কতটা পেরেছেন তামিম?
১০ জুলাই ২০১৯ ১৭:১২
গেল বছরের ডিসেম্বরের কথা। ঘরের মাঠে মাত্রই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ শেষ হয়েছে। বিপিএল শুরু হবে হবে ভাব। মিরপুরে অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে এক আলোচনায় মাত্রই শেষ হওয়া সিরিজে তামিম ইকবালের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে জানতে চাইলাম। কেন চাইলাম সেটা আগে বলি।
তিন ম্যাচ ওয়ানডের ওই সিরিজে মিরপুরে প্রথমটিতে ২৪ বল থেকে ১২ করেছিলেন তামিম। একই ভেন্যুতে দ্বিতীয়টিতে ৬৩ বলে ৫০। আর সিলেটে শেষ ম্যাচটিতে ১০৪ বলে অপরাজিত ৮১ রান। অথচ আগে এর উল্টোটা হতো। মারকুটে ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষের বোলিং লাইনআপ ভেঙে চুরমার করে দিতে যার জুড়ি ছিল না।
যা হোক, প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেছিলেন, ‘তামিম ওর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ পাল্টে ফেলেছে। এখন থেকে তার কাজ হবে ইনিংস বিল্ড করা। আর সেকেন্ড ওপেনার তামিমের আগের রোল প্লে করবে।’ মানে পাওয়ার প্লেতে মারমার কাটকাট ব্যাটিংয়ে দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেবেন।
খুবই ভালো। তামিম ইকবালের মতো সিনিয়র প্লেয়ার ব্যাটিংয়ে গুরুদায়িত্ব সামলাবেন এটাই তো স্বাভাবিক। তাছাড়া এখন নয় তো আর কখন? আখেরে দেশ সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। নিশ্চয়ই এই ভূমিকাতেও তিনি সফল হবেন।
সেই ভরসায় পরের সিরিজে চোখ রাখি। কিন্তু একি! তামিম তো পুরোই বিবর্ণ। ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরের তিন ওয়ানডেতে তার সংগ্রহ; ৫, ৫, ০! পুরোনোকে আকড়ে না ধরে ভুলে যেতে হয়। সেই মন্ত্রে দিক্ষীত, তাই মে মাসে আয়াল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে আশায় বুক বাধি। এবার অবশ্য তিনি ততটা বিবর্ণ নন। আবার প্রত্যাশিতও নন। চার ম্যাচ থেকে তার সংগ্রহ ৮০, ২১, ৫৭ ও ১৮।
ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে উইন্ডিজদের বিপক্ষে ১১৬ বল খেলে করেছেন ৮০ রান। স্ট্রাইক রেট ৬৮.৯৬। দ্বিতীয় ম্যাচে আইরিশ বিপক্ষে স্ট্রাইক রেট ৯১.৩০ হলেও দলকে শুরুটা ভালো করে দিয়ে যেতে পারেননি। ২৩ বলে সংগ্রহ করেছেন ২১ রান। তৃতীয় ম্যাচে ক্যারিবীয়ানেদের বিপক্ষে ৫৩ বলে ৫৭ রান, স্ট্রাইক রেট ১০৭.৫৪। শেষটিতে তার সংগ্রহ ১৩ বল থেকে ১৮ রান।
যেহেতু দল ত্রিদেশীয় শিরোপা জিতেছে সেহেতু তার ব্যাটিং ততটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। তার ওপরে প্রথমবারের মতো কোনো বহুজাতিক শিরোপা জয়ের বাড়তি উচ্ছ্বাসে তামিমের পারফরম্যান্স ঢাকা পড়ে গেছে। বলবেন দুই ম্যাচে তো ফিফটি মেরেছে, এরপরেও সমস্যা কি? সমস্যা অবশ্যই আছে। সৌম্য, লিটন ওই চার ম্যাচে শুরুটা উড়ন্ত না করলেই বোঝা যেত জয় কোন বনে লুকিয়েছে।
শিরোপা দূরে থাক, চার ম্যাচের একটিতেও হয়তো জয়ের মুখ দেখা হতো না। তামিমর সঙ্গে জুটিতে প্রথম ম্যাচে সৌম্য ৬৮ বলে ৭৩, দ্বিতীয়টিতে ৬৭ বলে ৫৪, তৃতীয়টিতে লিটন দাস ৬৭ বলে ৭৬ আর চতুর্থ ও শেষটিতে সৌম্য করেন ৪১ বলে ৬৬ রান। ওপেনারদের এই পারফরম্যান্সই বিশ্বকাপে হন্যে হয়ে খুঁজেছে টিম বাংলাদেশ।
তামিম পারফর্ম করেননি। সেই চাপ সামলে শুরুটা দুর্দান্ত করেও নিজেকে টেনে নিতে পারেননি সৌম্য সরকার। দিন শেষে চাপ গিয়ে পড়েছে টপ ও মিডল অর্ডারের ওপর। যেদিন তারা সেই চাপ সামলে খেলেছেন সেদিনই জয়ের হাজার ওয়াটের আলো মুখে নিয়ে মাঠে ছেড়েছে বাংলাদেশ। বাকি ম্যাচগুলোতো কী হয়েছে, সবাই দেখেছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তৃতীয় সেরা রান সংগ্রহ করা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। সুপার ম্যান সাকিব আল হাসান আর মাঝপথে রান পাওয়া মুশফিকুর রহিমের পরেই তামিম। ৮ ম্যাচে করেছেন ২৩৫ রান, গড় ২৯.৩৭। তার ভক্তকুল এই পরিসংখ্যান নিয়ে খুশিতে আটখানা হতেই পারেন। কেননা কোনো বিশ্বকাপেই তো এতরান করতে পারেননি তামিম।
কিন্তু তার দৈন্য স্ট্রাইক রেট সেই খুশি, আহ্লাদ চকিতেই উড়িয়ে দেবে। ৭১.৬৪ তার স্ট্রাইক রেট। স্ট্রাইক রেটের কথাও না হয় তুলে রাখা যাক। ব্যাটিংয়ে যে ভূমিকা তাকে দেওয়া হয়েছে সেটা কতটা করতে পেরেছেন? তাছাড়া ম্যাচের পরিস্থিতি অনুসারে খেলাটা আলাদা দাবী রাখে। একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ ছাড়া বাকি ম্যাচে পরিস্থিতির বিচারেও দলের চাহিদা কতটা মিটিয়েছেন তামিম?
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি