আইসিসির অস্পষ্ট আইনেই বিশ্বকাপ হাতছাড়া কিউইদের
১৫ জুলাই ২০১৯ ১১:৪৪
লর্ডসে রোববার (১৪ জুলাই) স্বাগতিক ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল দিয়েই শেষ হলো বিশ্বকাপের ১২তম আসরের। ফাইনালে দুই দলের ১০০ ওভার খেলার পর ফলাফল না আসায় ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সুপার ওভার থেকে ফলাফল না আসায় ব্যাটিং ইনিংসে বেশি বাউন্ডারি হাঁকানোয় চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা ইংলিশদের।
তবে এ ম্যাচ ঘিরে উঠছে নতুন বিতর্ক। পুরো ম্যাচ জুড়ে দুই আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা এবং মারাইস ইরাসমাস বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আর শেষ পর্যন্ত কিউইরা যদি বলে তাদের সাথে অনিয়ম করা হয়েছে সেটাও অসত্য নয়।
দ্বিতীয় ইনিংসের ৪৯.৪ ওভারের বল করলেন ট্রেন্ট বোল্ট, ব্যাট হাতে বেন স্টোকস সজোরে বল ঠেলে দিলেন ডিপ মিডউইকেটে। এই বল থেকে ২ রান চেয়েছিলেন বেন স্টোকস। মিড উইকেট থেকে মার্টিন গাপটিল বেশ ভালো থ্রো করেছিলেন। স্টাম্পে সরাসরি লাগলে রানআউট হওয়ার সম্ভবনা ছিল স্টোকসের। রান আউট থেকে বাঁচতে ডাইভ দিয়েছিলেন স্টোকস। আর ডাইভ দেওয়ার পর গাপটিলের থ্রো করা বলটি তার ব্যাটে লেগে থার্ড ম্যান দিয়ে পার হয় সীমানা! পুরো ঘটনা এবং স্টোকসের ক্ষমা প্রার্থনাসুলভ চাহনি দেখে তখনই বোঝা গেছে, এ বাউন্ডারি হওয়ায় তার ইচ্ছাকৃত কোনো হাত ছিল না। স্টোকসের অনিচ্ছাকৃতভাবেই ঘটে গেছে এই ঘটনাটি।
স্টোকসের ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত ভুল যাই হোক, মাঠে দায়িত্বরত দুই আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা এবং মারাইস ইরাসমাস আলোচনা করে ইংলিশদের স্কোরবোর্ডে যোগ করলেন ৬ রান (দৌড়ে ২ রান ও ওভারথ্রোতে ৪ রান)। আর এতেই ৩ বলে ৯ রান থেকে সমীকরণ নেমে আসে ২ বলে ৩ রানে। এরপর? এরপর বাকিটা ইতিহাস।
এরপর বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথমবারের মতো ফাইনালে সুপার ওভার। তবে শেষ পর্যন্ত তাতেও ফলাফল নির্ধারিত হয়নি। শিরোপার নিষ্পত্তি হয়েছে বাউন্ডারিসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে। যেখানে এগিয়ে থেকে শিরোপা জিতেছে ইংল্যান্ড।
তবে বিতর্ক উঠেছে আম্পায়ারের দেওয়া ইংলিশদের ব্যাটিং ইনিংসের ৪৯.৪ ওভারের ৬ রান নিয়ে। সংবাদমাধ্যম থেকে বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, ওটা ৬ রান না, ৫ রান হবে? আর এ প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে ক্রিকেটেরই ‘ফিল্ডারদের ওভারথ্রো কিংবা ইচ্ছাকৃত কাজ’ নিয়ে আইনের ১৯.৮ অনুচ্ছেদ। এই আইনে উল্লেখ আছে, ‘ফিল্ডারের ওভারথ্রো কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে করা কোনো কিছু থেকে বাউন্ডারি হলে, বাউন্ডারি যোগ হবে এবং ব্যাটসম্যানরা একসঙ্গে যত রান নিয়েছেন সেটাও, যদি থ্রোয়ের সময় তাঁরা ইতিমধ্যেই একে অপরকে পার হয়ে যান।’
আর ১৯.৮ অনুচ্ছেদের শেষ লাইনটাই নিয়েই যতো প্যাঁচ লেগেছে। ওই ঘটনার ভিডিও রিপ্লে থেকে পরিষ্কার দেখা যায়, গাপটিল থ্রো করার সময় ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস এবং আদিল রশিদ দ্বিতীয় রান নেওয়ার জন্য একে অপরকে পার করেননি। অর্থাৎ গাপটিল যখন থ্রোয়ের জন্য বল তুলছিলেন, স্টোকস তখন ননস্ট্রাইক প্রান্তে আর আদিল রশিদ স্ট্রাইক প্রান্তে ছিলেন। অর্থাৎ দৌড়ে ২ রান নয়, ১ রান যোগ হবে আর সঙ্গে বাউন্ডারি মোট ৫ রান।
আইনটির অস্পষ্টতার কারণেই এ প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ফিল্ডারদের থ্রো নিয়ে যেমন পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি, তেমনি গোটা প্রক্রিয়ায় ব্যাটসম্যানদের ভূমিকা নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। গাপটিলের থ্রো কিন্তু উইকেটরক্ষক বরাবরই ছিল। ব্যাটসম্যানের ব্যাটে লাগার কারণে তা ওভারথ্রো হয়েছে।
আর ম্যাচ শেষে তাই এই ঘটনায় বেশ হতাশ কিউই দলপতি কেন উইলিয়ামসনও। এ ব্যাপারে উইলিয়ামসন বলেন, ‘এটা বেশ লজ্জার যে বলটি স্টোকসের ব্যাটে লেগেছে। আর ব্যাটে লেগেই বলটি বাউন্ডারি হয়েছে। আমি আশা করবো ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’
মাঠে দায়িত্ব থাকা আম্পায়াররা সঠিক সিদ্ধান্ত দিলে শেষ দুই বলে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন হতো ৪ রান। আর বিশ্বকাপের শিরোপায় নামটা অন্য কারো লেখা হলেও হতে পারতো।
আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে সব থেকে ঘৃণিত পিতা স্টোকসের বাবা
সারাবাংলা/এসএস
আইসিসির নিয়ম ওভার থ্রো ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড ফাইনাল বিতর্ক বেন স্টোকস