি বুমরাহ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তান স্কোয়াড: সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), বাবর আজম, ফখর জামান, হারিস সোহেল, হাসান আলী, ইমাদ ওয়াসিম, ইমাম-উল-হক, মোহাম্মদ হাফিজ, মোহাম্মদ হাসনাইন, শাদাব খান, শাহীন শাহ আফ্রিদি, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ, আসিফ আলী।
বিশ্বকাপে ভারত স্কোয়াড: বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), রোহিত শর্মা (সহঅধিনায়ক), শেখর ধাওয়ান (ইনজুরির কারণে তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে), মহেন্দ্র সিং ধোনি (উইকেটরক্ষক), দীনেশ কার্তিক, বিজয় শঙ্কর, লোকেশ রাহুল, কেদার যাদব, হার্দিক পাণ্ডিয়া, জাসপ্রিত বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ সামি, রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব ও যুগবেন্দ্র।
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
আরও পড়ুন: ফেভারিট বাংলাদেশের ভাবনায় নেই ছোট মাঠ
সারাবাংলা/এসএস