যে পাঁচ বিষয়ে চোখ থাকবে ফাইনালে
১৪ জুলাই ২০১৯ ১২:২২
ঘন্টা কয়েক পরেই মাঠে গড়াবে ক্রিকেটের সব থেকে বড় রণের। ফাইনালে মুখোমুখি ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড। লন্ডনের লর্ডসে বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটায় শুরু হবে ম্যাচটি। ফাইনালের আগে দুই দলের বিভিন্ন বিষয়ে চোখ বুলাবে ক্রিকেট বিশ্ব। তার মধ্যে পাঁচটি বিষয় আছে যে সম্পর্কে ক্রিকেট বিশ্বের চোখ না বুলালেই নয়।
দারুণ দুই অধিনায়ক: ইয়ন মরগান এবারের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ইংলিশদের অধিনায়কত্ব করছে। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। আর সেবার ইংলিশ মিডিয়া সহ ক্রিকেট বিশ্ব ইয়ন মরগানকে বিশ্বকাপের সব থেকে বাজে অধিনায়কের উপাধি দিয়েছিল। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক।
আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলের ক্রিকেটার ছিলেন এক সময়। সুযোগ পেয়েছিলেন ইংলিশদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার। হাত ছাড়া করেননি সেই সুযোগ। এরপর পেয়েছেন ইংলিশদের হয়ে অধিনায়কত্ব করারও। এরপর বিশ্বকাপের ব্যর্থতা, নানান আলোচনা-সমালচোনার শিকার হয়েছেন তিনি। তবে পিছ পা হননি মরগান। আর তার অধিনায়কত্বেই ২৭ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংলিশরা।
অন্যদিকে আরও এক দারুণ অধিনায়ক কিউইদের। দলকে সামনের থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে। ব্যাট হাতে এবারের বিশ্বকাপের সেরাদের কাতারে। আর অধিনায়ক হিসেবেও সেরাদের তালিকায় একদম ওপরের দিকেই থাকবেন। গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয় কিউইদের। সেবার খেলেছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অধিনায়কত্বে।
দুই দলের দুই অধিনায়কই দারুণ ফর্মে আছেন ব্যাট হাতে। আর তাদের দুইজনের চিন্তাধারাটাও প্রায়ই একই ধরনের। ঠান্ডা মাথার এবং আক্রমণাত্মক মনোভাব। ফাইনালে দুই অধিনায়কের লড়াইটা তাই সমানে সমান।
ট্রেন্ট বোল্ট এবং জোফরা আর্চার: এবারের বিশ্বকাপটি ব্যাটসম্যানদের বিশ্বকাপ হবে। মহারণের শুরু আগে বেশ শোনা গিয়েছিল এই কথাটিই। তবে তা পুরোপুরি মিথ্যা হয়নি। তবে এবারের বিশ্বকাপে বোলাররাও একদমই পিছিয়ে নেই। দারুণ বোলিং দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব পেসারদের কাছ থেকে। মিচেল স্টার্কের বিশ্বরেকর্ড গড়া ২৭ উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমানের ৮ ম্যাচে ২০ উইকেট। মোহাম্মদ শামির হ্যাটট্রিক। তবে এদের কেউই খেলতে পারছেন না বিশ্বকাপের ফাইনাল।
তবে ফাইনালে খেলছেন এবারের বিশ্বকাপের সব থেকে কার্যকরী দুই পেসার ইংল্যান্ডের জোফরা আর্চার এবং কিউইদের ট্রেন্ট বোল্ট। বিশ্বকাপের ঠিক আগে পাকিস্তান সিরিজের মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্বকাপ দলে ডাক দেওয়া হয় জোফরা আর্চারকে। বেশ অবাক করেই তরুণ এই পেসারকে দলে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আর গেল বিশ্বকাপে মিচেল স্টার্কের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ট্রেন্ট বোল্ট কিউইদের সেরা বোলার হিসেবেই বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছিলেন।
বিশ্বকাপ জুড়ে এই দুই পেসাররই রেখেছেন দারুণ অবদান। অজিদের বিপক্ষে সেমি ফাইনালে দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন জোফরা আর্চার। আর ভারতের টপ অর্ডার গুড়িয়ে দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে বোল্ট রেখেছিলেন অনস্বীকার্য অবদান।
লর্ডসের ফাইনালের উইকেটটি সবুজ ঘাসে ঢাকা। আর সবুজ গালিচা দেখে নিশ্চই মুচকি হাসছেন আর্চার আর বোল্ট। তবে অপেক্ষা করতে হবে শেষ হাসি কে হাসে তার জন্য।
ক্রিকেটের মক্কা: বিশ্বকাপের ১২তম আসরের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে লর্ডসে। ক্রিকেটের মক্কা নামে খ্যাত এই ময়দানে এক সাথে প্রায় ২৮ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারবেন একসাথে। ক্রিকেটের আঁতুড় ঘরে এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এই চার ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই যে দল প্রথমে ব্যাট করেছে তারাই জিতেছে।
এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে লর্ডসের চারটি ম্যাচের ফলাফল যথাক্রমে ৪৯,৬৪,৮৬ এবং ৯৪ রানে জয়ী প্রথমে ব্যাট করা দল। চমকপ্রদ তথ্য হলো এবারের বিশ্বকাপে ফাইনালে খেল দুই দলই লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিল এবং দুই ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া জয়ী হয়েছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে ইংলিশরা ওডিআইতে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। তবে ক্রিকেটের মক্কা অর্থাৎ লর্ডসে এখন পর্যন্ত নিজেদের একচেটিয়া জয় প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। লর্ডসে খেলা শেষ ছয়টি ওডিআই ম্যাচের তিনটিতে হেরেছে ইংল্যান্ড এবং তিনটিতে জিতেছে তারা। আর ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের এই ময়দানের শেষ দেখায় জিতেছিল কিউইরাই।
দুই দলের ওপেনারদের দুই মেরু: ইংলিশদের দুই বিধ্বংসী উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আছেন দারুণ ফর্মে। দুইজনই পারফর্ম করেছেন বিশ্বকাপ জুড়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে জেসন রয় খেলেছিলেন ১৫৩ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস। আর সেই সাথে আছেন জনি বেয়ারস্টোও। এই দুইজন যখনই ৫০ এর অধিক রানের ইনিংস খেলেন তখনই বেড়ে যায় ইংলিশদের জয়ের সম্ভবনাও। আর ফাইনালে নিশ্চই ইংলিশ অধিনায়ক চাইবেন জ্বলে উঠুক তার এই বিধ্বংসী দুই ওপেনার। আর প্রথম বিশ্বকাপে জয়ে ভূমিকা রাখুক সামনে থেকে।
অন্যদিকে, ইংলিশ ওপেনারদের ঠিক বিপরীত ভাবে সময় কাটছে কিউদের। যেখানে বিধ্বংসী ব্যাটিং করে দলের জয়ে ভূমিকা রাখছে ইংলিশরা, ঠিক সেখানেই বার বার ব্যর্থ কিউই ওপেনাররা। মার্টিন গাপটিল কিংবা কলিন মানরো আশানুরূপ পারফর্ম কেউই করতে পারেননি।
আর যে ওপেনারদের নিয়ে আশা দেখছেন ইংলিশ অধিনায়ক, ঠিক সেখানেই দুর্ভাবনায় কপালের ঘাম মুছছেন কেন উইলিয়ামসন। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই যে দেখা মেলেনি কিউই ওপেনারদের ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স।
শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের শিরোপা কার হাতে উঠবে তা নির্ধারণ হবে দুই দলের সব ক্রিকেটারদেরই পারফরম্যান্সেই।
সাম্প্রতিক সময়ে মুখোমুখি দুই দল: সাম্প্রতিক সময়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম্যান্স করছে ইংলিশরা। বেশ কিছু সময় ধরে র্যাংকিংয়ের শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে মরগানের দল। তবে খুব পিছিয়ে নেই কিউইরাও। সেরা তিনে অবস্থান করছে তারা।
দুই দলের সর্বশেষ দেখা গ্রুপ পর্বের উভয়ের শেষ ম্যাচে। ইংলিশদের জন্য বাঁচা মরার লড়াই ছিল ম্যাচটি, আর ম্যাচটিতে কিউইদের কোনো প্রকার পাত্তা না দিয়েই ম্যাচ জিতে নেয় ইংলিশরা। সে ম্যাচে কিউইদের ১১৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল ইংলিশরা।
দুই দলের শেষ দুইটি ওডিআই সিরিজও ইংলিশরা জিতেছে ৩-২ ব্যবধানে। তবে ফাইনালে জিততে হলে পরিংখ্যান কোনো কাজে আসবে না। নির্ধারিত সময়েই ভাল খেলতে হবে। আর তবেই নির্ধারিত হবে বিশ্বকাপের শিরোপা।
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
আরও পড়ুন: লর্ডসে এ যেন উইকেট নয়, সবুজ গালিচা
সারাবাংলা/এসএস
ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ ফাইনাল বিশ্বকাপ স্পেশাল লর্ডস