পক্ষপাতিত্ব ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদক নেয়নি মেসি
৭ জুলাই ২০১৯ ০৮:২৮
কোপা আমেরিকার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল চিলি বনাম আর্জেন্টিনা। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটিতে চিলিকে ২-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা নিশ্চিত করেছে টুর্নামেন্টের ১৪ বারের শিরোপা জয়ী আর্জেন্টিনা। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ হলেও এই ম্যাচে ৩৭ মিনিটে পাওয়া দুই দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি এবং গ্যারি মেডেলের লাল কার্ডই বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনার বিষয়। আর ম্যাচ শেষে তৃতীয় স্থান পাওয়া আর্জেন্টিনার সবাই পদক নিলেও সেটি গ্রহণ করতে অস্বীকার জানান আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।
আর সেই অস্বীকৃতির কারণ যে প্যারাগুইয়ান রেফারি হোসে ডিয়াজের দেখানো লাল কার্ড তা নিশ্চিত করা বলা না গেলেও ম্যাচশেষে মিক্সজোনে মেসি নিজেই জানালেন নিজের ক্ষোভের কথা ও রেফারির বিপক্ষে তুললেন পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। এতেই থেমে থাকেননি তিনি। এ সময় ক্ষোভ জানান দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ফেডারেশন (কনমেবল) এবং সংস্থাটিতে ব্রাজিলিয়ানদের আধিপত্যের দিকেও।
শান্তশিষ্ট ও ভদ্র ফুটবলার হিসেবেই পরিচিত বার্সেলোনার তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি। কিন্তু এবারের কোপা আমেরিকায় ফুটবল মাঠের বাইরে প্রথম তিনি আলোচনায় আসেন ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে রেফারিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে খেলা রেকর্ড বিবেচনা করলে ৬৭০ ম্যাচ পরে মেসি ক্যারিয়ারের ২য় লাল কার্ড পেলেন। এর আগে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টে হাঙ্গেরির বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচের ৬৫ মিনিট সময়ে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় মেসিকে।
ম্যাচ শেষে ক্ষুব্ধ মেসি মিক্স জোনে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল সংস্থা ও রেফারিংয়ের মান নিয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি যা বলেছিলাম তাই হয়েছে। আমি মঞ্চে যাইনি কারণ সেখানে গিয়ে নিজেদের অসম্মান ও দুর্নীতির অংশ বানাতে চাইনি। আমরা অবশ্যই ফাইনালে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা আমাদের যেতে দিলনা। দুর্নীতি এবং বাজে রেফারিংয়ের কারণে ফুটবল ভক্তরা বঞ্চিত হল সুন্দর খেলা উপভোগ করা থেকে। এরই সঙ্গে ফুটবলকেও তারা ধ্বংস করার চেষ্টাই করছে।’
নিজের লাল কার্ড পাওয়া প্রসঙ্গেও এ সময় কথা বলেন মেসি। তিনি বলেন, ‘কেনো আজকে আমাকে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে? আমার মনে হয় আগের ম্যাচের কথার জন্যেই এটা আমার জন্যে বরাদ্দ ছিল।’
কোপা আমেরিকার ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন কে হবে প্রসঙ্গে মেসি বলেন, ‘ অবশ্যই ব্রাজিল। কোনো সন্দেহ নেই এতে। কারণ এটা ব্রাজিলের জন্যেই গোছানো। আশা করি রেফারি এবং ভিএআর প্রযুক্তি এমন কিছুই করতে পারবে না যাতে পেরু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। শক্তিশালী দল হওয়া সত্ত্বেও পেরুকে এসব কিছুর বিপক্ষেই লড়তে হবে। তবে পেরুর জেতাটা কঠিন হবে।’
উল্লেখ্য, সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ২-০ গোলে পরাজিত হয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। ওই ম্যাচে আর্জেন্টিনার দুটি পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। রিপ্লেতে দেখা যায় পেনাল্টি পেতে পারত আর্জেন্টিনা।
প্রথমটাতে টেলিভিশন রিপ্লেতে ব্রাজিল অধিনায়ক দানি আলভেসের ট্যাকলে আর্জেন্টিনার আগুয়েরোকে ডি-বক্সে পড়ে যেতে দেখা যায় যেখান থেকে পাল্টা আক্রমণে ব্রাজিলের দ্বিতীয় গোলের সূচনা হয়।
দ্বিতীয় ঘটনাটিতেও ডি-বক্সের মধ্যে ব্রাজিলের মিডফিল্ডার আর্থার কাঁধ দিয়ে আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার নিকোলাস ওতামেন্দির গলায় আঘাত করেন। এই দুটি ঘটনার কোনটাই দেখেননি সামব্রানো এবং আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের অভিযোগের পরে কোন ঘটনা ঘটেছিল কিনা সেটাও ভিএআর টিমকে দেখতে বলেননি ইকুয়েডরের এই রেফারি। ম্যাচ শেষে রেফারিং নিয়ে বিতর্ক আরও তুঙ্গে উঠে যখন ভিএআর প্রযুক্তির দায়িত্বে থাকা উরুগুয়ের লিওডান গনজালেজ জানান যে তিনি মাঠে থাকা রেফারি সাম্ব্রানোকে প্রযুক্তির ব্যবহার করার অনুরোধ জানালেও দুইবারই তা এড়িয়ে যান মাঠে থাকা রেফারি।
সেই ম্যাচ শেষেও রেফারিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন মেসি। মেসি সেই ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ ব্রাজিল আমাদের চাইতে খুব বেশি ভালো দল তা বলবো না। তারা ম্যাচে আগে গোল পেয়েছে। কিন্তু আমরা ম্যাচে ফিরতে পারিনি বাজে রেফারিংয়ের কারণে। নিকোলাস অটামেন্ডি ও আগুয়েরো বিরুদ্ধে করা দুইটা ফাউলেই পেনাল্টি আমরা পেতে পারতাম কিন্তু সেগুলো দেওয়া হয়নি। তারা আরও কিছু জঘন্য ফাউল দেখেছে কিন্তু এড়িয়ে গেছে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়েই।’
এ ঘটনায় আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন (এএফএ)দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ফেডারেশনের (কনমেবল) কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে রেফারিংয়ের বিষয় নিয়ে। ছয় পৃষ্ঠার এক অভিযোগে এফএ সভাপতি ক্লডিও তাপিয়া রেফারিংয়ের ভুলগুলো কনমেবলের কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান।
অভিযোগ পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তাপিয়া অভিযোগ তোলেন ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর দিকে। তিনি ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের মাঠে যাওয়া পরবর্তী আচরণকে ‘রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন’ বলে অভিযোগ করেন ও বলেন, ‘তার আচরণ কনমেবল এবং ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার রীতিবিরোধী।’ যদিও কোপা আমেরিকা ২০১৯ এর আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সেমি-ফাইনালে ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার এবং ফাইনালেও তিনি উপস্থিত থাকতে পারেন।’
এদিকে এই বাকযুদ্ধকে আরও উত্তাল করে তুলেছে ব্রাজিলের গণমাধ্যম গ্লোবোএস্পোর্তে’র এক প্রতিবেদন। তাদের প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘সেমি ফাইনাল ম্যাচের আগে ভিএআর প্রযুক্তিতে একটা সমস্যা হয়েছিল। বোলসোনারোর নিরাপত্তা দলের ব্যবহার করা রেডিও সিগন্যালের জন্য রেফারিদের সঙ্গে ভিএআর টিমের যোগাযোগের প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়েছিল।’
আর এই প্রতিবেদনের পরেই আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে জানায়, ‘আমরা খুবই উদ্বিগ্ন যে, ব্রাজিলের গণমাধ্যম এবং নিউজ ওয়েবসাইটগুলো ভিডিও অপারেটিং রুমের সঙ্গে মাঠের অফিসিয়ালদের যোগাযোগের পদ্ধতিতে সম্ভাব্য সমস্যা এবং প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কথা বলছে। সেই প্রতিবেদন গুলোতে দেখা যায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর নিরাপত্তা দলের কারণে এই প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে।’
আর এই জন্য আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে তারা জানতে চেয়েছে, স্টেডিয়ামে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো ও তার নিরাপত্তা দলের উপস্থিতির কারণে ভিএআর ব্যবহারে কোনো সমস্যা হয়েছিল কিনা।
তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে লাল কার্ডে দেখার কারণে কোপা আমেরিকার পরবর্তী আসরের প্রথম ১ বা ২ ম্যাচ নিষিদ্ধ থাকতে পারেন মেসি। ২০২০ সালে কোপা আমেরিকার পরবর্তী আসর অনুষ্ঠিত হবে যৌথভাবে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়াতে।
এত সব তর্ক-বিতর্কের মাঝেও ফুটবল ভক্তদের দৃষ্টি থাকবে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে যেখানে রোববার (৭ জুলাই) পেরুর বিপক্ষে খেলবে স্বাগতিক ব্রাজিল।
সারাবাংলা/এসবি/ওএম
আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা পক্ষপাতিত্ব ও দুর্নীতির অভিযোগ মেসি